প্রেমিকার রক্তাক্ত কাটামুণ্ড হাতে ঝুলিয়ে বাঁশবন খুঁজছিল প্রেমিকার

প্রকাশ: ২০১৬-০২-২৭ ১৪:২৬:০৬


প্রথমে কথা কাটাকাটি। তারপরে ধর্ষণ। সব শেষে, মুণ্ড কেটে খুন।

সেখানেই শেষ নয়, প্রেমিকার রক্তাক্ত কাটা মুণ্ডু হাতে করে নিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে নির্জন জায়গায় পৌঁছে সেই মুণ্ড মাটি খুঁড়ে পুঁতে দিয়েছিল প্রেমিক। এমনই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে এক যুবককে। মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধারের ২৪ দিন পরে উদ্ধারও হয়েছে তরুণীর কাটা মুণ্ডটি।

 murder

ঘটনাটি ভারতের জয়নগরের গাজিরদল মাঠ এলাকার। শুক্রবার দুপুরে সেখানেই উদ্ধার হয়েছে তরুণীর পচাগলা মুণ্ড। সেখান থেকে কিছুটা দূরে দিন কয়েক আগে উদ্ধার হয়েছিল ফলতার বাসিন্দা বছর চব্বিশের ওই তরুণীর ধড়। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে তাঁর প্রেমিক আখতার হোসেন মোল্লা। আপাতত সে পুলিশি হেফাজতে।

কী ভাবে ধরা পড়ল জয়নগরের বাটরার বাসিন্দা ওই যুবক?

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি সকালে ফলতার বৈকুন্ঠপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই তরুণী বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি। রামনগর এবং ফলতা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে তাঁর পরিবার। মেয়েটির পরিবারের দাবি, নিখোঁজ হওয়ার পরে মেয়েটির ফোন প্রথমে বন্ধ ছিল। পরে বাজতে শুরু করে।

বাড়ির লোকের তখন দিশাহারা অবস্থা। বার বার ফোনের নম্বর ডায়াল করে মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। এ রকম বেশ কয়েক বারের চেষ্টায় নিখোঁজ হওয়ার দিন তিনেকের মাথায় ফোন ধরে একজন। অপরিচিত পুরুষ কণ্ঠটি হুমকি দেয়, মেয়েকে ফিরে পেতে হলে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। এরপরেই ফোন কেটে যায়।

ইতিমধ্যে, জয়নগর থানা এলাকায় ৩ ফেব্রুয়ারি মুণ্ডহীন অজ্ঞাতপরিচয় তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়। নিয়ম মাফিক, জেলার বাকি সব থানায় সেই খবর দেওয়া হয়েছিল। ৯ ফেব্রুয়ারি মেয়েটির বাড়ির লোকজন জয়নগর থানায় গিয়ে পোশাক দেখে মুণ্ডহীন দেহটি তাঁদের মেয়ের বলে সনাক্ত করেন।

এরপরে ফলতা থানা এবং জয়নগর থানার পুলিশ তদন্তে নামে। ইতিমধ্যে মেয়েটির দেহ ময়না-তদন্তের পরে জানা যায়, তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছিল।

এ দিকে, তরুণীর ফোনটি মাঝে মধ্যে বন্ধ থাকলেও সেটি খোলাও হচ্ছিল সময়ে সময়ে। মোবাইল টাওয়ারের অবস্থান জানতে পারায় পুলিশের কাজ সহজ হয়ে যায়।

কিন্তু টাওয়ারের অবস্থান বদলে যাচ্ছিল মাঝে মধ্যেই। হাওড়ারই নানা জায়গা দেখাচ্ছিল। সেই মতো জাল বিছায় পুলিশ। শেষমেশ, ১৯ ফেব্রুয়ারি হাওড়ার শ্যামপুর থেকে বছর পঁয়ত্রিশের আখতারকে গ্রেফতার করে ফলতা থানার পুলিশ। তার শ্বশুরবাড়ি শ্যামপুরে।

ফলতা থানা ধৃতকে ডায়মন্ড হারবার আদালতে পাঠালে তার ৫ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়। পরে ফলতা থানা ধৃতকে জয়নগর থানার হাতে তুলে দেয়। জয়নগর থানা ধৃতকে ২৫ ফেব্রুয়ারি ফের বারুইপুর আদালতে তুললে তার আবার ৬ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়। তরুণীর মুণ্ড কোথায় রয়েছে জানতে আখতারকে জেরা শুরু করে পুলিশ। মেয়েটির দাদা শেখ সাইফুদ্দিন বলেন, ‘‘আমার বোন এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার নাম করে বেরিয়েছিল। আমাদের অনুমান, ওকে পাচার করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ছিল। কিন্তু কেন এই খুন বুঝতে পারছি না।’’

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘মেয়েটিকে ধর্ষণ করে খুনের পরে তার মোবাইলটি নিজের কাছে রেখে দেয় ওই যুবক। ফোন চালুও করেছিল বার কয়েক। সে কারণে তার খোঁজ পেতে পুলিশের সুবিধা হয়েছে।’’

কিন্তু বিবাহিত যুবক আখতারের সঙ্গে কী ভাবে সম্পর্কে জড়়ালেন ওই তরুণী?

তদন্তকারীরা আখতারকে জেরা করে জানতে পেরেছেন, মাস আটেক আগে অপরিচিত নম্বরে ‘মিসড কল’ দিয়েছিল আখতার। ঘটনাচক্রে মেয়েটি ফোন ধরেন। এ ভাবেই দু’জনের আলাপ। যা দ্রুত গড়ায় প্রেমের দিকে।

তদন্তকারীদের দাবি, নিজেকে বিবাহিত বলে পরিচয় দেয়নি আখতার। মেয়েটিও তার প্রেমে মজে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এই বার টনক নড়ে পেশায় দর্জি আখতারের। নানা কথায় বিয়ের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে শুরু করে সে। কিন্তু পুলিশ জানতে পেরেছে, মাস দু’য়েক ধরে ওই তরুণী বিয়ের জন্য চাপ বাড়াচ্ছিলেন।

পুলিশের দাবি, এই পরিস্থিতিতে মেয়েটিকে খুনের ছক কষে আখতার। ২ ফেব্রুয়ারি মেয়েটিকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফোন করে ডায়মন্ড হারবারে ডেকে আনে সে। সেখান থেকে ট্রেন ধরে দু’জনে যায় শিয়ালদহে। সেখান থেকে ফের লক্ষ্মীকান্তপুর লোকালে চেপে দক্ষিণ বারাসতে নেমে গাজিরদলের দিকে যায় দু’জনে।

ততক্ষণে সন্ধে নেমেছে। অন্ধকার, ফাঁকা রাস্তা দিয়ে বেশ কিছু দূর যাওয়ার পরে সন্দেহ জাগে মেয়েটির মনে। আখতার তাঁকে বলেছিল, নিজের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে মেয়েটিকে। কিন্তু ওই যুবকের ভাবভঙ্গী ভাল ঠেকেনি মেয়েটির কাছে। সন্দেহ হওয়ায় তিনি আর এগোবেন না বলে বেঁকে বসেন। দু’জনের মধ্যে এই নিয়ে তর্কাতর্কি বাধে। পুলিশের দাবি, জেরায় ওই যুবক জানিয়েছে, রাগের মাথায় মেয়েটিকে ঝোপের ধারে টেনে নিয়ে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করে আখতার। খুনের উদ্দেশ্য তার ছিলই। সঙ্গে করে ছুরিও নিয়ে বেরিয়েছিল।

ধর্ষণের পরে সেই ছুরি দিয়েই প্রেমিকার গলায় চালিয়ে দেয়। রক্তাক্ত অবস্থায় মেয়েটি যখন ছটফট করছে, তখন সে ঠিক করে, পরিচয় লোপাটের জন্য মুণ্ড কেটে ফেলবে। কিন্তু কাটলেই তো হল না, ধড়-মুণ্ডু আলাদা আলাদা জায়গায় ফেলতে হবে। ছোট ছুরি দিয়ে মুণ্ড কাটাও সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু বেশ খানিকক্ষণের চেষ্টায় প্রেমিকার ধড় থেকে মুণ্ড আলাদা করে ফেলে আখতার। তারপরে রক্তাক্ত কাটা মুণ্ডর চুল ধরে ঝুলিয়ে নিয়ে যায় বেশ খানিক দূরে।

রাত তখন প্রায় ৮টা। অন্ধকার রাস্তায়, শীত শীত ভাব থাকায় লোকজন ছিল না। সেই সুযোগকে কাজে লাগায় আখতার। মুণ্ডু মাটি চাপা দিয়ে রক্তমাখা ছুরি ফেলে দেয় ঘন বাঁশঝাড়ের মধ্যে।

পুলিশের দাবি, জেরায় আখতার বলেছে, সে বিবাহিত এবং তার দু’টি সন্তান রয়েছে। তার প্রেমিকা সেটা জানত না। তাই তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। নিজেকে বাঁচাতেই সে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে।

মুণ্ডুটি মোমিনপুর মর্গে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় আর কেউ জড়িত কিনা, না খতিয়ে দেখছে পুলিশ। আনন্দবাজার