তিন পায়ের শিশু জন্ম নিল ভারতে!
আপডেট: ২০১৬-০২-১৭ ১৮:৪৯:২৪
লাখ শিশুর মধ্যে হয়তো একজনের ক্ষেত্রে এমনটা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলেও অতিরিক্ত একটা পা বা হাত এদের জীবনকে করে তুলতে চায় দুর্বিষহ। বিরল এই দৈহিক সমস্যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় নাম দেওয়া হয়েছে, পলিমেলিয়া।
সম্প্রতি ভারতের দিল্লিতে এমনই এক শিশুর অতিরিক্ত একটা পা সফলভাবে অপসারণ করলেন চিকিৎসকরা। দুই বছর বয়সী শিশুটির নাম বর্ষা সেনা। ২০১৪ সালে জন্ম হয় তার। মেরুদণ্ডের ঠিক ওপরেই একটি অতিরিক্ত পা নিয়ে পৃথিবীতে আসে সে।
গত মাসে দিল্লির গোবিন্দ বল্লভ পান্ত হাসপাতালের চিকিৎসকরা সফলভাবে বর্ষার অতিরিক্ত পা-টি অপসারণ করেন। অস্ত্রপচারকারী চিকিৎসকদলের নেতৃত্ব দেওয়া ডা. দলজিত সিংয়ের ভাষায়, বর্ষা পলিমেলিয়ায় আক্রান্ত ছিল। এ ধরনের সমস্যায় মানুষ চার হাত-পা ছাড়াও অতিরিক্ত এক বা একাধিক অঙ্গ নিয়ে জন্মায়। গত ৫০ বছরের মধ্যে আমরা এ সমস্যায় আক্রান্ত কোনো রোগী পাইনি।
তিনি আরও জানান, পলিমেলিয়ায় অতিরিক্ত অঙ্গ নিয়ে শিশুর জন্ম হলেও বর্ষার ক্ষেত্রেই প্রথম মেরুদণ্ডের হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে অতিরিক্ত অঙ্গের জন্ম হয়েছে।
২০১৪ সালে দিল্লির বারা হিন্দু রাও হাসপাতালে বর্ষার জন্ম হয়। অতিরিক্ত পা নিয়ে জন্মানোয় প্রথম দর্শনেই আঁৎকে উঠেছিলেন তার মা কোমল সেনা (২৪)। তার ভাষায়, ওকে প্রথম যখন দেখলাম আমি, ভয়ে আঁৎকে উঠেছিলাম।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, মাতৃগর্ভে প্রাথমিক অবস্থায় শিশুর দেহে কোষের অস্বাভাবিক বিভাজন ও বৃদ্ধির ফলে পলিমেলিয়া হয়ে থাকে। সমস্যাটা সাধারণত জমজ শিশুদের ক্ষেত্রেই বেশি হয়ে থাকে। মায়ের গর্ভে প্রথমে দুই শিশু আসে। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থাতেই যখন এক শিশুর বৃদ্ধি ও গঠন থেমে যায়, তখন সেই অতিরিক্ত অংশটুকু তার জমজের দেহে জোড়া লেগে যায়।
বিশ্বে এ পর্যন্ত মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন শিশুর ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা নজরে এসেছে চিকিৎসকদের।
এর আগে ২০১৪ সালে ভারতের গুজরাটে এক ছেলে শিশুর জন্ম হয় তিন হাত নিয়ে। তার ডান হাতটা ঠিকঠাক থাকলেও বাম হাতের জায়গাটাতেই বিপত্তিটা হয়েছিল। সেখানে একটা হাতের পরিবর্তে ছিল দু’টো হাত। আহমেদাবাদ সিভিল হাসপাতালের চিকিৎসকরা সফল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে অতিরিক্ত হাতটি অপসারণ করেন।
এর আগে ২০১২ সালে পাকিস্তানে এক মেয়ে শিশুর জন্ম হয় তিন হাত নিয়ে। সেও পলিমেলিয়ায় আক্রান্ত ছিল। তার অতিরিক্ত হাতটি মেরদণ্ডের হাড়ের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। পাঞ্জাবের দেরা গাজি খানের ওই শিশুটির চার বছর বয়সে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে অতিরিক্ত হাতটি অপসারণ করা হয়।
তবে পলিমেলিয়ায় আক্রান্ত সবচেয়ে আলোচিত শিশুটির নাম লক্ষ্মী তাতমা। ভারতের এই শিশু আটটি হাত-পা নিয়ে জন্মেছিল। মাতৃগর্ভে পরিণত হওয়ার আগেই তার জমজ মারা যায় এবং সেই জমজের হাত-পাগুলো শিশুটির দেহে জোড়া লেগে যায়। ২০০৭ সালে চিকিৎসকরা লক্ষ্মী তাতমার অতিরিক্ত হাত-পাগুলো অপসারণ করেন।
সানবিডি/ঢাকা/রাআ