খালাস না হওয়া ২ হাজার গাড়ি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ক্ষোভ
প্রকাশ: ২০১৬-০২-২৫ ২০:৩৫:৩৬
মংলা বন্দর দিয়ে আমদানি করা প্রায় দুই হাজার গাড়ি খালাসে বিলম্ব হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে গাড়ির শুল্কায়ন বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চারটি নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পাশাপাশি আটকে থাকা গাড়ির বিষয়ে আলোচনা করতে আজ প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নেতৃত্বে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। গাড়িগুলো খালাসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আগামী মাসের শুরুতে এনবিআর, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে অর্থমন্ত্রীও বৈঠক করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এনবিআরে পাঠানো নির্দেশনায় অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, বিষয়টি নিয়ে সভা-সমিতি অনেক হয়েছে এবং হচ্ছে। তবে গাড়ি খালাস প্রক্রিয়া আটকে আছে। এর কারণ বিভিন্ন সভায় বিভিন্ন সুপারিশ। আমি চাই প্রথমে রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নিয়মমাফিক শুল্কায়ন। দ্বিতীয়ত. শুল্কায়নে কত ছাড় দেয়া হবে সে সিদ্ধান্ত ও তৃতীয়ত. গাড়ি খালাস করার সময় নির্ধারণ করে দেয়া। সর্বশেষ নিলামে একটি নির্দিষ্ট নির্ঘণ্ট অনুযায়ী লক্ষ্য হবে একটি নির্দিষ্ট সময়ে (সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে) সব গাড়ি খালাস বা ধ্বংস করা। এজন্য আগামী মাসের শুরুতে এনবিআরের প্রতিনিধি, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে আমি বসতে চাই।’
এদিকে মংলা বন্দরে খালাস না করা গাড়ি দ্রুত বন্দর থেকে স্থানান্তরের বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে ড. মসিউর রহমানের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আজ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকের আলোচ্য সূচির মধ্যে রয়েছে বিগত সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং আইন ও প্রশাসনিক বাধা দূর করার উপায় খুঁজে বের করা। পুলিশ লাইন গাড়ি না রাখলে বিকল্প স্থান নির্বাচনের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হতে পারে বৈঠকে।
পুরনো গাড়ি খালাসে অবচয়ের হার ৯০ শতাংশ অথবা গাড়িপ্রতি ২ লাখ টাকা শুল্ককর নির্ধারণের দাবিতে গত বছরের ৩০ নভেম্বর অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দেয় রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডা। যদিও এনবিআর থেকে ৭০ শতাংশ অবচয় নির্ধারণের কথা জানানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি এফবিসিসিআই থেকে অর্থমন্ত্রী ও এনবিআরকে চিঠি দিয়ে অবচয়ের হার ৮০ শতাংশ নির্ধারণের অনুরোধ জানানো হয়। চিঠিতে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের ৬.১ ধারা অনুযায়ী বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা ৬. ২-এর (ক), (খ), (গ) নির্দেশনা মোতাবেক শুল্ক কর্তৃপক্ষ ও (ঘ) নির্দেশনা মোতাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় যথাযথ কার্যক্রম সম্পন্ন করায় সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের অনুশাসনের নির্দেশনার আলোকে পণ্য খালাসের সুযোগ দেয়া হয়নি। সবদিক বিবেচনায় শুল্ক আইনের ১৯, ২০ ও ২৫ ধারার ক্ষমতাবলে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী গাড়ির ওপর ৮০ শতাংশ অবচয় হার নির্ধারণের অনুরোধ জানানো হয়।
জানতে চাইলে বারভিডা সভাপতি হামিদ শরীফ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বন্দরে গাড়ি আটকে থাকায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী গাড়িগুলো খালাসের ব্যবস্থা নেয়া হলে অনেক আগেই এ জটিলতা কেটে যেত। এখন আটকে থাকা গাড়ি নিয়ে সরকারি পর্যায় থেকে একাধিক সুপারিশ আসায় খালাসে বিলম্ব হচ্ছে। এ জটিলতা দূর করতে অর্থমন্ত্রী আগামী মাসে সব পক্ষের উপস্থিতিতে বৈঠকের আয়োজন করছেন। অর্থমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টি সুরাহা হবে বলে আশা করছি।
এনবিআরে পাঠানো মংলা বন্দরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মংলা বন্দরে খালাস না হওয়া গাড়ির সংখ্যা ১ হাজার ৯৭৯। এর মধ্যে টয়োটা প্রবক্স এনসিপি৫০ মডেলের গাড়ি রয়েছে ৮৮টি। এছাড়া টয়োটা প্রবক্স এনসিপি৫১ মডেলের গাড়ি রয়েছে ৪৪২টি, টয়োটা টাউনএস মাইক্রোবাস ১০৪টি, টয়োটা হাইএস মাইক্রোবাস টিআরএইচ২০০ ৯১টি, হাইএস মাইক্রোবাস কেডিএইচ২০০ মডেলের ৩৩টি, এলিয়ন/প্রিমিও ৫২টি, টয়োটা এক্সিও এনজেডই১৪১ মডেলের ১৯০টি, টয়োটা এক্সিও এনজেডই১২১ মডেলের ৪০টি ও নিশান ব্লুুবার্ড ৪৮টি। পাশাপাশি অন্যান্য গাড়ি রয়েছে ৩৭৯টি। এসব গাড়ির মধ্যে শুল্কায়ন জটিলতায় আটকে আছে ১ হাজার ৪৬৭টি। নীতিবহির্ভূতভাবে আমদানি করায় আটকে আছে ৫১২টি গাড়ি। আদালতে মামলা রয়েছে ৬৭৬টি গাড়ি নিয়ে। গাড়িগুলোর সঙ্গে জড়িত সম্ভাব্য রাজস্বের পরিমাণ ২৪৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা।