স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা বাড়ানোর তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২২-০১-১৩ ১৬:২৮:৫৪
দেশে স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা ‘কম হচ্ছে’ জানিয়ে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে গবেষণা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে নবনির্মিত জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ তাগিদ দেন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্স আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা একটা জায়গায় একটু পিছিয়ে আছি। সেটা হচ্ছে স্বাস্থ্য বিষয়ে। এ বিষয়ে গবেষণাটা আসলে আমাদের দেশে খুব কম হচ্ছে। খুব কম চিকিৎসক আছেন যারা রোগীর সেবা দিতে যতটা আগ্রহী, ততটা আগ্রহী গবেষণার দিকে। হাতে গোনা কয়েকজনই নিয়মিত গবেষণা করেন। তবে এক্ষেত্রে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের স্বাস্থ্য বিষয়ে গবেষণাটা একান্তভাবে দরকার। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিজ্ঞান ও উন্নত প্রযুক্তির যুগে যেসব দেশ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এগিয়ে যাচ্ছে তারাই অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত উন্নতি করতে পারছে। কাজেই আমাদের উন্নতি করতে হলে অবশ্যই গবেষণা প্রয়োজন। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে—এটা স্বাস্থ্য বা খাদ্য উৎপাদন বা আমরা যে অবকাঠামো উন্নয়ন করি তার ক্ষেত্রে অর্থাৎ সব ক্ষেত্রেই গবেষণা প্রয়োজন। আসলে গবেষণা ছাড়া উৎকর্ষতা লাভ করা যায় না। আর সাসটেইনবল ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জন করতে গেলে গবেষণাটা একান্তভাবে দরকার। কাজেই আমি মনে করি, আমাদের গবেষণার দিকে একটু নজর দিতে হবে। ’
প্রায়োগিক গবেষণার ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গবেষণার সঙ্গে সঙ্গে গবেষণালব্ধ জ্ঞান আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কিভাবে ব্যবহার করা যায় সেটার ওপরও আমরা জোর দিচ্ছি। মৌলিক গবেষণার পাশপাশি প্রায়োগিক গবেষণার ওপরও জোর দিতে হবে। সেই বিষয়ে যারা গবেষক তারা নিশ্চয়ই কাজ করবেন। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অনেক অমূল্য দেশীয় সম্পদ আছে, যা আমরা এখনও ব্যবহার করতে পারিনি। সেগুলোও আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। তার ওপর গবেষণা করে সেগুলো যেন দেশের মানুষের কাজে লাগে—সেই বিষয়ে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। ’
প্রযুক্তি গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেষ হাসিনা বলেন, ‘সারাবিশ্বে বিজ্ঞানের প্রভাব যখন বেড়েছে, প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রভাব বেড়েছে। এই প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদের সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। ’
বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন সেক্টরে গবেষণা বাড়াতে সরকারের নেওয়া নানা প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আমি এসে দেখি গবেষণার জন্য একটি টাকাও বাজেটে বরাদ্দ করা হতো না। তখনই প্রথম আমি একটা থোক বরাদ্দ দিই। এরপর থেকে প্রতি বছর বাজেটে গবেষণার জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখি শুধু গবেষণার জন্য। ৯৬ সাল থেকে আমি এটা শুরু করি। ’
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয় দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গবেষণাকে আমরা সবসময় গুরুত্ব দিই। যেহেতু আমরা পরপর তিনবার সরকার গঠন করতে পেরেছি, দীর্ঘসময় সরকারে থাকতে পেরেছি (প্রায় ১৩ বছর), আমাদের একটু সুযোগ হয়েছে কাজ করার। ই-গর্ভনেন্স প্রতিষ্ঠা এবং আইসিটি শিল্পের বিকাশে এই ১৩ বছর ধরে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করছি। ’
প্রধানমন্ত্রী তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে কোনও বেতন দেওয়া হয় না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ আমাদের সজীব ওয়াজেদ জয়, সে আমাদের সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছে। সে কিন্তু অবৈতনিক, এটাও আমি জানিয়ে রাখি। কারণ অনেক সময় অনেকে অনেক উল্টোপাল্টা কথা বলে। নিজের দেশের কল্যাণে, দেশের মানুষের শিক্ষায় সে কাজ করে যাচ্ছে দেশের মানুষের জন্য। ’
রফতানি পণ্যের মান যাচাইয়ে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের টেস্টিং ল্যাবরেটরিগুলোর পরীক্ষণের সামর্থ্য বাড়িয়েছি এবং উন্নতমান নিশ্চিত করেছি। যে সব পণ্য আমরা রফতানি করি, প্রত্যেকটির যেন যথাযথ টেস্টিং এবং সার্টিফিকেট হয়, পণ্যের মানটা যেন থাকে—সে ব্যবস্থা ইতোমধ্যে আমরা নিচ্ছি। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণ এবং এ বিষয়ে গবেষণা, সুনীল অর্থনীতিকে আমাদের জাতীয় উন্নয়নে ব্যবহার করার বিষয়ে গবেষণায় গুরুত্ব দিয়েছে। তাছাড়া আমাদের বিভিন্ন পণ্য বিদেশে রফতানি হয়; আপনারা জানেন এমনও ঘটনা বিএনপি আমলে ঘটেছে যে চিংড়ি মাছের ভেতর লোহার পেরেক ঢুকিয়ে দিয়ে সেই মাছ ইউরোপে রফতানি করার ফলে আমাদের রফতানি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যাই হোক, সময়মতো আমি সরকারে এসেছিলাম। অনেক দেন-দরবার করে সেটা ঠিক করি। ’
এএ