যে ছবি আজও কাঁদায়…

প্রকাশ: ২০১৬-০২-২৩ ১৪:০০:২৭


sakib-musfiqসালটা ২০১২। ২২ মার্চ, মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান। একটা শিরোপা জয়ের জন্য মাঠে নেমেছিলেন সেদিনের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন বাংলার টাইগাররা। তবে জয় পায়নি বাংলাদেশ। মাত্র ২ রানে হেরেছিল মুশফিক-সাকিবরা।

বাংলাদেশ দলের সেই হার মেনে নিতে পারেননি কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্ত। আর মাঠের ভেতরে সাকিব-মুশফিকদের কান্না সারা দেশকে কাঁদিয়েছে। পুরো গ্যালারিজুড়ে কান্নার সেই দৃশ্য আজও মনে পড়লে চোখে যেন পানি চলে আসে।

একটি জয়! একটি ইতিহাস! একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন! ১১তম এশিয়া কাপের ফাইনালে আশা জাগিয়েও এর কোনোটিই বাস্তবায়ন করতে পারেনি স্বাগতিক বাংলাদেশ। শেষ ওভারে এসে সোনার তরী ডুবিয়ে দিল টাইগাররা। আনন্দের জোয়ারে ভাসতে যাচ্ছিল টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়াসহ গোটা বাংলাদেশ। বাঘের গর্জন এখন কেবল দেশেই আবদ্ধ। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে ঠিক এমন মুহূর্তে ২ রানের পরাজয়ে ডুবতে হয় লাল-সবুজদের।

এমন পরাজয়ে স্তব্ধ হয়েছিল মুশফিক বাহিনী। অনেকের চোখের কোণে পানি টলটল করেছে সেদিন। এ কী হলো! আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত হাত থেকে খসে গেল এশিয়া কাপের শিরোপা। মন মানে না তাদের। ভেতরে ভেতরে চলছে রক্তক্ষরণ। শরীরটা চলেনি বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের। মজুরি খেটেও মূল্য না পাওয়ার ভঙ্গিমায় তারা।

ফাইনাল ম্যাচেও তো আর কম ফাইট দেয়নি বাংলাদেশ। শেষপর্যায়ে এসে আরেকটু সজাগ হয়ে ব্যাট চালালেই হতো। আসলে পুরো খেলাটাই ছিল টানটান উত্তেজনায় ভরপুর। খেলা শেষ হওয়ার এক ওভার আগেও বলা যাচ্ছিল না কোন দল পরবে ১১তম এশিয়া কাপের মুকুট।

১১তম এশিয়া কাপের শুরু থেকেই লড়াই করার ইঙ্গিত দিয়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ২১ রানে হারলেও এক মুহূর্তের জন্য সাহসহারা হয়নি টাইগাররা। পরের ম্যাচেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে জয়রথ শুরু করেন তারা। এরপর নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে লঙ্কানদের পাঁচ উইকেটে বধ করার মধ্য দিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠে মুশফিক-সাকিবরা।

সেদিনের ম্যাচ বিশ্লেষণ: টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। শুরু থেকেই বল হাতে গর্জে ওঠেন পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজা ও নাজমুল হোসেন। ১৯ রানেই নাসির জামশেদ ও ইউনিস খানকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে পাকিস্তানকে বিপদে ফেলে দিয়েছিলেন তারা। বাংলাদেশ দলের বোলারদের কার্যকর বোলিং ও ফিল্ডারদের আঁটসাঁট ফিল্ডিং বেশিদূর এগুতে দেয়নি পাকিস্তানকে। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ২৩৬ রানেই থেমে যেতে হয় মিসবাহ-উল হকদের। বাংলাদেশ দলের বোলারদের মধ্যে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন দেশসেরা পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজা, স্পিনার আবদুর রাজ্জাক ও সাকিব আল হাসান। এরা প্রত্যেকেই দুটি করে উইকেট নেন।

জয়ের জন্য ২৩৭ রানের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। প্রথম তিন ম্যাচের মতো ফাইনালে হাতখুলে ব্যাট চালাতে থাকেন ওপেনার তামিম ইকবাল। নাজিমউদ্দিনকে (১৬) নিয়ে প্রথম উইকেট জুটিতে ৬৮ রানের পার্টনারশিপ গড়ে জয়ের ভিত্তি রচনা করেন তিনি। দলীয় ৮১ রানের মধ্যে ৩টি উইকেট হারিয়ে ফেললে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে পরাজয়ের দিকে মোড় নেয় বাংলাদেশ। উইকেট ছাড়ার আগে ওপেনার তামিম ৬৮ বলে ৬০ রানের একটি ইনিংস খেলেন।

এশিয়া কাপে এটি তার টানা চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি। এরপর ম্যাচের হাল ধরেন নাসির ও সাকিব জুটি। পাকিস্তান দলের বোলারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ের সামনে ধীরস্থিরভাবে দলীয় স্কোরে রান যোগ করতে থাকেন তারা। কিন্তু রান তোলার গতি প্রয়োজনের তুলনায় শ্লথ থাকায় একপর্যায়ে ভাবিয়ে তোলে বাংলাদেশ শিবিরকে। এর মধ্যে উইকেট ছাড়েন দলের মিডল অর্ডারের মূল স্তম্ভ নাসির হোসেন (২৮), সাকিব আল হাসান (৬৮) ও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম (১০)।

টেইল এন্ডার মাশরাফি বিন মর্তুজা আশা জাগালেও বেশিদূর এগোতে পারেননি তিনি। দলের রান তখন ৭ উইকেটে ২১৮। এ অবস্থায় ম্যাচ বের করে আনার দায়িত্ব নেন সহ-অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও টেইল এন্ডার আবদুর রাজ্জাক। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ৯ রানের। স্তব্ধ পুরো গ্যালারি। হাত তুলে প্রার্থনা করতে থাকেন অনেকে। শেষ ২ বলে জয়ের জন্য দরকার ৪ রান। এমন সময় চিমার বলে বোল্ড আউট আবদুর রাজ্জাক। উইকেটে আসেন শাহাদাত হোসেন। লেগ-বাই থেকে এক রান এলেও শেষরক্ষা হয়নি বাংলাদেশের। ফাইনাল ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হারের মধ্য দিয়ে পুরো বাংলাদেশের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। মাঠে অঝোরে কাঁদতে থাকেন মুশফিক। বিশেষ করে সাকিবকে জড়িয়ে তার সেই কান্না আজও ভুলতে পারেনি কোটি কোটি টাইগার ভক্তরা।

২০১২ সালের পর ২০১৪ সালেও বাংলাদেশের মাটিতে এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হয়। তবে সেখানে ভালো করতে পারেনি টাইগাররা। ২০১৬ সালে দারুণ ফর্মে থাকা বাংলাদেশকে নিয়ে আশা অনেক বড় ভক্তদের। বিশ্বকাপের পর থেকেই ক্রিকেটাঙ্গনে দাপট দেখিয়ে যাচ্ছে মাশরাফি বাহিনী।

ঘরের মাটিতে ভারত, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। ঘরের মাঠেই আগামীকাল বুধবার ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে ভক্তদের আশা প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপার মুকুটটা মাশরাফি বাহিনীর হাতেই উঠবে।

সানবিডি/ঢাকা/এসএস