দিনাজপুরে একেকটি চায়না থ্রি লিচু ২৬ টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২২-০৬-১৩ ১৭:২৫:২৮
লিচুর রাজধানীখ্যাত দিনাজপুরে স্মরণকালের সেরা দামে বিক্রি দামে বিক্রি হচ্ছে লিচু। এর মধ্যে চায়না থ্রি জাতের একেকটি লিচু বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২৬ টাকা। পাশাপাশি প্রতিটি বেদেনা জাতের লিচু বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৩ টাকা।
এ বিষয়ে বাগানি ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এই দুই জাতের লিচু দেখতে অনেকটা আপেল আকৃতির। গায়ে কাঁঠালের মতো আবরণ, তবে মসৃণ। বিচি একেবারেই ছোট। অন্যান্য লিচুর চেয়ে স্বাদ ভিন্ন। বিশেষ করে চায়না থ্রি জাতের লিচু গাছের সংখ্যা কম। প্রতিটি বাগানে একটি গাছের দেখা মেলে। মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী না হলে এই গাছ বাঁচে না। খুব কম পাওয়া যায় বলে চায়না থ্রি জাতের লিচুর দাম সবসময় বেশি থাকে।
চায়না থ্রি জাতের লিচুর দাম বেশি হওয়ার বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর দিনাজপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ প্রদীপ কুমার গুহ বলেন, ‘চায়না থ্রি জাতের লিচু সব লিচু থেকে আলাদা। দেখতে আপেল আকৃতির। অন্যান্য লিচুর ফলন বেশি হলেও এই লিচুর ফলন কম। গায়ে কাঁঠালের মতো আবরণ, তবে মসৃণ। বিচি একেবারেই ছোট এবং স্বাদ ভিন্ন। এই লিচুর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো শুধুমাত্র দিনাজপুরেই ভালো হয়। আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণের ওপর নির্ভর করে বেড়ে ওঠে গাছ। অন্যান্য জেলায় এই লিচুর আবাদ আছে। কিন্তু সেখানকার ফলন, স্বাদ ও মিষ্টতা দিনাজপুরের মতো নয়। ফলে চাহিদা আছে দেশজুড়ে। যার কারণে দাম বেশি। অন্যান্য বছর ১৬ থেকে ১৮ টাকা বিক্রি হলেও এবার সর্বোচ্চ ২৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে।’
বাগানি ও কৃষকরা বলছেন, স্মরণকালের সেরা দামে বিক্রি হচ্ছে লিচু। লিচুর মধ্যে সবচেয়ে ভালো দুটি জাত চায়না থ্রি ও বেদেনা। প্রতিটি বেদেনা লিচুর দাম আট থেকে ১৩ টাকা পর্যন্ত পাচ্ছেন কৃষকরা। চায়না থ্রি প্রতিটি লিচুর দাম পাচ্ছেন ১৫ থেকে ২৬ টাকা পর্যন্ত। এর আগে এই দুই জাতের লিচুর সর্বোচ্চ দাম ছিল ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত।
দিনাজপুরের ১৩ উপজেলায় কমবেশি লিচু উৎপাদন হয়েছে। তবে সদর উপজেলার মাসিমপুর ও বিরল উপজেলার মাধববাটী এলাকার লিচুর চাহিদা ও দাম বেশি। মাটির গুণাগুণ লিচু চাষের উপযোগী হওয়ায় এই দুই এলাকার লিচু বড় হয়। স্বাদও বেশি।
বর্তমানে দিনাজপুরে লিচুর বাজার জমজমাট। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে ব্যস্ত জেলার সবচেয়ে বড় লিচুর বাজার দিনাজপুরের গোড়-এ শহীদ বড় ময়দান। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই বাজারে বেচাকেনা চলে।
এখানকার লিচু জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সাতক্ষীরা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বগুড়া ও সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় যায়। এসব লিচু কেনার জন্য ওসব জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন এই বাজারে আসেন।
দিনাজপুরের গোড়-এ শহীদ বড় ময়দান লিচু বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘বর্তমানে বাজারে বোম্বাই লিচু প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। গোলাপি লিচু বিক্রি হচ্ছে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা, লংগদানা লিচু বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা, বেদেনা লিচু বিক্রি হচ্ছে আট থেকে ১৩ হাজার টাকা, হাড়িয়া লিচু আট থেকে ১২ হাজার এবং চায়না থ্রি ১৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে লিচুর বাজার চড়া। প্রথম দিকে বাজারে এত দাম ছিল না। চাহিদা বেশি এবং জোগান কম হওয়ায় দাম বেড়ে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দিনাজপুরে পাঁচ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে লিচু বাগান আছে পাঁচ হাজার ৪১৮টি। এর মধ্যে বোম্বাই লিচু তিন হাজার ১৭০, মাদ্রাজি এক হাজার ১৬৬, চায়না থ্রি ৭০২ দশমিক ৫ হেক্টর।
কৃষিবিদ প্রদীপ কুমার গুহ বলেন, ‘গত বছর দিনাজপুরে লিচু বিক্রি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার। এবার দাম বেশি চাহিদাও বেশি। তাই সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’
সানবিডি/এনজে