আইনের সমাধান নিয়ে বইমেলায় পুলিশ
আপডেট: ২০১৬-০২-১৫ ১৫:৫১:৩০
অমর একুশে গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি স্টলে সুসজ্জিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের স্টল। সেখানে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে পুলিশদের লেখা বই। আর সেই বইয়ের সারিতে সবার আগে চোখ পরে যে বইয়ের উপর তাহল ল’ সামাধান বই। স্টলে বসে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন সবচেয়ে নাকি ল’ সমাধান বইটিই পাঠকরা বেশি কিনছেন। সবার আগ্রহ পুলিশ কি ধরনের আইনি সমাধান দেন।
বইটির মধ্যে রয়েছে ফৌজদারি কার্যবিধিসহ চলমান নানা আইনের সমাধান। বইটিতে পাওয়া যাবে বাংলাদেশের সকল থানার মোবাইল নাম্বার এবং আইনি সহয়তার বিভিন্ন তথ্য।
ল’ সমাধান বইটি ছাড়াও রয়েছে পুলিশের বিভিন্ন লেখকদের পুরাতন-নতুন বই। তবে পুলিশের এ স্টলে সবচেয়ে বেশি বইয়ের স্থান দখল করে আছে বিশিষ্ট লেখক ডিএমপির গুলশান জোনের ডেপুটি কমিশনার মোসতাক আহমেদের বই।
সম্প্রতি অনেক বদনাম পুলিশের সম্মানের ঝুলিকে করেছে হালকা। তাদের সুশৃঙ্খল কর্মময় জীবনকে করেছে কুশলিত। সাংবাদিক নির্যাতন, নারীর প্রতি অশোভন আচরণ, খেটে খাওয়া শ্রমিকের বুকে গুলি, নিরীহ পথচারীকে ইয়াবার ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় ইত্যাকার নানা ‘বাজে’ কর্মকাণ্ডে মুখ থুবড়ে পড়েছে এ বাহিনীর সুনাম।
কিন্তু না, পুলিশের পরিচয় শুধু এগুলোই নয়; তারা দেশরক্ষায় ভূমিকা রাখছেন, মানুষের সেবায় দিন-রাত, রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে জনগণের সেবা করছে। কিছু অসাধু লোকদের কারণে সম্মান হারাচ্ছেন এ বাহিনীটি। এ বাহিনীর লোক শুধু মানব সেবাই নয় সাহিত্যে অনেক অবদান রাখছে।
জনপ্রিয় লেখকদের একজন মোশতাক আহমেদ। তিনি বর্তমানে ডিএমপির গুলশান জোনের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি)। পুলিশ হিসেবে তাকে অনেকে না চিনলেও লেখক হিসেবে তাকে সবাই চেনেন। সায়েন্স ফিকশন, ভৌতিক উপন্যাস, ডিটেকটিভ সায়েন্স ফিকশনে তার সুখ্যাতি দেশজুড়ে।
মোশতাক আহমেদের জনপ্রিয় বইগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বই রয়েছে সায়ন্স ফিকশন ও ভৌতিক বিষয়ে। নিম্নে তার প্রকাশিত বইয়ের তালিকা পেশ করা হল:-
‘গিটো’, ‘হিমালয়ে রিবিট’, ‘অশুভ আত্মা’, নীল জোছনার জীবন, প্রজেক্ট হাইপার, হারানো মুকুট, নিরাপত্তার হ্যান্ডবুক, দ্বিতীয় পৃথিবী, জমিদারের গুপ্তধন, নিরি, লাল ডায়েরি, কালা পিশাচ, জোছনা রাতের জোনাকি, বায়োবোট নিওক্স, রিরি, শান্তিতে রিবিট, লিলিপুটদের ফিরে যাওয়া, বসন্ত বর্ষার দিগন্ত, উলু পিশাচের আত্মা, শয়তানের সাধক চিলিকের আত্মা, লাল গ্রহের লাল প্রাণী, এক ঝলক কিংবদন্তি হুমায়ন আহমেদ, নক্ষত্রের রাজারবাগ,রিবিট ও কালো মানুষ, রিবিট এবং ওরা, রিবিটের দু:খ, রোবটিজম, ক্লিটি ভাইরাস, নিহির ভালবাসা, গিগো, লালমানব, লিলিপুটদের গ্রহে, পৃথিবীতে লিলিপুটেরা, রোবো, প্রজেক্ট ইক্টোপাস, রোবটদের পৃথিবী, লাল শৈবাল, পাইথিন, ক্রিকি, অণুমানব, ক্রি,গিপিলিয়া, নিকি, সবুজ মানব, অতৃপ্ত আত্মা, আত্মা,প্রেতাত্মা, রক্ত তৃষ্ণা, রক্ত পিপাসা, অভিশপ্ত আত্মা, বৃষ্টি ভেজা জোছনা’, ‘এক ব্যাগ রিবিট’, ‘রিবিটের জীবন’, ‘শান্তিতে রিবিট’, ‘লাল গ্রহের লাল প্রাণী’ উল্লেখযোগ্য। রিবিট সিরিজের বইগুলো কিশোর-কিশোরীরা গেলে এক ঢোঁকে!
ক্রিমিনোলজিতে স্নাতকোত্তর এই লেখক পেয়েছেন কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার- ২০১৩, ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার-২০১৪, কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৪।
মোশতাক আহমেদের ওইসব জনপ্রিয় বইগুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে ডিএমপির স্টলে। স্টলে অন্য লেখকদের তুলনায় তার বইয়ের সংখ্যাই বেশি। তবে অন্য পুলিশ লেখকদের বইও আছে সেখানে।
মেলায় এসেছে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকের নতুন বই ‘সমাজে পুলিশ এবং কমিউনিটি পুলিশিং’, ‘পুলিশ অ্যান্ড কমিউনিটি উইথ কনসেপ্ট অব কমিউনিটি পুলিশিং’ বইটি। রয়েছে প্ল্যানিং, রিসার্চ অ্যান্ড হিউম্যঅন ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ল’ ইনস্ট্রাকটর মো. জাহাঙ্গীর আলমের ‘সমাধান ল’ গাইড’ বইটিও।
ঢাকা মেট্রোপলিটন বইয়ের স্টলে বসে পাঠকদের সাথে কথা বলছিলেন আলী হোসেন, ডিএমপি সদর দপ্তর। তার জানতে চেয়েছিলাম পুলিশ বলে পাঠকরা আপনাদের সাথে কথা বলতে বা বই কিনতে ইতস্থবোধ করে নাতো? সাবলিল উত্তরে তিনি জানান, আমরা পুলিশ জনগণের বন্ধু, সুতারং বন্ধুর সাথে বন্ধুর কথা বলতে খারাপ লাগবে কেন? আমাদের সাথে সাধারণ পাঠকরা সবাই কথা বলে, বই দেখে, বই কিনছেন।
সম্প্রীতি পুলিশের কিছু বদনামে বিষয়ে তিনি বলেন, একজন খারাপ হলে পুরো পুলিশ বাহিনীতো খারাপ হয়ে যায় না। দেখে আমাদের পুলিশ বাহিনী কত কষ্ট করে সমাজের আইন সৃঙ্খলা রক্ষা করে। সারাদিন রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে তারা ট্রাফিকিং করছে। আমাদের অনেক সুনাম আছে, আমরা সুনাম নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
তিনি বলেন, সবাই আমাদের সাথে সানন্দে কথা বলছে, কোন ভয় নেই। এখানে আমরা পুলিশের বিভিন্ন বই নিয়ে এসেছি যা পাঠকদের অনকে সহায়তা করবে। যেমন আইনের সমাধান মূলক বই ল’ সমাধান, এই বইটি পাঠকদের অনেক উপকারে আসবে।
তিনি বলেন, আর আমি বইমেলায় আগত সকল পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনার সবাই আমাদের স্টলে আসবেন নির্ধিদায় চলে আসবেন, বই দেখবেন, আমাদের সাথে কথা বলবেন, কোন সংকোচ রাখবেন মনে। আমরা আপনাদের বন্ধু, বন্ধুর মতই থাকতে চাই।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস