দাতাদের ঋণছাড়: সাত মাসে ৪০ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২২-০২-২৮ ২১:২৯:৩৩


মহামারি করোনার মধ্যেও দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের গতিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে উন্নয়ন সহযোগীরা। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৮৮ হাজার ২৪ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে এর পরিমাণ কমে হয়েছে ৭০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এদিকে চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) দেশে বৈদেশিক সহায়তায় ঋণছাড়ের পরিমাণ বেড়েছে। সাত মাসে বৈদেশিক ঋণ ছাড় হয়েছে ৪৬৯০ দশমিক শূন্য ৯৫ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৪০ হাজার ২১৬ কোটি টাকা (প্রতি ডলার সমান ৮৫ দশমিক ৭৫ টাকা ধরে)।

গত অর্থবছরে একই সময়ে অর্থছাড় হয়েছিল ৩৩৫৭ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ডলার। ফলে এক বছরের ব্যবধানে ১৩৩৩ মিলিয়ন ডলার বাড়তি অর্থছাড় হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। একই সময়ে বিশ্বব্যাংককে ছাড়িয়ে গেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সবসময় শীর্ষে থাকা সংস্থা বিশ্বব্যাংক এখন তৃতীয় স্থানে।

দেশে একই সময়ে বিভিন্ন সহযোগীদের কাছ থেকে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি এসেছে ৪৬৯৮ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৪০ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছর একই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল ২৪৬৪ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ডলার। ফলে এক বছরের ব্যবধানে বাড়তি প্রতিশ্রুতি এসেছে ২২৩৩ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ডলারের। এ সময়ে সব থেকে বেশি প্রতিশ্রুতি এসেছে চীনের কাছ থেকে। তবে ভারত ও রাশিয়ার কাছ থেকে চলতি বছরের সাত মাসে কোনো ঋণ প্রতিশ্রুতি আসেনি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) জানুয়ারি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্যানুযায়ী, অর্থছাড়ে এগিয়ে আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। সংস্থাটি এ সময়ে ঋণ ছাড় করেছে ১ হাজার ৭৭২ মিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১৫ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। এরপরই জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অবস্থান। এ সময়ে সংস্থাটি অর্থছাড় করেছে ১০০২ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। চলতি বছরের সাত মাসে দেশটি ৪৯৭ দশমিক ৪০ মিলিয়ন ডলার অর্থছাড় করেছে। প্রতি ডলার সমান ৮৫ দশমিক ৭৫ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংক ৪৬১ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড় করেছে। রাশিয়া ঋণ ছাড় করেছে ৩৮৪ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ৩১ দশমিক ৩৩, ভারত ৯০ এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী ৪৪৯ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড় করেছে।

গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থছাড়ে এগিয়ে ছিল জাপান ও আমেরিকা। দেশ দুটি ৭৮৭ কোটি ডলার অর্থছাড় করেছিল। এরপরই অর্থছাড় করেছিল বিশ্বব্যাংক ৭৪, এডিবি ৫৭, ইউরোপ ৪৫, জাতিসংঘ ৩ দশমিক ৭ কোটি ডলার। এ বিষয়ে ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, গত সাত মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে মোট প্রতিশ্রুতি এসেছে ৪৬৯ দশমিক ৮১ কোটি ডলার। সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি ছিল চীনের কাছে ১১২ দশমিক ৭ কোটি ডলার। এর পরেই এডিবির কাছ থেকে ৮২ দশমিক ২৮ কোটি ডলার। ঋণ প্রতিশ্রুতির তালিকায় ছিল এআইআইবির ৫১ কোটি, জাপানের ৩৮ কোটি এবং বিশ্বব্যাংকের ৭৯ দশমিক ৫ কোটি ডলার। অর্থছাড় করলেও ভারত ও রাশিয়ার কোনো প্রতিশ্রুতি ছিল না।

গত অর্থবছর একই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল ২৪৬ দশমিক ৪৭ কোটি ডলার। গত বছর একই সময়ে প্রতিশ্রুতির শীর্ষে ছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, সংস্থাটি ৪৬ দশমিক ৫ কোটি ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এর পরেই বিশ্বব্যাংক, সংস্থাটি ৪০ দশমিক ৮ কোটি ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ইউরোপ ৪০ দশমিক ৪৬, আমেরিকা-জাপান ৩৮, জাতিসংঘ থেকে ১১ দশমিক ৭ কোটি ডলার প্রতিশ্রুতি এসেছিল। অর্থনীতিবিদদের দাবি, বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে চীন ও রাশিয়ার অর্থায়নে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন গতি ভালো বলেই বেড়েছে অর্থছাড়। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল নির্মাণকাজ চলমান। এখানে চীন সরকারের অর্থ সহায়তা ৫ হাজার ৯১৩ দশমিক ১৯ কোটি টাকা। চীনের অর্থায়নে পদ্মা সেতু রেল লিঙ্ক প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে।

এ প্রকল্পে ২১ হাজার ৮১২ কোটি টাকা ঋণ দেবে চীন। এ ছাড়া মেট্রোরেল প্রকল্পে বড় ঋণ দিচ্ছে জাপান। পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পও চলমান। এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৯২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে রাশিয়া।

পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, মহামারির কারণে রাজস্ব সংগ্রহ ধীর গতিতে হওয়ায় সরকারের এখন অর্থের প্রয়োজন। এ কারণেই সরকার আরও বেশি বাজেট সহায়তা নিচ্ছে এবং উন্নয়ন সহযোগীরা বাজেট সহায়তা ছাড়তে খুব বেশি সময় নিচ্ছে না। তবে প্রকল্প সহায়তার প্রাপ্তি ততটা বাড়ছে না।

সানবিডি/এনজে