শাশুড়ির ছোড়া আগুনে মারা গেলেন তাহমিনা

আপডেট: ২০১৬-০২-২৯ ১৬:০০:০১


Tahminaযৌতুকের বলি হলেন আরো এক গৃহবধূ। শাশুড়ির ছোড়া আগুনে দগ্ধ হয়ে তিনদিন জীবনযুদ্ধের পর অবশেষে পরাজিত হলেন। সোমবার ভোর রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর থেকে ঢাকায় নেয়ার পথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন অগ্নিদগ্ধ পুত্রবধূ তাহমিনা।

অগ্নিদগ্ধ তাহমিনার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রংপুরের পীরগাছা থানা পুলিশ।

রংপুরে পীরগাছা উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের দাদোন গ্রামে বৃহস্পতিবার রাতে যৌতুক ও পারিবারিক কলহের জের ধরে শাশুড়ির ছোড়া কুপির আগুনে অগ্নিদগ্ধ হয় তহমিনা খাতুন (২৭)। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই গৃহবধূকে প্রথমে পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে শুক্রবার সকালে রংপুর মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এ ঘটনায় পুলিশ তাহমিনার স্বামী আব্দুল মান্নানকে গ্রেপ্তার করেছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের ইনচার্জ ডা. মারুফুল ইসলাম মারুফ জানান,  তাহমিনার শরীরের ৩৫ ভাগ অংশ পুড়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি তাকে সেভ করার জন্য। কিন্তু রোগীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় সোমবার তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু যাত্রাপথেই মারা গেছেন তাহমিনা।

এদিকে, পুলিশ ও তহমিনার মা জেবুন্নেছা বেগম জানান, পীরগাছা উপজেলার পূর্ব চন্ডিপুর গ্রামের তফিল উদ্দিনের মেয়ে তহমিনার সঙ্গে দাদোন গ্রামের মনতে আলীর ছেলে মান্নানের ১২ বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি বিভিন্নভাবে তহমিনার উপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। এবং যৌতুকের জন্য নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করতেন।

দগ্ধ গৃহবধূর খালা রহিমা খাতুন জানান, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুর-শাশুড়ি আর স্বামী মিলে তাহমিনাকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকেন। এ নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার তাহমিনার শ্বশুর মমতেজার রহমান ও শাশুড়ি আলেমার সঙ্গে ঝগড়া হয়। পরে সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আবারো সেখানে শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী-ননদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে শাশুড়ি আলেমা বেগম তার হাতে থাকা জলন্ত কুপি ছুড়ে মারলে সেটি গিয়ে পুত্রবধূ তাহমিনার গায়ে পড়ে আগুন ধরে যায়। কেরোসিনের আগুনে মাটিতে পড়ে তাহমিনা ছটপট করলেও তাকে কেউ উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেননি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

তহমিনার মামা আব্দুস সামাদ জানান, বিয়ের পর থেকেই তহমিনার উপর বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে শ্বশুর বাড়ির লোকজন। দুই মেয়ে মুন্নী (১০) ও মুক্তার (৮) কথা ভেবে সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করেছিলেন তহমিনা। এতেও শেষ রক্ষা হলো না তার।

এদিকে, রংপুর এএসপি (বি সার্কেল) সাইফুর রহমান সাইফ জানান, এ ঘটনায় পীরগাছা থানায় একটি মামলা হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ গৃহধূর স্বামী আবদুল মান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সানবিডি/ঢাকা/এসএস