আশুরার ফজিলত ও আমল

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২২-০৮-০৮ ১৩:২৫:১৮


মহরম মাসের দশ তারিখকে বলা হয় ‘আশুরা।’ কারণ, আরবি ‘আশারা’ থেকে এর উৎকলণ। যার অর্থ হচ্ছে দশ। তাই এ মাসের দশ তারিখকে পবিত্র আশুরা বলে অবহিত করা হয়।

আশুরাতেই নভোমণ্ডলে সৃষ্টিকুলের প্রাথমিক বিভাজনপ্রক্রিয়ার সূচনা হয়। হজরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টি, স্থিতি, উত্থান ও অবনমন—সব ঘটনাই ঘটেছিল আশুরায়। হজরত নুহ (আ.)-এর নৌযানের যাত্রারম্ভ ও বন্যাবস্থার সমাপ্তি ছিল আশুরাকেন্দ্রিক। হজরত মুসা আলাইহিস সাল্লামের সমুদ্রপথের ধাবমান রওনা ও এর তাওয়াক্কুল যাত্রায় যে সময় বেছে নেওয়া হয়েছিল, তা ছিল আশুরা। এ ধারাবাহিকতায় আল্লাহর রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনার কথা আশুরার সময়ে বা আশুরাকেন্দ্রিক হতে পারে বলে আশা ও আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। এ সময় এলেই তিনি বিনম্র থাকতেন, রোজা রাখতেন। (তাফসিরে তাবারি, ইবনে জারির)।

যুগে যুগে আশুরার এই দিবসে মুসলমানরা ইমাম হুসাইন (আ.)এর কষ্টের কথাকে স্মরণ, দোয়া ও মিলাদ মাফলির আয়োজনের মাধ্যমে দিনটিকে উৎযাপিত করে থাকেন। কোরআন কারিমে রয়েছে, ‘আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বারো, তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত।’ (সুরা-৯, তাওবা, আয়াত: ৩৬)। হাদিস শরিফে মহররমকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর মাস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত সুরা তাওবার ৩৬ নম্বর আয়াতে ‘অতি সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ চার মাস’ বলতে জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব—এই চার মাসকে বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি)।

আশুরার দিন রোজা রাখা সুন্নাত। আশুরার রোজা সব নবীর আমলেই ছিল। নবী করিম (সা.) মক্কায় থাকতেও আশুরার রোজা পালন করতেন। হিজরতের পর মদিনায় এসে রাসুলুল্লাহ (সা.) দেখতে পেলেন, ইহুদিরাও এই দিনে রোজা রাখছে। প্রিয় নবী (সা.) তাদের রোজার কারণ জানতে পারলেন, এদিনে মুসা (আ.) সিনাই পাহাড়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত লাভ করেন। এদিনেই তিনি বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কয়েদখানা থেকে উদ্ধার করেন এবং এদিনেই তিনি বনি ইসরাইলদের নিয়ে লোহিত সাগর অতিক্রম করেন। আর ফেরাউন সেই সাগরে ডুবে মারা যায়। তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য ইহুদিরা এই দিন রোজা রাখে।

মহানবী (সা.) বললেন, মুসা (আ.)-এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তোমাদের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ। অতঃপর তিনি মহররমের ৯-১০ অথবা ১০-১১ মিলিয়ে দুটি রোজা রাখতে বললেন, যাতে ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্য না হয়। দ্বিতীয় হিজরিতে রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হলে আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়। তবে রমজানের রোজা রাখার পর আশুরার রোজা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। এ মাসের নফল রোজা ও অন্যান্য ইবাদত রমজান মাস ব্যতীত অন্য যেকোনো মাস অপেক্ষা অধিক উত্তম। (মুসলিম ও আবুদাউদ)।

হজরত কাতাদা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, ‘আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী আল্লাহ তাআলা এর অছিলায় অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (তিরমিজি ও মুসনাদে আহমাদ)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রমজানের রোজার পর মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ, যেমন ফরজ নামাজের পর শেষ রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ সবচেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন।

উম্মুল মুমিনিন হজরত হাফসা (রা.) বলেন, রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারটি কাজ কখনো পরিত্যাগ করেননি। আশুরার রোজা, জিলহজের প্রথম দশকের রোজা, আইয়ামে বিদের রোজা তথা প্রতি মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখের রোজা এবং ফজর ওয়াক্তে ফরজের আগে দুই রাকাত সুন্নাত নামাজ।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিনে পরিবারের ব্যয় বৃদ্ধি করবে, ভালো খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করবে; আল্লাহ সারা বছর তার প্রাচুর্য বাড়িয়ে দেবেন।’ হজরত সুফিয়ান ছাওরি তাবিয়ি (রহ.) বলেন, ‘আমরা এটি পরীক্ষা করেছি এবং যথার্থতা পেয়েছি।’ (মিশকাত: ১৭০; ফয়জুল কালাম: ৫০১, পৃষ্ঠা ৩৪৯; বায়হাকি ও রাজিন)।

মহররম মাস সম্পর্কে সাধারণে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। যেমন এই মাসে বিয়েশাদি না করা, নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণ না করা, কোনো শুভ কাজ বা ভালো কাজের সূচনা না করা, গোশত না খাওয়া ও নিরামিষ আহার করা, পান না খাওয়া, নতুন কাপড় ও সুন্দর পোশাক পরিধান না করা, সাদা কাপড় বা কালো কাপড় তথা শোকের পোশাক পরা, সব ধরনের আনন্দ উৎসব পরিহার করা ইত্যাদি। এসবই কুসংস্কার। কোরআন ও হাদিসে এসবের কোনো ভিত্তি নেই। ইবাদত ও ইসলামি পর্বসমূহ কোরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে পালন করা বিধেয়, দলিল–প্রমাণহীন আমলে সুফল আশা করা যায় না। বরং এতে বহুবিধ ক্ষতির আশঙ্কা বিদ্যমান রয়েছে।

সানবিডি/এমআর