কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসের নতুন ভবন উদ্বোধনের আগেই অনিয়ম শুরু
প্রকাশ: ২০১৬-০২-১৫ ১০:৪৩:৩০
শওকত কামাল। তিনি সরকারি চাকুরিজীবি। উচ্চমান সহকারী থেকে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিসে বর্তমানে উপ-সহকারী পরিচালক হিসেবে পদায়ন পেয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের একটি অধিদপ্তর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সরিয়ে নিজস্ব ভবনে কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের রাডার স্টেশনের নীচে নতুন পাসর্পোট ভবন তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ঠিকাদার এখনো পর্যন্ত ভবনটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে দেননি। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার আগেই ডিএডি শওকত কামাল গত কিছুদিন ধরে সেখানে কার্যক্রম শুরু করেছে।
স্বাভাবিকভাবেই ডিএডির কাছে পাসর্পোট প্রার্থীরা ভদ্র ও বিনয়ী আচরণ পাওয়ার আশা করলেও বদমেজাজি আচার-আচরণ ও দুর্নীতি কারণে পাসর্পোট অফিস এক নরকে পরিণত হয়েছে। কখন কী বলেন, তা নিজেই জানেন না। তার এমন স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব, সরকারি অফিসটা যেন তার বাপের টাকায় তৈরি।
নতুন এ ভবেেন কোন সাধারণ মানুষ ও মিডিয়াকর্মী ডুকতে চাইলে প্রথম গেইট থেকে টুকেন নিয়ে প্রবেশ করার সিষ্টেম চালু করেছে। ঘুষখোর বাহিনীর প্রধান শওকত কামালের দাপটে অসহায় হয়ে পড়েছে জেলার দূরদুরান্ত থেকে আসা পাসপোর্ট প্রার্থীরা। এই কারণে সরকারি সেবামুলক প্রতিষ্ঠানের ভাবমুর্তি দিনদিন ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি বিদেশ গমন ইচ্ছুকরা চরম বিপাকে পড়ছেন।
জানা যায়, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অভ্যন্তরে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি ২০০৯ সালের জুন মাসে হাতে লেখা পাসপোর্ট প্রদানের মাধ্যমে কার্য্ক্রম শুরু করে। ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর “মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ও ভিসা প্রকল্প’’ এর আওতাভুক্ত করা হয় ।
পরবর্তীতে সরকার জেলার সাধারন মানুষের সেবা নিশ্চিত করার জন্য কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের রাডার স্টেশনের নীচে নতুন পাসর্পোট ভবন তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ঠিকাদার এখনো পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে দেননি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের একটি সুত্র জানান, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নতুন ভবনটির কাঝ এখনো শেষ হয়নি। তবে চলতি মাসেই শেষ করার কথা রয়েছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এই শওকত কামাল গত কিছুদিন ধরে সেখানে কার্যক্রম শুরু করেছে।
একটি সুত্র জানায়, পাসপোর্ট অফিসটি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টির বাহিরে হওয়ায় এই সু-চতুর উপ-সহকারী পরিচালক শওকত অফিসটি অনিয়মের স্বগরাজ্যে পরিণত করেছে। নতুন ভবনে এই অদক্ষ, অযোগ্য ও বদমেজাজের এই কর্মকর্তা অফিসে বসাতে সরকারে সেবামুলক প্রতিষ্ঠানটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
তার এসব অনিয়ম কাজে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন পাসপোর্ট অফিসের দীর্ঘ দিন ধরে থাকা ডাটা এন্ট্রির কন্ট্রোল অপারেটর রাসেল মাহমুদ চৌধুরী, নাইটগার্ড জাবেদ ও পিয়ন আলী আক্বর। এই তিন কর্মচারী পাসপোর্ট অফিসে গড়ে তুলেছে বিশাল এক দালাল ‘নেটওয়ার্ক’। এই নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করে যেভাবেই পারছেন, সেভাবেই দু’হাতে কামাচ্ছে অবৈধ টাকা। অফিসে কর্মরত ওই চার জন ছাড়াও উচ্চমান সহকারী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাকর, সহকারী হিসাব রক্ষক, দপ্তরি, এমএলএসএস ও সুইপার এবং নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা প্রতিদিন পাসপোর্টের পেছনে ছুটেন।
বিদেশগমনেচ্ছুক লোকজন পাসপোর্ট করতে আবেদন ফরম নিয়ে জমা দিতে অফিসে গেলেই ঘটে যত সব বিড়ম্বনা। তাঁদের কাগজপত্র ঠিক থাকলেও তা ঠিক নেই বলে ওরা জানিয়ে দেন ‘আপনারা কাল আসুন, কাল গেলে বলেন পরশু আসুন।’ এভাবে দিনের পর দিন ঘুরে কোনো উপায় না দেখে বাধ্য হয়েই তাদেরকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে পাসপোর্ট করতে বাধ্য হন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে, দুই ক্ষমাতাধর পরিচয়ে শওকত কামাল ও ডাটা এট্্ির অপারেটর রাশেল মাহমুদ, যারা বিভিন্ন ভাবে বলে বেড়ান তারা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ, পরে আওয়ামী লীগ করছে। শওকত কামাল চাকরির খুঁটি মজবুত করতে বর্তমানে পরিচয় দেন সরকার দলীয় একজন বড় আমলা। সরকারি চাকুরিজীবি!। এই দুই জনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের শেষ নেই। তাদের খুঁটির জোর কোথায়? প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেন করার পরও কোন অদৃশ্য শক্তি বলে বহাল রয়েছে তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার পাসর্পোট আবেদনকারীদের দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবী ছিল এই দুর্নীতিবাজ শওকত কামাল প্রত্যাহার করা ও বেকায়দায় ফেলে ঘুষ আদায় বন্ধ করা। দুর্নীতিবাজ শওকত কামালকে প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন, পাসর্পোট অফিস ঘেরাও জেলা প্রশাসকে স্মারক লিপিসহ নানা রকম কর্মসূচী পালন করছে স্থানীয় ভোক্তভুগীরা। তার বিরুদ্ধে তদন্তে আসলে তদন্ত কর্মকত’াকে ম্যানেজ করা নিয়ে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, সদর উপজেলার পিএমখালী এলাকার নবী হোছনের স্ত্রী রুমা আক্তার ক’দিন আগে পাসপোর্ট করতে নতুন ভবনে যান। সরকার নির্ধারিত ফি ব্যাংকে জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়ার চেষ্টা করে। ঘুষ না দেয়ায় তার আবেদন ফরম জমা নেয়নি। পরে তিনি ডিএডি শওকতের কাছে স্বাক্ষরের জন্য গেলে ঘুষ না পাওয়ায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।
পরে তাকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয় এবং আবেদনকারীনির সাথে থাকা তার স্বজন রাশেদকেও লাঞ্চিত করা হয়। একইভাবে খুরুশকুল এলাকার আইয়ুব হোছেন জানান, পাসর্পোট ফরম জমা দিতে গেলে তাঁর আবেদন প্রথমে নিতেই চাননি শওকত কামালের অধীনস্থ কর্মকর্তারা। তারা ২ হাজার টাকা দাবী করে। পরে অনেক চেষ্টার পর তিনি পাসপোর্ট ফরম জমা দিতে পারলেও নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট হাতে পাননি। ঘুষের টাকা না দেয়ায় দীর্ঘ সময় আইয়ুব হোসেন পাসপোর্ট ডেলিভারি না পেয়ে হতাশ হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রাহক জানান, সাধারণ ও জরুরী পাসর্পোট আবেদনকারীদের নতুন ভবনে প্রতিদিন শারীরিক ও মানষিক ভাবে নির্যাতন করে যাচ্ছে শওকত কামাল।
এদিকে, সরকার প্রশাসনকে গতিশীল করে জনগনের দোড়গোড়ায় সেবা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। কিন্তু সরকারের নীতির্নিধারকদের এসব নির্দেশনা তোয়াক্কাও করছেন না ডিএডি শওকত। সেবা তো দুরের কথা সরকারি এই অফিসে সারাবছর শওকতের অত্যাচারে পিষ্ট পাসর্পোট প্রার্থীরা। প্রতিদিন দুর্নীতি আর অনিয়মের মাধ্যমে এই জেলার সাধারণ লোকজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
প্রতিমাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেতনভাতা পেলেও তিনি এই শহরেই বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। একদিনেই ব্যয় করছে অর্ধলাখ টাকা। তিনি পাসপোর্ট অফিসে যোগদানের এক বছরের ব্যবহার করছে নিজস্ব প্রাভেইট কার। কলাতলিতে সাবেক উচ্চমান সহকারীর মাধ্যমে কিনেছেন কোটি টাকার জমি। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকেই নামে-বেনামে ও স্ত্রীর নামে একাধিক হিসাব রয়েছে বলে কয়েকটি সুত্র নিশ্চিত করেছে।
শওকত কামাল প্রকাশ্যে এখন বলে বেড়ান, পাসপোর্ট অফিসের নতুন ভবনটা সচিবালয়ের আদলে করব। এখানে সহজে কোন সাধারণ মানুষ ও মিডিয়াকর্মী ডুকার অনুমতি নেই। আর ভেতরে ডুকতে চাইলে প্রথম গেইট থেকে টুকেন নিয়ে প্রবেশ করতে হবে। এধরনের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত সরকারী সেবামুলক প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
এব্যাপারে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক বলেন, আমার নাম শওকত কামাল। আমি প্রকাশ্যে দুর্নীতি করব। উপর থেকে নীচ পর্যন্ত সবাইকে ভাগও দেয়া হচ্ছে। আমার দুর্নীতির ব্যাপারে পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। কেউ টিকিও ছুতে পারেনি। এখনো লিখলেও কিছু হবে না ।