পুলিশের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ: জেনে নিন তদন্তে যা প্রমাণিত হলো

প্রকাশ: ২০১৬-০২-১০ ২১:৫৫:২৯


186832_1_116075রাজধানীর আদাবর থানা পুলিশের এক উপপরিদর্শকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে হেনস্তার যে অভিযোগ উঠেছিলো; সেই অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে বিচার বিভাগীয় তদন্তে। মঙ্গলবার আদালত এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে। এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি এই অভিযোগের ঘটনায় করা মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

গত ৩১ জানুয়ারি ওই ছাত্রীকে হেনস্তা করার অভিযোগ ওঠার পর ওই এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আদালত সূত্র জানায়, আজ মঙ্গলবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফারহানা আক্তারের অভিযোগের বিষয়ে আদালতে শুনানি হয়। এরপর শুনানি শেষে অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামীকাল বুধবার ট্রাইবুনাল ৪- এ মামলাটি দায়ের করা হতে পারে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। লাঞ্ছনার শিকার ‘আশা বিশ্ববিদ্যালয়’র ছাত্রী ফারহানা আক্তার বলেন, আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। এই জন্য যে, কালকে (সোমবার) পুলিশের তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমি আর আমার স্বামী মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আর আমার অভিযোগের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।

এটা বর্তমান সময়ে স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের তদন্ত পুলিশের পক্ষেই হবে। অথচ আদালত আমার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। আল্লাহর মর্জি যে আমার পক্ষে প্রত্যক্ষদর্শীরাও সাক্ষী দিয়েছেন। আমি এটা শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তিনি আরো বলেন, ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে আমি যে বক্তব্য দিয়েছিলাম তার সত্যতা মেলেছে।

তিনি আরো বলেন, এসআই রতন বিভিন্নভাবে এখনো আমাকে হয়রানি করছে। তার পক্ষ থেকে ফোন করা হচ্ছে। আমার স্বামীকে মামলা না করার জন্য ফোন করছেন। মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকার সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিয়ে এখন ফোন করা হচ্ছে। অপরদিকে গতকাল সোমবার পুলিশের দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে রতন কুমার হালদারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তের বক্তব্য এবং প্রযুক্তিগত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কমিটি এই প্রতিবেদন দিয়েছে বলে জানা গেছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে ভুক্তভোগী ফারহানা আক্তার বলেছিলেন, ‘পুলিশতো পুলিশের পক্ষেই বলবে- এটাই স্বাভাবিক। রতন কুমার যদি কোনো দোষই না করবেন তাহলে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে আপোষের চেষ্টা করছেন কেন? বিচার বিভাগীয় তদন্ত হলেই এর সত্যতা বেরিয়ে আসবে। তিনি আরো বলেছিলেন, তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই রতনের পক্ষে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও ওই দোকানের লোকজনকে সাক্ষী না দেওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছিলেন। ফলে পুলিশের হুমকির কারণে ঘটনাস্থলের লোকজন কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। এমনকি তাদেরকে বলেছেন, তোমরা জানাবে ঘটনার সময় বাসায় খেতে গিয়েছিলাম। পরে পুলিশের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে যান।

এসময় পুলিশি হয়রানির ভয়ে ঘটনাস্থলে থাকা লোকজন অস্বীকার করেন। তিনি আবারো অভিযোগ করে বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ এলাকায় রিকশা থেকে জোর করে তাকে নামিয়ে একটি দোকানের ভেতরে নিয়ে যান এসআই রতন কুমার হালদার। সেখানে তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বানানোর চেষ্টা চালিয়ে শারীরিকভাবে হেনেস্তা করেন তিনি। এর আগে রতন কুমার তাকে অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা না নেয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ঢাকার সিএমএম আদালতে অভিযোগ করেন তিনি।

বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হলে এসআই রতন কুমারকে প্রথমে প্রত্যাহার ও পরে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এরপর ঘটনা তদন্তে পুলিশের পক্ষ থেকে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত সোমবার ওই কমিটি ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও জোনের উপ কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

তেজগাঁও জোনের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের জানান, ‘অভিযোগকারী ওই ছাত্রী এসআই রতনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তা অসমর্থিত। সব মিলিয়ে অভিযোগকারী ও অভিযুক্তের বক্তব্যে গড়মিল পাওয়া গেছে। প্রযুক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করেও অভিযোগের সত্যতা পায়নি কমিটি।’ তিনি আরো বলেছেন, অভিযোগকারীর স্বামী সজিব আহমেদ রানা ইয়াবা ব্যবসায়ী। অভিযোগকারীর বিরুদ্ধেও ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ পেয়েছেন তারা। আর সজিব আহমেদের বিরুদ্ধে একটি বিস্ফোরক মামলা রয়েছে। সেই মামলায় পুলিশ চার্জশিটও দিয়েছে। সেজন্য হয়তো সংক্ষুব্ধ হয়ে এমন অভিযোগ এনেছেন তিনি। তবে তিনি এও বলেন, এস আই রতন একজন আসামির স্ত্রীকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে কথা বলে পেশাদারিত্বের পরিচয় দেননি। এরই মধ্যে তিনি পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য তদন্ত প্রতিবেদন ডিএমপি কমিশনারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে জানান।