পোশাক শিল্পের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে : বিজিএমইএ
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২২-০২-১৫ ২১:৪৯:২৬
দেশের তৈরি পোশাক শিল্পখাত উৎপাদনে দূষণ কমিয়ে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পোশাকখাত পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনন্য অগ্রগতি সাধন করেছে। বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা বাংলাদেশে। পোশাক শিল্প পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নে তার ধারাবাহিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে বিজিএমইএ ও ওয়াটারএইডের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং সাসটেইনেবল এপ্রোচ টু ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজিএমইএ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, এই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে শিল্পে পানির টেকসই সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা। আলোচনায় টেকসই সাপ্লাই চেইন ও পরিবেশগত প্রভাবগুলো মোকাবিলায় সম্ভাব্য সুযোগ, চ্যালেঞ্জ ও সমাধানগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি পোশাক কারখানাগুলো কীভাবে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করছে সেগুলো নিয়েও মতবিনিময় হয়।
অনুষ্ঠানে ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ওয়াটারএইডের পরিচালক, পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি পার্থ হেফাজ শেখ সভাপতিত্ব করেন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইয়ুথ লিডার্স অ্যাসোসিয়েশন বায়লার সভাপতি আবরার হোসেন সায়েম।
গোলটেবিল বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমাদের ইউএসজিবিসি থেকে প্রত্যয়িত ১৫৭টি গ্রিন কারখানা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৪৭টি প্লাটিনাম রেটেড ও ৯৬টি গোল্ড রেটেড। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১০০টি গ্রিন কারখানার মধ্যে ৪০টি বাংলাদেশে অবস্থিত। আরও ৫০০ কারখানা প্রত্যয়িত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
তিনি বলেন, এই গ্রিন কারখানাগুলো পরিবেশবান্ধব বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন, যা প্রায় ৪০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমায়। এসব কারখানায় প্রচলিত ভবনগুলোর তুলনায় ৪০-৫০ শতাংশ কম পানির ব্যবহার হয়।
সবুজ কারখানাগুলো শ্রমিকদের জন্য তাপমাত্রা জনিত আরামদায়ক ব্যবস্থা ও অত্যাধুনিক স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে, দিনের আলোর সদ্ব্যবহার করে, বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে এবং এএসএইচআরই মান অনুযায়ী কারখানা অভ্যন্তরে বায়ুর গুণগত মান বজায় রাখার ব্যবস্থা রাখে। যা শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সহায়ক।
ফারুক হাসান বলেন, বর্ষার পানি বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। বৃষ্টির পানিকে বিশুদ্ধ জল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বক্তব্য প্রদানকালে তিনি মত প্রকাশ করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং বর্ষাকালে বৃষ্টির জল সংগ্রহ এই ধারণাটি পোশাক শিল্পে উদ্ভাবনার দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। আমরা এখন দেখি, অনেক পোশাক কারখানাই উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বৃষ্টির পানি সংগ্রহকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিজিএমইএ একটি প্রগতিশীল সংগঠন হিসেবে পানি সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে। কারখানাগুলোকে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য সক্রিয়ভাবে উৎসাহিত করেছে।
ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, ভূগর্ভস্থ পানি ক্রমশ হ্রাস পাওয়ায় আসন্ন দিনগুলোতে যে পানি সংকটের মুখে আমরা পড়তে যাচ্ছি, তা সমাধানে সবাইকে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করতে হবে। প্রশস্ত স্থান সহকারে উন্মুক্ত ছাদ একটি টেকসই সমাধান হতে পারে। ব্যবসায় বিশেষ করে শিল্পে ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদা মেটানোর উত্তম উৎস হতে পারে। সকল খাতগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টায় বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে শিল্পে পানির চাহিদা পূরণ এবং জল-সম্পদের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করা যেতে পারে। ওয়াটারএইড পানির সুরক্ষা ও পরিবেশগত টেকসই অভীষ্ট বাস্তবায়নে উদ্যোগগুলো অব্যাহত রেখে ব্যবসা ও বেসরকারি খাতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বায়লার সভাপতি আবরার হোসেন সায়েম বলেন, অনেক আধুনিক শিল্প টেকসই উৎপাদন ও পানি সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় তাদের পদচিহ্ন রেখেছে। ভবিষ্যতের বিপর্যয় মোকাবিলায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে শিল্পগুলো বৃষ্টির পানি সংগ্রহের পদ্ধতি গ্রহণ করছে। তরুণরাই দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির সম্ভাবনাময় চালক। সুতরাং, তরুণদেরকে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে রাখার বিষয়ে ধারণা প্রদান করতে হবে। যাতে তারা আগামী দিনগুলোতে পানি সংকট মোকাবিলায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে, বাংলাদেশের পোশাক ও বস্ত্র কারখানাগুলো রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম চালু করে সবুজ নীতি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে। টেকসই পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান উদ্যোগগুলো পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করছে, বলেন আববার হোসেন সায়েম।
এএ