খেলাধুলা মননজগতে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটায়!

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২২-০৭-২২ ২২:৪২:২৫


বর্তমানে বাংলাদেশের যুবসমাজ ও ছাত্রসমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মাদকাসক্তি, জুয়াখেলা, কিশোর গ্যাং, ইভটিজিং, ফেসবুকে আসক্তি ও বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে তারা তাদের ব্যক্তিগত জীবন ধ্বংসের পাশাপাশি পারিবারিক জীবনকেও মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করছে। অনেক ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে এখন পড়াশুনায় ব্যাপক উদাসীনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারা এখন নেতিবাচক বিষয়গুলো দ্বারা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। সঠিক দিক-নির্দেশনার অভাবে কিংবা নিজেদের ভুল সিদ্ধান্তে তারা তাদের শিক্ষাজীবন কিংবা স্বাভাবিক জীবন ধ্বংস করে ভবিষ্যৎ জীবনকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অনেকেই ক্ষতিকর জিনিসের প্রভাবে তার জীবনে কী ক্ষতি হতে পারে, কতটা ক্ষতি হতে পারে, কোনো উপকার বা লাভ আছে কি না ইত্যাদি না বুঝেই আসক্ত হয়ে পড়ছে!

অধিকাংশ অভিভাবকই আজকাল তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই ছেলেমেয়েরা যা করছে তাই মেনে নিতে হচ্ছে। অন্যায় আবদার রক্ষা করতে হচ্ছে। পড়াশুনায় উদাসীনতার জন্যও শাসন করা যায় না। তারা এখন অভিভাবক কিংবা মুরব্বিদের কথামতো চলতে চায় না। তাদের মাঝে সামাজিক মূল্যবোধের বড়ই ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষকদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা করা, তাদের দিক-নির্দেশনা মেনে চলা কিংবা জীবন গঠনে তাদের পরামর্শ গ্রহণকে এখন তারা যেন পাপ মনে করে। তারা নিজেদের মর্জিমতো চলতেই পছন্দ করে। এর ফলে এসব ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনায় ভালো করতে পারে না এবং সুশিক্ষিত হওয়া কিংবা উন্নত জীবন গঠন তাদের দ্বারা সম্ভব হয় না।

এরকম চলতে থাকলে এজাতির ভবিষ্যৎ বিপর্যয় অনিবার্য৷ মাদক ও অন্যান্য খারাপ বিষয়গুলোর করাল গ্রাস থেকে আমাদের যুব সমাজ ও ছাত্র-ছাত্রীদেরকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য অভিভাবক, শিক্ষক ও সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি তাদের জন্য নিয়মিত খেলাধুলা ও সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা নিশ্চিত করা অতীব জরুরি। নিয়মিত খেলাধুলার মাধ্যমে একটি শিশু বা কিশোরের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ তরান্বিত হয় এবং খেলাধুলার সাথে জড়িত থাকার ফলে তারা জীবনের জন্য ক্ষতিকর জিনিস, অসামাজিক কার্যকলাপ ও অপরাধজগত থেকে মুক্ত থাকতে পারে৷ ফলে জীবনের প্রতিটি ধাপে তারা স্বাভাবিক ভাবে এগিয়ে যেতে পারে এবং সাফল্য ও উন্নতি লাভ করতে পারে।

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, আমরা যেসব বন্ধু বা সহপাঠী পড়াশুনার পাশাপাশি নিয়মিত খেলাধুলা করেছি আমরা দেখেছি, আমাদের মনজগতে এর ইতিবাচক প্রভাব কতটা পড়েছে। পড়াশুনার কারণে অনেক সময় একগেঁয়েমি তৈরি হলে আমরা খেলাধুলা করতাম। খেলাধুলার পর আমরা সব সময় অনেক বেশি সতেজ ও হালকা অনুভব করতাম। শরীর মন একেবারেই চাঙ্গা হয়ে যেতো। খেলাধুলার পর পড়াশুনায় আবার পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারতাম। তখনকার সময়ে আমাদের মা-বাবারা খেলাধুলার উপকারিতা ও ইতিবাচক দিকগুলো পুরোপুরি না বুঝলেও বর্তমান সময়ের মা-বাবারা ঠিকই বুঝেন এবং ছেলে-মেয়েদেরকে খেলাধুলার সুযোগও করে দিচ্ছেন। তখন আমাদের মা-বাবারা মনে করতেন খেলাধুলায় জড়িয়ে পড়ে আমরা পড়াশুনা ঠিকভাবে করছি না। সময় নষ্ট করছি। যদিও আমাদের সময়ে শিক্ষা জীবন ও ভবিষ্যৎ ধ্বংসের জন্য এতগুলো রাস্তা খোলা ছিলো না। তাই আমরা অনেক কিছুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পেরেছি। কিন্তু বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মা-বাবা ছেলে-মেয়েদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে নিয়মিত যুদ্ধ করছেন। অজ্ঞাত কোনো কারণে ছেলে-মেয়েরা খারাপ বিষয়গুলোর প্রতি বেশি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। বেশি সময় দিচ্ছে। জীবন গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময় না দিয়ে জীবন ধ্বংস করায় ব্যাপক সময় দিচ্ছে!

এই অবস্থা থেকে যুবসমাজ ও ছাত্রসমাজকে বের করে আনতে হবে। তাদেরকে পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলায় উৎসাহিত করতে হবে। খেলাধুলার মাধ্যমে তারা খারাপ বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকতে পারবে। কারণ একথা নিশ্চয়ই সবাই জানে যে, খেলাধুলা করার সময় একজন খেলোয়াড়ের মনে দুনিয়ার অন্য কোনো চিন্তা কাজ করে না। খেলাকে কেন্দ্র করেই তার সমস্ত চিন্তা-পরিকল্পনা। সকল টেনশন, হতাশা, ব্যর্থতা, কষ্ট খেলার মাঠেই সমাহিত হয়ে যায়। এতে করে তার মন ও শরীর যেন পুনরুজ্জীবিত হয় এবং সে তার মূল কাজে মনোযোগী হতে পারে। এছাড়া নিয়মিত খেলাধুলার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির ব্যাপক শারীরিক চর্চা হয়ে যায়। ফিটনেস ভালো থাকে। শরীর সুস্থ থাকে। রোগব্যাধি সহজে বাসা বাঁধতে পারে না। দীর্ঘজীবী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জীবনে সকল ক্ষেত্রে সফল হওয়ার চান্স অনেক বেড়ে যায়। তাছাড়া খেলাধুলার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সহমর্মিতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, আন্তরিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ, বন্ধুত্ব ও ঐক্য তৈরি হয়। নিয়ম-শৃঙখলা মানতে শেখায়। খেলাধুলা মানুষকে ব্যাপক ধৈর্যশীল করে তোলে ও উগ্র মেজাজ পরিহার করার কঠিন শিক্ষা দেয়। খেলাধুলা মানুষকে ব্যাপক আত্মবিশ্বাসী, সাহসী, পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল হতে শেখায়। তদুপরি খেলাধুলা মানুষকে জীবনের সর্বস্তরে বিজয়ী হওয়ার উত্তম কৌশল শিক্ষা দেয়।

সুতরাং খেলাধুলার উপকারিতা ও উত্তম শিক্ষাগুলো সকলের উপলব্ধি করা উচিত এবং সেভাবে আমাদের যুবসমাজ ও ছাত্রসমাজকে নিয়ে পরিকল্পনা করা উচিত। তাহলে আমরা বর্তমান সময়ের অতি খারাপ ও ভয়াবহ জিনিসগুলো থেকে তাদেরকে বিরত রাখতে পারবো। বর্তমান প্রজন্মকে সঠিকভাবে পথ দেখাতে পারলে, সঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারলেই সুশিক্ষিত, সচেতন ও উন্নত-সমৃদ্ধ জাতি গঠনের মাধ্যমে আগামীর উন্নত বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমাদের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হবে।

লেখক: শরীফ হেলালী
উপজেলা নির্বাহী অফিসার
লোহাগড়া, চট্টগ্রাম।

এএ