পাকশীর পদ্মায় তারুণ্যের উচ্ছ্বাস
প্রকাশ: ২০১৬-০২-২৮ ২০:৩৪:২৫
পদ্মার কোল ঘেষেঁ প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য দক্ষিণ জনপদের দ্বারপ্রান্তের পাকশী ভ্রমণের জন্য এক নৈসর্গিক স্থান। এখানে দেখা মিলে প্রমত্তা পদ্মার উত্তাল ঢেউ আর কলধ্বনি। চারদিকে সবুজের বেষ্টনী ও মাতাল হাওয়ার পরশে যেমন হৃদয় ভরে যায়, তেমনি এই পাকশীর বুকে রয়েছে শতাব্দীর ঐতিহ্য হার্ডিঞ্জ ব্রিজ যা দেখলে মনে হয় কত সুন্দর হতে পারে বিংশ শতাব্দীর প্রথম ও দেশের বৃহত্তম রেল সেতু। এছাড়াও এখানকার রেলওয়ে কলোনির সুদৃশ্য ভবন আর রেলওয়ে অফিস।
সে রুপসী পদ্মা আর ইতিহাসের নিদর্শন হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দেখতে পাকশীর বুকে গিয়েছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী। ঘুরতে যাওয়ার গল্প নিয়ে কথা হয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী জয়শ্রী রাণী সরকারের সাথে তিনি বলেন, বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর এই প্রথমবার বন্ধুদের সাথে ঘুরতে আসা। সত্যিই অসম্ভব ভালো লাগছে, যেন হারিয়ে গেছি পাকশীর সবুজের সমারোহে।
তিনি আরো বলেন, আগের দিন বিভাগের বন্ধুদের সাথে ঠিক করি কোথায় যাওয়া যায়। তারপর ঠিক হল এই পাকশী। পরদিন ভোরের আলো ঠিকরে পরার আগেই আমরা ২৮ জন বন্ধু মিলিত হয় রাজশাহী রেল স্টেশনে। আর তারপর তো স্টেশনে সেলফির মহড়া আর ফেসবুকের হোমপেজে ফটো শেয়ার। আর ঘড়ির কাটা দেখে ট্রেনের অপেক্ষা।
এর আগে থেকেই আমরা মনস্থির করি লোকাল ট্রেনে যাবো। কারণটা জানতে চাইলে বলেন, আসলে একটু মাতিয়ে আড্ডা দেওয়ার তাগিদেই এই লোকাল ট্রেনে যাওয়া। কথার ফুরসতই শেষ হচ্ছে না তার। এবার যেন তার গলাটা ধরে এল।
একটু দূরেই ফরিদ আহমেদ, কথার ফাঁকে তিনি বলেন, এখানে আসার আগের দিন রাতে ৮ জন বন্ধু মোবাইলে ফোনে সর্তক করে দিয়েছিল। কারণ তারা জানত আমি তো অলস কিছিমের মানুষ। এরপর ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘড়ির কাটা নিয়মিত ৮টা ছাড়িয়ে গেছে। ইশ! আজও একসাথে যাওয়া হলো না। তারপর বাস, অটো আর ভ্যানযোগে পাকশীর বুকে আসি। সেখানে বন্ধুদের আমার জন্য অপেক্ষা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
এবার তার ভ্রমণের বন্দনা বললেন, এক বছরের ক্যাম্পাস লাইফে সেরা মূহূর্ত আজ আমার। আজ প্রথম মনে হচ্ছে আমি যেন নিজ পরিবারের সাথে। তাই এমন পরিবারের সাথে যুক্ত হতে না পারলে কখনই জীবনে এমন স্মৃতির অংশীদার হতে পারতাম না। সারাদিন আড্ডা, দলবেঁধে গান, পদ্মার জলে গোসল আর নৌকা ভ্রমণ কখনও ভুলতে পারবো না। আর কমেন্ট পর্ব আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ দিতেও র্কাপণ্য করলেন না আয়োজক বন্ধুদের। সবশেষে বিষাদ কণ্ঠে বললেন, এখন সময় নীড়ে ফেরার। তারপরও মনে থাকবে এই ক্ষণিকের মিলনমেলা আর জলবিলাসের খন্ডচিত্র।
সেদিনই গণযোগাযাগ পরিবারের ২৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও এসেছিলেন এই পাকশীর পদ্মাতে। কথা হয়, শান্ত চেহারা আর চোখে চশমা পড়া একজন আলী হুসাইন মিঠুর সাথে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে প্রাত্যহিক ক্লাস আর সাংবাদিকতা করার কারণে, সবসময় সুযোগ মেলে না বাইরে ঘুরতে যাওয়ার। তারপরও আসতে পারায় অনেক ভালো লাগছে। আর তিনি তো রীতিমত আনন্দে আত্মহারা কারণ তার বিভাগেরই ছোট ভাই বোনদের সাথে এক হতে পেরেছে। এ যেন তার কাছে মেঘ না চাইতে জল পাওয়া।
এবার ২৪ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ট্রেনে করে পাকশীতে নেমেই প্রথমে হাটতে থাকি হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচ দিয়ে আর অবলোকন করি কত সুন্দর শতাব্দীর এই নির্দশনটি । আমরা যখন নৌকায় করে পদ্মার ওপার ছুয়েঁ লালন শাহ্ সেতুর স্প্যানের উপর নামি তখন আপনা আপনি কখন যে দু’হাত ছড়িয়ে পাখির মতো উড়ছি নিজেই জানি না। আসলে পাকশী যাওয়ার পথে ট্রেনের মধ্যে যে মজা করেছি এবং আসার সময় দলবেঁধে গলা ছেড়ে গানে গানে যে শব্দ খেলায় মেতেছিলাম তা যেমন ফোনের গ্যালারীতে থাকবে তেমনি মনের গ্যালারিতে চির অম্লান থাকবে। ভালোবাসি এমসিজে পরিবারকে।
পদ্মার জলে গোসল করছিলেন ইমরান, সাঈদ, মইনুল। কথা হয়, ইমরানের সাথে তিনি বলেন, গোসল করতে নেমে ইতিহাসের অংশ পাকশীর স্প্যান ছুয়েঁ দেখেছি। ধন্য আমি, এত কাছ থেকে কালের ঐতিহ্যকে স্পর্শ করতে পারায়।
দিনশেষে গোধূলী বিকালে এই সকল তরুণ-তরুণীরা ভিড় জমিয়েছে পাকশী রেল স্টেশনে। সেখানেও বাদ নেই তাদের গলা ছেড়ে গান করা। মুখরিত স্টেশনের চারপাশের পরিবেশ আর সেখানকার আকাশ বাতাস। আর ট্রেনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে সকলে কারণ ফিরতে তো হবেই সময়ের নিয়ন্ত্রিত জীবনে।
সানবিডি/ঢাকা/রাআ