ক্ষোভ প্রশমনে প্রশাসনে ফের পদোন্নতির উদ্যোগ
প্রকাশ: ২০১৬-০২-১৩ ১৫:৩৮:২৮
প্রশাসনে ক্ষোভ প্রশমনে বঞ্চিত হিসেবে বিবেচিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ দফায় অন্তত চার শতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হতে পারে। পদোন্নতি পাচ্ছেন উপসচিব, যুগ্মসচিব এবং অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা। শিগগিরই এ সিদ্ধান্ত হতে পারে। পদোন্নতি পেলেও এসব কর্মকর্তা আর্থিক দিক থেকে লাভবান হবেন না। বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা একই থেকে যাবে।
দীর্ঘ সময় ধরে প্রশাসনে হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। এর মধ্যে পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য আট শতাধিক কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। নানা কারণে এসব কর্মকর্তা পদোন্নতি পাননি।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বলেন, ‘আপনারা পদোন্নতির এসব বিষয় জানেন কোথা থেকে। পদোন্নতির কোনো প্রক্রিয়াই এখনো শুরু হয়নি।’ কতজনকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তা বলতে পারবো না। অফিসিয়াল জিনিস প্রকাশ করব কেন?’
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে যারা পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে পদোন্নতি চেয়েছেন বলে জানা গেছে। এসময় কর্মকর্তারা তাদের বঞ্চনায় মানবিক বিষয়, যোগ্যতা ইত্যাদি মন্ত্রীকে খুলে বলেন। কর্মকর্তাদের কথা শুনে মন্ত্রী তাদের বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেন।
বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীও বঞ্চিতদের বিবেচনায় নিতে পরামর্শ দেন। নতুন এ উদ্যোগের কথা জেনে পদোন্নতির দাবি জানান ২১তম এবং ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। এ দাবি নাকচ করে দিয়েছেন নীতি নির্ধারকরা।
বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি আটকে দিতে চেয়েছিলেন অতি-সরকারপন্থী আমলারা। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে তাদের ওই চেষ্টা বানচাল হয়ে যায়। পদোন্নতির তালিকায় থাকা অধিকাংশ কর্মকর্তা এ বছরের শেষ নাগাদ অবসরে যাবেন। উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল ৮৭৩ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। এর মধ্যে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে ৩৪৩জন. উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব পদে ২৯৯জন এবং যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে ২৩১ জন ছিল।
জনপ্রশাসনে অনুমোদিত কাঠামোয় সচিবের সংখ্যা ৭৮ (রাষ্ট্রদূত ও রিজার্ভ পদসহ) জন। অতিরিক্ত সচিব ১০৭, যুগ্মসচিব ৪৩০, উপসচিব ৮৩০ জন। এছাড়া অনুমোদিত সিনিয়র সহকারী সচিবের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার এবং সহকারী সচিবও প্রায় ২ হাজারের মতো। সব মিলিয়ে ৫ হাজারের মতো কর্মকর্তা নিয়ে জনপ্রশাসনের সাংগঠনিক কাঠামো।
আদর্শ কাঠামোয় প্রশাসনের গোড়ার দিক অর্থাৎ সিনিয়র সহকারী সচিবের সংখ্যা ২ হাজারের কথা থাকলেও বর্তমানে আছে ১ হাজার ৬৩৫ জন। আর সহকারী সচিবের সংখ্যা এখন আছে ১ হাজার ২১৪ জন। অনুমোদিত পদ প্রায় ২ হাজার। কাজেই প্রশাসনে শুরুর দিকে কর্মকর্তা কমে যাওয়ায় এ দিকটা সংকুচিত হয়ে আছে।
এদিকে প্রশাসনের উচু স্তরের কর্মকর্তা বিশেষ করে উপসচিবের অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৮৩০ হলেও কাজ করছেন ১২৮০ কর্মকর্তা। কিন্ত গত এপ্রিলে এ পদে ৩৪৩ জনের পদোন্নতির ফলে বর্তমানে কর্মকর্তার সংখ্যা দাড়িয়েছে ১ হাজার ৬২৩ জন। যুগ্মসচিব হিসেবে কাজ করে আসছিলেন ৮৬৭ জন কিন্ত অনুমোদিত পদ ৪৩০টি। গত এপ্রিলে এ পদে ২৯৯ জনকে পদোন্নতি দেয়ায় বর্তমানে যুগ্মসচিবের সংখ্যা ১ হাজার ১৬৬ জন।
এছাড়া অতিরিক্ত সচিবের পদ ১০৭টি হলেও কাজ করে আসছিলেন ২২৬ জন। এ পদে ২৩১ জনকে এপ্রিলে পদন্নোতির দেয়ার ফলে এখন অতিরিক্ত সচিবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫৭ জনে। অর্থাৎ অনুমোদিত পদের চেয়ে উপসচিব দ্বিগুন, যুগ্মসচিব তিনগুন এবং অতিরিক্ত সচিব চারগুন হয়েছে। পক্ষান্তরে সিনিয়র সহকারী সচিব এবং সহকারী সচিবের সংখ্যা অনুমোদিত পদের চেয়ে অনেক কম। নতুন পদোন্নতি জনপ্রশাসনে উপরের পদে কর্মকর্তার সংখ্যা আরো বাড়বে।
অন্যদিকে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তার সংখ্যা কম থাকায় রুটিন কাজ চালানো বেশ কঠিন হয়ে উঠছে। এক কর্মকর্তাকে একাধিক দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এতে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।
সানবিডি/ঢাকা/আহো