১,৪৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২২-০২-২৩ ১৯:০৩:৩৩
দেশের খাদ্য মজুদ সুসংহত করতে ৫০ হজার মেট্রিক টন গম ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে এক কার্গো এলএনজি আমদানির দুটি প্রস্তাবসহ মোট চারটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এ জন্য মোট ব্যয় হবে ১,৪৪৪ কোটি ৩৯ লাখ ২৫ হাজার ২১৩ টাকা।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় এসব প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।
সভা শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৫ম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৭ম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিটির অনুমোদনের জন্য তিনটি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য চারটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘ক্রয় কমিটির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একটি প্রস্তাব ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত চারটি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১,৪৪৪ কোটি ৩৯ লাখ ২৫ হাজার ২১৩ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ১,২৯২ কোটি ৪৩ লাখ ২৫ হাজার ২১৩ টাকা এবং এডিবি ঋণ ১৫১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো বিস্তারিত জানাবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।’
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে প্যাকেজ-৭ এর আওতায় ৫০ হাজার (+৫%) মেট্রিক টন গম আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। গম আমদানির জন্য তালিকাভুক্ত সরবরাহকারীদের কাছে আন্তর্জাতিক কোটেশন আহ্বান করা হলে চারটি দরপত্র জমা পড়ে যা রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুর ভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের থেকে প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৩৯০.৯২ মার্কিন ডলার হিসেবে সর্বমোট ১ কোটি ৯৫ লাখ ৪৬ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় হবে ১৬৮ কোটি ৯ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন- ২০১০ (২০২১ সালের সর্বশেষ সংশোধনীসহ) এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে (২০২২ সালের ৫ম) এলএনজি আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার (সিসিইএ) অনুমোদনক্রমে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ১৬টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়।
‘পেট্রোবাংলা কর্তৃক ১৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছ হতে ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহের দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে একটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে যা রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির (পিপিসি) সুপারিশে একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুর ভিত্তিক মেসার্স ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড এই এলএনজি সরবরাহ করবে। প্রতি এমএমবিটিইউ ২৯.৭০ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে ব্যয় সর্বমোট ব্যয় হবে ১,০০৪ কোটি ৬৯ লাখ ৮ হাজার ৮৭২ টাকা।”
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-জি-৫ এর আওতায় একটি বয়া লেয়িং ভেসেল সংগ্রহ ও ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের আওতায় একটি বয়া লেয়িং ভেসেল সংগ্রহ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৎসহ বিশেষজ্ঞ সেবা ক্রয়ের জন্য এক ধাপ দুই খাম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। প্রস্তাবটি কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শীপ বিল্ডার্স লিমিটেডের কাছ থেকে ১১৯ কোটি ৬৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৪১ টাকায় একটি বয়া লেয়িং ভেসেল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং বিশেষজ্ঞ সেবা ক্রয় করা হবে।’
জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২: এলেঙ্গা হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতরণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-১৫ এর পূর্ত কাজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। তার মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৫১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।’
এরআগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিনটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে অতিরিক্ত সচিব জানান।
এএ