২০ শতাংশ পোশাক পণ্যের আদেশ কমেছে ইউরোপে

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২২-০৭-২৫ ১৪:৫৭:১২


দেশের অর্থনীতির সব সূচক যেখানে চরম মন্দা সেখানে একমাত্র রফতানি খাতে কিছুটা ইতিবাচক ধারা রয়েছে বিগত কয়েক মাস ধরে। তবে এখন এ খাতেও বড় ধাক্কা লাগছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আদেশ কমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। এর প্রভাবে এরই মধ্যে ইউরোপের বাজারে ২০ শতাংশ পোশাক পণ্যের আদেশ কমে গেছে। বাংলাদেশে মোট পোশাক রফতানির ৫৬ শতাংশ যায় ইউরোপে। শুধু তাই নয়, একক বৃহৎ বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে বিশ্বের অন্যান্য এলাকা থেকেও পোশাক রফতানি আদেশ কমে আসছে। এতে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা।

এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সার্বিকভাবে একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতির দিকে যেতে হচ্ছে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের। ইতোমধ্যে পশ্চিমা ভোক্তারা তাদের ব্যক্তিগত খরচেও বেশি হিসেবি হয়ে উঠেছেন। যে কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে ওয়ার্ক অর্ডারের সংখ্যা ২০ শতাংশের মতো কমেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আন্তর্জাতিক খুচরা পোশাক বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত যে পরিমাণ অর্ডার দিয়েছিল, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তারচেয়ে ২০ শতাংশ কম অর্ডার দিয়েছে। সেখানকার ক্রেতাদের কাছে আগের মতো পণ্য বিক্রি করতে পারছে না খুচরা বিক্রেতারা। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভোক্তারা আগের চেয়ে বেশি দামে জ্বালানি ও খাবার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে তারা পোশাকের বাজেট কমিয়েছেন।

তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে গ্যাসের দাম প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। জ্বালানি ও খাদ্যে খরচ বাড়ায় বাংলাদেশের মতো তৈরি পোশাক সরবরাহকারী দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফারুক হাসান উল্লেখ করেন, আসন্ন বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) কমেছে ২০ শতাংশের মতো।

কার্যাদেশ কমে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আসন্ন বসন্ত ও গ্রীষ্মে ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন ৩০ শতাংশ। চার মাস আগের তুলনায় এনকোয়ারি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এক মাস পরও একই পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে।

এদিকে পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রফতানি করে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত মে মাসে এই ধারা অব্যাহত থাকেনি। এপ্রিলের ৩ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার থেকে মে মাসে তৈরি পোশাকের চালানের পরিমাণ কমে ৩ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার হয়।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের বেশ ভাবাচ্ছে। এরই মধ্যে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। জাহাজ ভাড়া বেড়েছে। কাঁচামালের দামও বেড়েছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইউরোপে এবার ২৫ বছরের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। আমেরিকায় ৪০ বছরের সর্বোচ্চ। এ ছাড়া জ্বালানি তেল থেকে শুরু করে সব কিছুর দামই ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিনই প্রোডাকশন কস্ট বাড়ছে। দুদিক দিয়ে বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরে বিপদ লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রথমত, গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের পোশাক তৈরিতে খরচ বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, চাহিদা কমেছে।

এনজে