‘স্টপ পেমেন্ট’ বার্তা অগ্রাহ্য করে চুরির টাকা হস্তান্তর

প্রকাশ: ২০১৬-০৩-১৬ ১০:৫৫:৫৮


বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ আ্যকাউন্ট থেকে চুরি যাওয়া টাকা হস্তান্তর বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নিউইয়র্ক শাখা থেকে বার্তা পাRCBCঠালেও গ্রাহ্য করেনি ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি)। এছাড়া রুদ্ধদ্বার বৈঠক ছাড়া কোনো তথ্য দিতে রাজি হচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও ওই শাখার শীর্ষ কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার রিজাল ব্যাংকের অ
বৈধ এ লেনদেন নিয়ে সিনেট কমিটির শুনানিতে এ তথ্য উঠে আসে।

গোপন সুইফট কোড ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলে নেয় জালিয়াত চক্র। ওই অর্থের ৮১ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয় ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের মাকাতি সিটির জুপিটার স্ট্রিট শাখায়।

একসাথে এতোগুলো অর্থ ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর হচ্ছে বুঝতে পেরে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় ফেডারেল ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে পেমেন্ট আটকানোর বার্তা পাঠানো হয়।

অবশ্য চীনা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ওইদিন ফিলিপাইনে ব্যাংক ছুটি ছিল। তবে ওই সময় ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট শাখার সিসিটিভি ক্যামেরা অচল ছিল বলেও জানা যাচ্ছে।

শুনানিতে উপস্থিত ফিলিপাইনের ধনী ও প্রভাবশালী আলফনসো ইয়োশেঙ্কো পরিবারের মালিকানাধীন রিজাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও সিইও লরেনজো তানকে উদ্দেশ করে সিনেট কমিটির সদস্য তেয়োফিস্তো গুংগোনা বলেন, ‘স্টপ পেমেন্ট’ বার্তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায় ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে। পরদিন ৯ ফেব্রুয়ারি ব্যাংক খোলার দিন সকালে এসেই ওই বার্তা দেখা উচিত ছিল। কিন্তু পেমেন্ট বন্ধ না করে সন্দেহজনক ওই অর্থ পুরোটাই তুলে নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হলো।

গুংগোনা আরো বলেন, অ্যান্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিল আদালতে যে কাগজপত্র জমা দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, আরসিবিসি কর্তৃপক্ষ একইদিন অর্থাৎ ৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও ‘স্টপ পেমেন্ট’ অনুরোধ পেয়ে তা মেনেছে। কিন্তু সেটা দিনের শেষে হওয়ায় লাভের কিছু হয়নি।

গুংগোনা আরসিবিসি প্রেসিডেন্টকে প্রশ্ন করেন, দিনের শেষের অনুরোধ রাখতে পারলে দিনের শুরুরটা কেন রাখা হলো না? এর কোনো জবাব দেননি আরসিবিসি প্রেসিডেন্ট লরেনজো তান। তিনি বলেছেন, ব্যাংকের লেনদেনে প্রচলিত গোপনীয়তা রক্ষার আইন মেনে উন্মুক্ত শুনানিতে টাকা উত্তোলনে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না। ‘স্টপ পেমেন্ট’ অনুসরণে ব্যাংকের শাখা ম্যানেজারের দায়িত্ব সম্পর্কে কিছু ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি। পরে একজন শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব ও ক্ষমতা সম্পর্কে ব্যাংক আইনে বিভিন্ন ধারা সিনেট কমিটিকে অবহিত করেন।

আরসিবিসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথোপকথোনের ফাঁকে গুংগোনা রিজাল ব্যাংকের মাকাতি সিটির জুপিটার স্ট্রিটের শাখা ব্যবস্থাপক মাইয়া সানতোস দেগুইতার কাছে সিনেট কমিটির প্রেসিডেন্ট জানতে চান যে, জালিয়াতির মাধ্যমে এ অর্থ পাঠানোর বিষয়ে সহযোগী বিদেশি ব্যাংক (রাউটিং ব্যাংক) থেকে এ বার্তা পাওয়ার পরও কীভাবে তা ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থার মধ্যে ঢুকলো?

আরসিবিসি শাখা ম্যানেজার দেগুইতার কাছে সিনেট কমিটি সদস্য গুংগোনা আরো জানতে চান, ৯ ফেব্রুয়ারি ছিল মঙ্গলবার। ওইদিন ব্যাংক খোলা ছিল। সেদিন সকালেও বিদেশ থেকে আসা সন্দেহজনক ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যাংকে গচ্ছিত ছিল। এতোদিনে ওই পুরো টাকা তুলে নেয়া হলো। ওইদিন আপনার কাছে ‘স্টপ পেমেন্ট’ অনুরোধ আসেনি?

প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দেগুইতাও ব্যাংক সিক্রেসি আইনের কথা বলেন, ‘আমি সব প্রশ্নের উত্তর দেবো, তবে তা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে।’

রিজাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও সংশ্লিষ্ট শাখার ম্যানেজারের বক্তব্যে হতাশ হয়ে সিনেটর গুংগোনা তখন বলেন, আসল কথা হচ্ছে সহযোগী ব্যাংক থেকে বিপুল অংকের এ টাকা উত্তোলন বন্ধের অনুরোধ রাখা হয়নি। একইসঙ্গে এ টাকা যাদের দেয়া হয়েছে তারা সবাই অপরিচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, সব টাকা ৯ ফেব্রুয়ারি তুলে নিতে সুয়োগ করে দেয়া হয়েছে। অথচ ওইদিন ব্যাংকের কাছে ‘স্টপ পেমেন্ট’ অনুরোধ এসেছিল। যদি সহযোগী বিদেশি ওই ব্যাংকের ‘স্টপ পেমেন্ট’ বার্তা মানা হতো তাহলে ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কমপক্ষে ৫৮ মিলিয়ন ডলার রক্ষা পেতো।

শুনানিতে অ্যান্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিলের কর্মকর্তারা বলেন, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সহায়তা চেয়ে বার্তা পেয়েছেন ১১ ফেব্রুয়ারি। ১৬ ফেব্রুয়ারি ওই ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা ম্যানিলায় এসে পৌঁছান। তারপর এএমএলসি ব্যাপক তদন্ত শুরু করে।

ঘটনার প্রায় ২০ দিন পর ইতিহাসে ভয়াবহ এ ব্যাংক জালিয়াতির ওপর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে ম্যানিলাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দ্য ইনকোয়ারার। শুরু হয় তোলপাড়। বিশ্ব গণমাধ্যমেও এ জালিয়াতির ঘটনা বেশ গুরুত্ব পায়।

তথ্যসূত্র : দ্য ইনকোয়ারার।