‘নিজেদের অনৈক্যের কারণে অধিকার বঞ্চিত হচ্ছেন সাংবাদিকরা’
প্রকাশ: ২০১৬-০২-১৪ ১৭:৩২:০৮
সাংবাদিকদের অনৈক্যের সুযোগে মালিক ও স্বার্থান্বেষী মহল লাভবান হচ্ছে। নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাংবাদিকরা। এর প্রভাব পড়েছে তাদের পরিবারের ওপরও। শুধু তা-ই নয়, সাংবাদিকদের বেতন-ভাতার ক্ষেত্রে বৈষম্য, ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন না হওয়া, যখন তখন চাকরি হারানোর ভয়-এর সব কিছুই হচ্ছে সাংবাদিকদের অনৈক্যের সুযোগে। একই কারণে বিচার হচ্ছে না সাগর-রুনীসহ সাংবাদিক হত্যারও।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) গোলটেবিল মিলনায়তনে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘দ্য ইকোনমিটুডে.নিউজ’ এর আয়োজনে ‘চাকরী ও জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় সাংবাদিকরা: অনিশ্চিয়তায় সাংবাদিকদের পরিবার’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তরা এসব কথা বলেন।
‘দ্য ইকোনমিটুডে.নিউজ’ এর প্রধান সম্পাদক, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক রহমান মুস্তাফিজ এর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ও ‘দ্য ইকোনমিটুডে.নিউজ’ এর সম্পাদক শেখ মাহমুদ এ রিয়াত।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব ওমর ফারুক, ঢাকা সাব-এডিটর কাউন্সিল (ডিএসএ) সভাপতি নাসিমা আক্তার সোমা, ডিইউজে’র সাবেক সাধারন সম্পাদক শাবান মাহমুদ, ডিইউজে’র যুগ্ম সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি জামাল উদ্দীন, সাধারন সম্পাদক রাজু আহমেদ, সিনিয়র সাংবাদিক আবুল কালাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ওপর গুরুত্বরোপ করে বলেন, অনৈক্যের কারণে সাংবাদিকদের ঐতিহ্য হুমকির মুখে। সমাজ ও পরিবারে সাংবাদিকদের অবস্থান নেতিবাচক। এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় ঐক্যবদ্ধ থাকা।
বিএফইউজে মহাসচিব ওমর ফারুক বলেন, এমন এক সময় ছিল যখন কেউ সাংবাদিকদের ক্ষতি করে পার পেত না। কিন্ত আজ সাংবাদিকদের হত্যা করলেও এর কোন বিচার পাওয়া যায় না। সাংবাদিকরা দ্বিধাবিভক্ত হওয়ায় তৃতীয় পক্ষ সুযোগ গ্রহণ করে সাংবাদিকদের রুটি-রুজি ও জীবনের উপর হুমকি দেওয়ার সাহস পাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ফারুক বলেন, সকল খুনের বিচার হয়। কিন্তু দেশে সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় না। নিজেদের মধ্যে বিভক্তির কারণে বিচার আদায় করতে পারছি না।
নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় সকল সাংবাদিকদের এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওমর ফারুক বলেন, এভাবে রাষ্ট্রের চতর্থ স্তম্ভ চলতে পারে না। স্বাধীন বাংলাদেশে সাংবাদিকদের হত্যার বিচার হয় না, তা হতে পারে না। আমরা এক হতে না পারলে সামনে আরও বিপদ আছে। যে কোন মূল্যেই হোক ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাংবাদিকদের হারোনো মর্যাদা ফিরিয়ে আনার আহবান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ‘দ্য ইকোনমিটুডে.নিউজ’ এর প্রধান সম্পাদক, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক রহমান মুস্তাফিজ বলেন, সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের ইতিহাস দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, রাজনৈতিক সন্ত্রাস, ব্যক্তি কেন্দ্রিক সন্ত্রাস, ১/১১ পরবর্তি নির্যাতনে এ পর্যন্ত ২৫ জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছে, আহত হয়েছে ৫৬১ জন, দায়িত্বপালন কালে মিথ্যা মামলায় গেস্খফতার করা শতাধিক, হুমকির শিকার হয়েছেন ৭২৯ জন সাংবাদিক, হয়রানির উদ্দেশে মামলা হয়েছে ৪৬১ জনের বিরুদ্ধে। এছাড়া দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২০ জনেরও বেশি সাংবাদিক।
মুস্তাফিজ আরো বলেন, অধিকাংশ সাংবাদিকদের পরিবারগুলো ভাল নেই। অকাল প্রয়াত সাংবাদিকদের পরিবারগুলো চরম অনিশ্চিয়তার মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ওয়েজ বোর্ডের পূর্ণ বাস্তবায়ন জরুরী। একই সাথে প্রয়োজন সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টকে একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।
চাকরি হারোনোর ভয়, নির্ধারিত সময়ে ও নিয়মিত বেতন না পাওয়ায় হতাশা থাকলে শতভাগ মনোযোগে যেমন একদিকে দায়িত্ব পালন করা যায় না, তেমনি নৈতিকতা বিসর্জন দেয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। তাই, রাষ্ট্র ও মালিক পক্ষের সচেতনতা ও আন্তরিকতার সাথে বিষয়টি বিবেচনা করা জরুরী বলে মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে।