সংবাদপত্র ও সরকার

প্রকাশ: ২০১৬-০২-১৭ ২৩:৪৩:৫৫


Meherunnesa Jubaida
লেথক: মেহেরুন্নিসা জুবাইদা

প্রেসের বিরুদ্ধে সরকারের হয়রানি সারা বিশ্বেই কম বেশি ছিলো বা আছে। প্রেস আর সরকার অনেকটা ক্ষমতার চেক এন্ড ব্যালান্সের মতো। কেবল মাত্র প্রকৃত উন্নত দেশগুলোই পেরেছে এ অবস্থা থেকে বের হতে। আর প্রেস এবং সরকারের সাথে শাপে নেউলের এ সম্পর্কে যখন সরকার জয়যুক্ত হয় তখনই প্রমান হয় যে দেশটি এখনো পিছিয়ে আছে।

আমেরিকায় এমন একটা হুলস্থুল ঘটনা ঘটেছিলো ১৭৩৩ (ইং) সালে। জন পিটার জেঙ্গার নামে একজন জার্মান ইমিগ্রান্ট সম্পাদকের একটা পত্রিকা ছিলো, নিউইয়র্ক উইকলি জার্নাল। এতে বেনামে প্রকাশিত হয় একটি রিপোর্ট যাতে নিউইয়র্কে সরকারের বিরুদ্ধে বিসদগার করা হয় যে এই সরকার ইলেকশনে দুর্নীতি করেছে এবং হারবরগুলো শত্রদের হাতে তুলে দিচ্ছে। শুরু হলো সরকারের দায়ের করা মামলা। মামলার অভিযোগের নাম লাইবেল (LIBEL)। মানে হলো কারো বিরুদ্ধে তাকে হেয় করা বা তার ক্ষতি করার জন্য লেখা প্রকাশ করা।

আদালতে পিটার জেঙ্গার রিপোর্টের লেখকের নাম বলতে অস্বীকার করে। আর কোর্টে কসবি সরকার নিজের পছন্দমতো জুরি নির্বাচন করে দেন এবং বিচারকও সরকারের পক্ষে ছিলো ফলে যা প্রকাশ হয়েছে তার সত্যতার চেয়ে বিচারকের একটাই প্রশ্ন ছিলো যে ওই রিপোর্ট পত্রিকায় ছাপা হয়েছে কি না। যেহেতু এ বিষয়ে কোন সন্দেহ ছিল না, তাই জেঙ্গারকে বিচারক জেল দিয়ে দেন।

কিন্তু জেঙ্গারের স্ত্রী ছিলেন নাছোড়বান্দা। তিনি জেঙ্গারের অবর্তমানে পত্রিকায় এ বিষয়ে রিপোর্ট চালিয়ে যান। ফলে সরকার বাধ্য হয় আবার বিচার কাজ শুরু করতে। স্বাধীন সংবাদপত্রের উপর হস্তক্ষেপ দেখে পেনসিলভেনিয়া থেকে আসেন বিখ্যাত আইনবিদ এন্ড্রু হ্যামিলটন। জুরি নির্বাচন যেনো স্বাধীন হয় এটা নিশ্চিত করা হয়।

বিচারে বিচারক যদিও জুরিদের হুকুম দিয়েছিলেন এ্কটা বিষয়ের উপর সিদ্ধান্ত দিতে যে পত্রিকায় ওই রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছিলো কি না, মিনিট দশেক পরে জুরিরা ফিরে এসে পুরোপুরি অন্য রায় দেয়। তাদের মতে পত্রিকার অধিকার আছে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করার এবং সরকার যাতে কোনভাবেই প্রেসের উপর হস্তক্ষেপ করতে না পারে তাই তারা জেঙ্গারকে নির্দোষ হিসাবে ছেড়ে দেয়ার পক্ষে। আর অন্যদিকে হ্যামিল্টন নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় সরকারকে। এবার সরকারকে জনগণের কাছে প্রমাণ করতে হবে যে রিপোর্টের প্রতিটি অভিযোগ মিথ্যা ছিলো। এই রায়টি আমেরিকার ইতিহাসে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার মাইল ফলক হিসাবে বেঁচে থাকে।

বুশ সরকার ইরাক যুদ্ধের সময় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং খবর সংগ্রহ করার সুবিধার নামে আর্মিদের সাথে সাংবাদিক এমবেড করে দিয়েছিলো। যারা কেবল আর্মিদের সাথে থাকতো, তাদের সাথে অভিযানে যেতো এবং এবং খবর সংগ্রহ করতো। আর্মিদের সাথে থেকে খবর যোগাড় করায় সে খবর কোনভাবে আর্মিদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে বুশ সরকারের কালো অধ্যায়গুলোর মধ্যে অন্যতম হয় এই সাংবাদিক এমবেড করার ইতিহাস।

অন্য সরকার বা সংবাদপত্র যে তখন থেকে পরষ্পরের শত্রু বা বন্ধু ছিলো তা নয়। তবে হয়রানিটা বন্ধ হয়। ফক্স নিউজের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে যায় ওবামা সরকার। যেকোন অনুষ্ঠান কভার করে বিকৃতভাবে ছাড়ে টেলিভিশনে। ফলে বিরক্ত ওবামা সরকার একবার সিদ্ধান্ত নেয় ফক্স যেনো তার প্রেস ব্রিফিংয়ে না আসে। এমন সিদ্ধান্তে সবচেয়ে সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে ওবামা সরকারের বন্ধু এম এস এন বি সি। তারা জানায় দেয় সরকার যদি স্বাধীন প্রেসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং এমন কোন কাজ করে যাতে প্রেসের অবাধ স্বাধীনতায় সরাসরি বা কৌশলে হস্তক্ষেপ হয় তাহলে তারাও সে সরকারকে বয়কট করবে। অন্য সাংবাদিক যারা ফক্সের চরম বিরোধী তারাও যোগ দেয় এতে। ওবামা সরকার বাধ্য হয় এ সিন্ধান্ত থেকে সরে আসতে।

যাই হোক বাংলাদেশের অবস্থান দেখে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় এখনো আঠারোশ’ সনে আছে দেশটি।

লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখিকা