কমছে না ভেজালের দৌরাত্ম্যে অনিরাপদ খাদ্যে সয়লাব

আপডেট: ২০১৬-০৩-১৫ ১০:৪৭:২৬


Bazer 14দেশের সর্বত্রই ভেজালের দৌরাত্ম্যে বাড়ছে। পদে পদে লংঘিত হচ্ছে ভোক্তা অধিকার। অনিরাপদ খাদ্যে বাজার সয়লাব। একদিকে ক্রমশ কমছে পণ্যের মান। ছোট হচ্ছে আকার। অপরদিকে দামও দিতে হচ্ছে বেশি। এভাবে ঠকছে ক্রেতা ও ভোক্তা। মুনাফা লুটছে অসাধু ব্যবসায়ী, উৎপাদক ও মধ্যস্বত্বভোগী। কম নিয়ে এবং দামে বেশি দিয়েও নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যের নিশ্চয়তা মিলছে না। ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন হয়েছে। তা কার্যকরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

তবে এর কার্যক্রম এতটাই সংকোচিত যে, বছর চলে গেলেও আইন কার্যকরে ভোক্তাকে এতটুকু সচেতনও করা যায়নি। প্রতিষ্ঠানটিও কেবল নিয়ম রক্ষার কাজ করে যাচ্ছে। আবার বিদ্যমান আইনেও নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ কারণে ভোক্তা অধিকার লংঘনকারীদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা সম্ভব হচ্ছে না। উল্টো অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আইনের এক ধারায় দোষীদের সঙ্গে আপসরফার বিধান থাকায় এর স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

এরমধ্যেই আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশেও ঘটা করে ‘বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস’ পালিত হবে। বিশ্বব্যাপী ক্রেতা-ভোক্তা সংগঠনগুলোর আন্তর্জাতিক সংস্থা কনজ্যুমারস ইন্টারন্যাশনালের (সিআই) আহ্বানে ১৯৮৩ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘অ্যান্টিবায়েটিকযুক্ত খাদ্যকে না বলুন’।

দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। ভলান্টিয়ারি কনজ্যুমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটির (ভোক্তা) নির্বাহী পরিচালক খলিলুর রহমান বলেন, একজন ক্রেতার মৌলিক অধিকারের উন্নতি সাধন, বাজার ব্যবস্থার অপব্যবহার দূর করা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোই দিবসটি পালনের লক্ষ্য।

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম জানান, সরকার গতবছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন’ কার্যকর করেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং ‘বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত’ কার্যক্রম পরিচালনায় কাজ করছে। তিনি জানান, বর্তমান বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে সরাসরি মামলাও করা যাবে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এখনও খাদ্যপণ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক দিয়ে খাবারকে বিষে পরিণত করছে অপরিণামদর্শী অসাধু গোষ্ঠী। এতে লংঘিত হচ্ছে ভোক্তা স্বার্থ। বিপন্ন হচ্ছে মানবজীবন। বিকলাঙ্গের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে আগামী প্রজন্মকে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জানান, খাদ্য বিষমুক্ত করতে সরকার ফরমালিন আইন করেছে। এতে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এর অতিরিক্ত সর্বোচ্চ ২০ লাখ ও সর্বনিম্ন পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। তদন্ত, তল্লাশি, আটক, বাজেয়াপ্তকরণ ও গ্রেফতারের ক্ষমতাসহ অন্য বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধানও রয়েছে এ আইনে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আবুল হোসেন মিয়া বলেন, বিদ্যমান আইনের অনেক ধারা-উপধারায় সংযোজন ও সংশোধন আসছে। এগুলো যদি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করানো যায় তাহলে ভোক্তা অধিকার আইন আরও কার্যকরী হবে। কিভাবে এ আইনটি আরও ভোক্তাবান্ধব করা যায় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়েছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দেশের ভোক্তারা খুবই অসহায়। এ অসহায়ত্ব ঘোচাতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ সরকারি সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম, আইন এবং শাস্তি আরও ব্যাপক ও গণমুখী হওয়া দরকার। একইসঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তর গবেষণা, মাঠপর্যায়ের জরিপ, বাস্তব অবস্থা, ভোক্তার স্বার্থবিনাশী সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা সম্ভাব্য প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করার উদ্যোগ থাকতে হবে।

মনে রাখা দরকার ভোক্তার স্বার্থরক্ষার গুরুদায়িত্বটি সরকারের হাতে। শুধু নিয়মরক্ষার কাজ করলেই হবে না। দিবস পালনের প্রস্তুতি : ক্যাব ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সেমিনারের আয়োজন করেছে। এছাড়া লিফলেট বিতরণ, পোস্টার সাঁটানো, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, টিভি চ্যানেলে টকশোর আয়োজন রয়েছে।