নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে কারসাজিতে: রাষ্ট্রপতি
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২২-০৪-০৭ ২০:২৬:০০
চাহিদা ও সরবরাহে সমন্বয়হীনতা নয়, কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়ানো হয় বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য কারসাজির কারণে যেন জনভোগান্তি না হয়, সে বিষয়ে সজাগ থাকার পাশাপাশি সরকারকে আগাম পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) ঢাকার র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে বিকেলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় রপ্তানি ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর এই যৌথ আয়োজনে বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন রাষ্ট্রপ্রধান।
বাজার অর্থনীতিতে চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি বিবেচনা করে দ্রব্যমূল্য নির্ধারিত হলেও বাংলাদেশে এই চিত্র উল্টো বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের এখানে চাহিদা ও সরবরাহে সমন্বয়হীনতা নয়, বরং কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অসাধু চক্র যাতে কারসাজির মাধ্যমে জনভোগান্তি বাড়াতে না পারে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে এবং সরকারকেও আগাম পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, মজুত ও ঘাটতির সঠিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে আগাম পরিকল্পনা নেয়া গেলেই অসাধু চক্র কোনো সুযোগ নিতে পারবে না।’
এ জন্য ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, আমলাতন্ত্র ও সরকারকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় সঠিক পরিকল্পনা ও তথ্য-উপাত্তের অভাবেও পণ্যের দাম ওঠানামা করতে পারে। যেমন বছর দুয়েক আগে হঠাৎ করে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় এত বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল যে শেষ দিকে অনেক আমদানিকারককে তাদের পেঁয়াজ ফেলে দিতে হয়েছে।’
দেশে রোজা, ঈদসহ বিভিন্ন উৎসব-পার্বণ এলে পণ্যের দাম হঠাৎ করেই বেড়ে যাওয়া নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতীয়, ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব উপলক্ষে সাধারণত জিনিসপত্রের দাম কমানো হয়, যাতে জনসাধারণ পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দের সঙ্গে উৎসবে শরিক হতে পারে। বড়দিন বা নববর্ষ উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্যসামগ্রীর দামে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়।
‘রমজান উপলক্ষে সৌদি আরব, আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রায় সব অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম কমানো হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যায় এর বিপরীত চিত্র। উৎসব এলেই দেখা যায় একশ্রেণির ছোট-বড় ব্যবসায়ী এটাকে পুঁজি করে কীভাবে জনগণের পকেট কাটা যায় সে জন্য ওতপেতে থাকেন।’
সিন্ডিকেট আজকাল সবচেয়ে আলোচিত শব্দ উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘যেকোনো সেক্টরে পণ্যের দাম বাড়লে বা কমলে সিন্ডিকেটকেই দায়ী করা হয়। যারা সিন্ডিকেট করে, যারা জনভোগান্তি বাড়ায় তাদের আইনের আওতায় আনতে সরকারকে কঠোর হতে হবে। পাশাপাশি কিছু অসাধু ব্যক্তির জন্য যাতে গোটা ব্যবসায়ী সমাজের সুনাম ক্ষুণ্ন না হয় সে ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে।’
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘জনসাধারণের ভোগান্তির কথা বিবেচনা না করে শুধু নিজেদের মুনাফার কথা ভাবলে চলবে না। জনগণ এটা কখনও প্রত্যাশা করে না যে, আপনারা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে দাতব্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে তাদের সহায়তা করেন। তারা চায় আপনারা যৌক্তিক মুনাফা করে ব্যবসা করুন। জনগণ যাতে আপনাদের অতিমুনাফার শিকার না হয়- এটাই তাদের প্রত্যাশা। তাই রাতারাতি বড়লোক হওয়ার মানসিকতা ছাড়তে হবে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে এসে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৬ সালে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। এসবই সম্ভব হয়েছে বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ যথাযথ বাস্তবায়নের ফলে।’
ক্রয়ক্ষমতার হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩০তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে রপ্তানি বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে জানান রাষ্ট্রপতি।
প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফি’ জিতেছে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এই সম্মানসূচক ট্রফি অর্জন অন্যান্য রপ্তানিকারককে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে আমার বিশ্বাস।’
এএ