এনজিওতে ঋণ ও সঞ্চয়ে বেশি ঝুঁকছে মানুষ

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২২-০১-২০ ১২:০৯:০১


জীবনে চলার পথে বিপদ-আপদ, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সঞ্চয় করেন। আবার বিপদে পড়ে অনেককেই ঋণ করতে হয়। এই ঋণ ও সঞ্চয়ের বড় জায়গা ব্যাংক হলেও সহজ হওয়ায় এনজিওতে বেশি ঝুঁকছে মানুষ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ‘নগর আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিরূপণ’ শীর্ষক এক জরিপ করেছে। যেখানে উঠে আসে, ঋণ করার ক্ষেত্রে নগরবাসীর পছন্দের শীর্ষে রয়েছে বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও। এরপরই অবস্থান বন্ধুদের। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের অর্ধেক বাসিন্দা এনজিওগুলোতে সঞ্চয় করেন। টাকা সঞ্চয় ও ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের চেয়ে বেশি আস্থা এনজিওতে।

বিবিএসের জরিপের তথ্য মতে, নগরের ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে ৬৪ দশমিক ৩০ শতাংশ ঋণ করেন এনজিও থেকে, যেখানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় মাত্র ০ দশমিক ৭৯ শতাংশ মানুষ।

অন্যদিকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পছন্দ বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী। এদের কাছ থেকে ১২ দশমিক ৬৯ শতাংশ মানুষ ঋণ নেন। একইভাবে সঞ্চয়ের জন্য ৪০ দশমিক ২২ শতাংশ মানুষ এনজিওতে টাকা রাখেন। অন্যদিকে ব্যাংকে টাকা রাখেন মাত্র ৩৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৭ দশমিক শূন্য ৮, কর্মদাতা থেকে ১ দশমিক ২৫, মহাজনের কাছ থেকে ৩ দশমিক শূন্য ৪ এবং সমবায় সমিতি থেকে ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ নগরবাসী ঋণ নেন।

বিবিএস জানায়, বাংলাদেশে শহরে বসবাসকারী ঝুঁকির মুখে থাকা জনগোষ্ঠীকে সঞ্চয় ও ঋণে আগ্রহী করে তোলার ক্ষেত্রে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও ব্যাংকের মতো গতানুগতিক উৎসকে ছাপিয়ে প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভূমিকা রাখছে এনজিওগুলো।

সংস্থাটি আরও বলছে, অর্থনৈতিক দুরবস্থার সময় সঞ্চয়ের টাকা দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে যেকোনো খারাপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিয়ামক হিসেবে সহায়তা করে। পাশাপাশি ভূমিকা পালন করে তাদের ভোগের প্রবণতাকে স্থিতিশীল রাখতে।

এদিকে গড়ে ৩৩ শতাংশ খানা (পরিবার) উল্লেখ করেছে যে, তাদের কোনো না কোনো সঞ্চয় রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় এ হার অন্য নগর এলাকা থেকে অর্ধেক। খানার গড় সঞ্চয় ৪৭ হাজার ৫৪২ টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীর সঞ্চয়কারী খানার হার মাত্র ২৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ছাড়া সঞ্চয়কারীর হার ৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গড়ে ৪২ দশমিক ২২ শতাংশ সঞ্চয়কারী এনজিও ব্যবহার করেন। অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪৭ দশমিক ২৭ শতাংশ সঞ্চয়কারী ব্যাংকে টাকা রাখেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগর ছাড়া অন্য সিটি করপোরেশন এলাকার ২৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ সঞ্চয়কারী ব্যাংক ব্যবহার করেন। গড়ে ব্যাংকে সঞ্চয় করেন মাত্র ৩৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ মানুষ।

সব নগরীর ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ মানুষ নিজ ঘরে সঞ্চয় রাখেন। সমবায় সমিতির কাছে ৩ দশমিক ৫৫, কর্মসংস্থানের প্রভিডেন্ট ফান্ডে ১ দশমিক ৯৩, বীমা কোম্পানির কাছে ৫ দশমিক ৮৫ ও পোস্ট অফিসে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ মানুষ সঞ্চয় করেন।

বিবিএস জানায়, ‘নগর আর্থসামাজিক অবস্থা নিরূপণ’ জরিপে তথ্য সংগ্রহ করেছে ৪৪ জন। তথ্য সংগ্রহকারীদের ৬০ শতাংশই ছিলেন নারী। বিবিএসের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের মোট ১০ জন সুপারভাইজিং কর্মকর্তা মাঠ তদারকিতে ছিলেন।

বিবিএস রিপোর্ট ও এনজিওতে মানুষের আস্থা প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এনজিওগুলো থেকে সহজেই ঋণ পাওয়া যায়। তেমন কোনো জামানতও প্রয়োজন হয় না। কিন্তু অন্য মাধ্যমে ঋণ পাওয়া কিছুটা কঠিন। তাই স্বল্প ঋণের জন্য সাধারণ মানুষ এনজিওকে সহজ মনে করেন, যদিও এনজিওতে সুদেও হার অনেক বেশি।

সানবিডি/এনজে