একটি সেতুর জন্য ছেলে-মেয়েদের বিয়ে নিয়ে শঙ্কা

জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২২-০১-১০ ১১:৩১:৫২


নোয়াখালী সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের বাসিন্দা আমিনা বেগম (৫৫) বলেন, নোয়াখালী খালের ওপর কোনো সেতু নেই। সাঁকোর কারণে মেয়েদের বিয়ে দিতে পারি না। ভালো ভালো সম্বন্ধ এলেও বিয়ে হয় না। ছেলেদেরও বিয়ে হয় না। মানুষ আমাদের সঙ্গে আত্মীয়তা করতে চায় না। যাতায়াতের কারণে আমরা অসুবিধার মধ্যে আছি।

এই কষ্ট শুধু আমিনা বেগমের নয়। নোয়াখালী সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের তিন হাজার মানুষকে প্রতিনিয়ত এই সাঁকোর জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে দুর্ভোগ নিয়েই তারা এই সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে।

জানা গেছে, স্বাধীনতার আগে বা পরে কোনো একসময় নোয়াখালী খালের ওপর নির্মিত হয় এই সাঁকো। সাঁকো দিয়ে কাদির হানিফ ইউনিয়নের মুসলিম কলোনির চার শতাধিক পরিবারের ৩ হাজারের বেশি মানুষ যাতায়াত করে।

এদিকে ভোটের সময় এলে জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দেন। বারবার প্রতিশ্রুতি পেলেও আজও আলোর মুখ দেখেনি এই সেতু। তবুও আশায় বুক বেঁধে আছে এলাকাবাসী। দ্রুত সেতু নির্মাণ হলে ভুক্তভোগীদের দুঃখ ঘুচবে এমন প্রত্যাশা করছেন জনপ্রতিনিধিরা। আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, অল্প সময়ের মধ্যেই এলাকার মানুষের দুর্দশার অবসান হবে।

আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাত বলে, বৃষ্টির দিনে এই সাঁকো দিয়ে আমরা স্কুলে যেতে পারি না। বর্ষাকালে অনেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়। এভাবে আমাদের চলাচল কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

হরিনারায়ণপুর স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম বলে, শিশুরা খুব ভোগান্তিতে পড়ে। ঝড়-বৃষ্টি হলে আমরা স্কুলে যেতে পারি না। অনেকে পড়ে যায়। এখানে একটা সেতু হলে আমাদের সমস্যা সমাধান হতো।

নোয়াখালী কলেজের শিক্ষার্থী বদরুল হায়দার স্বাধীন বলেন, বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। আমাদের এখানে আসতে জেলা শহর থেকে মাত্র ১০ টাকা ভাড়া লাগে। অথচ আমরা অবহেলিত হয়ে আছি। আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান বলেন, আমি ৫০ বছর ধরে এই গ্রামে বাস করছি। এখানে ৩ হাজার লোকের বসবাস। বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, মসজিদে যেতে পারে না। এই সাঁকো দিয়ে অনেক মানুষ পড়ে গেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী কয়েক বার আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু ব্রিজ হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি এখানে একটা ব্রিজ করে দেওয়ার জন্য।

আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম বলেন, মসজিদে যেতে হলে এই সাঁকোটি ব্যবহার করতে হয়। আমিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। এখানে সাঁকো হলে এই এলাকার মানুষের খুব উপকার হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা লুৎফুল হায়দার লেনিন বলেন, মানুষ বাঁশের সাঁকো দিয়ে ৫০ বছর ধরে যাতায়াত করছে। আমি সর্বপ্রথম ওমরাহ হজের জন্য জমানো দেড় লাখ টাকা দিয়ে সেখানে কাঠের সাঁকো করে দিয়েছি। সম্প্রতি সাঁকোটি ব্যবহারের অযোগ্য হওয়ায় সকলের সহযোগিতা নিয়ে আরও ১ লাখ টাকা খরচ করে মেরামত করে দিয়েছি।

সদর উপজেলার চেয়ারম্যান এএকেএম সামছুদ্দিন জেহান বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় দেখেছি মানুষ কষ্ট করে সেই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করছে। ১৫-২০ দিনের মধ্যে আমরা সেখানে ৮ ফুট প্রশস্ত কাঠের ব্রিজ নির্মাণ করে দেব। পরবর্তীতে স্থায়ী সেতু করে দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সানবিডি/ এন/আই