দুঃখের রজনী শেষ হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ: ২০১৫-১০-১৫ ১৫:৩০:৪৮


shekh-hasinaনতুন নাগরিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনাদের দুঃখের রজনী শেষ হয়েছে। নতুন সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে আলোর পথে যাত্রা শুরু হয়েছে। এ যাত্রা অব্যহত থাকবে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ারছড়ায় প্রস্তাবিত শেখ হাসিনা বহুমুখী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এক সুধীসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে আর ছিটমহল বলে কিছু থাকবে না। সব ছিটমহল রাষ্ট্রের অংশ। আপনাদের আর কেউ ছিটমহলবাসী বলবে না। আপনারা বাংলাদেশের অংশ। এখানে শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান সব ধরনের সুবিধা দেয়া হবে।

আমরা একগুচ্ছ সদ্য প্রস্ফুটিত ফুল পেয়েছি। আপনারা আমাদেরই লোক। অনেকদিন আপনারা বঞ্চিত ছিলেন, এখন আর ভাববেন না আপনাদের কেউ নেই। আপনাদের আর কেউ ছিটমহলবাসী বলবে না

শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় নিয়ে কেউ আলোচনা করেনি। আওয়ামী লীগের আগে আরো অনেক সরকার ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু আওযামী লীগ এ নিয়ে আলোচনা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি। এরপর সরকার ছিটমহল সমস্যার সমাধানের পদক্ষেপ নেয়। ওই সময় ভারতের কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় ছিল। তাদের পর মোদি সরকার ক্ষমতায় আসে। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর আমরা আবার আলাপ আলোচনা শুরু করি।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদ্য বিলুপ্ত দাশিয়াছড়া ছিটমহলে সকাল ১১টায় পৌঁছান। এরপর সকাল ১১টা ১০ মিনিটে বিলুপ্ত ছিটমহলে বিদ্যুৎ উদ্বোধন করেন।

কুড়িগ্রাম, নীলফামারি ও পঞ্চগড় জেলার পাঁচটি উপজেলার (ফুলবাড়ি, দেবীগঞ্জ, বোদা, পঞ্চগড় ও ডিমলা) ২৫৬১টি পরিবার দীর্ঘ ৬৮ বছর অন্ধকারে থাকা সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলের মানুষগুলো বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হলেন। এছাড়া পাঁচটি পরিবারের মাঝে সোলার হোপ সিস্টেম বিতরণ করা হয়।

দাসিয়ারছড়া থেকে কুড়িগ্রামে ফিরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে দুপুর আড়াইটায় কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর আগমনে কুড়িগ্রামের দাশিয়ারছড়া ছিটমহলের লোকজনের উচ্ছ্বাস ও বাঁধভাঙা। চারদিকে সাজ সাজ রব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত তোরন, ব্যানার ও ফেস্টুনে ভরে গেছে পুরো এলাকা। ৬৮ বছর পর নতুন সাজে সেজেছে সদ্য বিলুপ্ত ওই ছিটমহল। এ দাশিয়ারছড়ার নতুন নাম হবে মুজিব-ইন্দিরা ইউনিয়ন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলে ৩৩ কোটি ৬৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৩৭ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে একটি অত্যধুনিক ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স। তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক, নিু মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা স্থাপন করা হবে। তৈরি করা হবে তিনটি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র। এলজিআরডির বিশেষ বরাদ্দে হবে একটি পাবলিক লাইব্রেরি কাম কমিউনিটি সেন্টার। উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও গভীর নলকূপ স্থাপনেরও ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রসহ কৃষি খাতের সাতটি, বিআরডিবির সাতটি, সমবায় অধিদফতরের ছয়টি ও মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের নতুন এ ইউনিয়নের সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। এসবের জন্য শিগগিরই বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোর বাসিন্দাদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের কার্যক্রম শুরু হবে। সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প।

এদিকে কুড়িগ্রাম জেলার ১২টি ছিটমহলের মধ্যে সদর উপজেলায় একটি, ফুলবাড়ীতে একটি ও ভুরুঙ্গামারিতে ১০টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিটমহলটিকে শিগগিরই ইউনিয়ন ঘোষণা করবে সরকার। প্রশাসনিক সবকিছু প্রায় চূড়ান্ত হলেও নাম ঘোষণা এখনই হচ্ছে না।

৬৮ বছরের বঞ্চনার কথা যুগান্তরের কাছে তুলে ধরেন বয়োবৃদ্ধ আবু বকর সিদ্দিক। তিনি বলেন, এতদিন নামে ভারতের অংশ থাকলেও কোনো নাগরিক সুযোগ ছিল না। আর ২০০৫ সালে ভারত জমি রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করে দিয়ে কার্যত দাশিয়ারছড়াকে তাদের অংশ হিসেবেও অস্বীকার করে। তিনি বলেন, দেশ ছাড়া থাকার কি জ্বালা তা জীবনভর হাড়ে হাড়ে বুঝেছি। কিন্তু আমার নাতি-নাতনিরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠবে, এ ভেবেই সান্ত্বনা পাচ্ছি।