বিএনপির মধ্যে অন্তত ৩০ ভাগ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী আছে: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২২-১১-০৪ ২২:১৯:০৯


অসাম্প্রদায়িকতার শক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর এই অসাম্প্রদায়িক সংবিধান শুধু প্রয়োগ করলে হবে না, একই সঙ্গে মানুষের মনোজগতে তা আনতে হবে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করি, অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করি, তাদেরও সাম্প্রদায়িকতার বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।’

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ৫১তম সংবিধান দিবস উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধুর সংবিধানকে সাম্প্রদায়িকতার কলঙ্ক থেকে মুক্ত করুন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির মধ্যে অন্তত ৩০ ভাগ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী আছে। এরা কমেনি। কোনও রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা হয়নি। কিন্তু অনেক মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছে। তারা পাকিস্তান জিন্দাবাদের মতো বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলে। আজ শুধু মাদ্রাসাগুলোতে নয়, কেজি স্কুলেও জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না। বাস্তবতা এটা। অথচ সরকারের আইন আছে। এখনও কোনও রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রামে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, যা আইনে আছে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত, তা খুব সযত্নে এড়িয়ে যান।’

আলোচনা সভায় শিক্ষাবিদ শহীদ-জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘আজ আনন্দের দিবস। আমরা একটা সংবিধান পেয়েছিলাম। আবার আমাদের একটা সংগ্রাম ছিল যে সংবিধান দিবস পালন করবো। সরকার ঘোষণা দিয়েছে এই দিবসটি জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হবে। আমাদের লড়াইটা সফল হলো। তার জন্য আমরা আজ আনন্দিত।’

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক শক্তির স্কুলগুলো বাংলাদেশের সংস্কৃতি ধ্বংস করার সব রকম ব্যবস্থা করেছে। আমাদের বেশভূষা আগের মতো নেই। মনে হচ্ছে আফগানিস্তানে আছি। আমাদের মহিলাদের বেশভূষা আপাদমস্তক বদলে গেছে। সুফিয়া কামালের যে দেশ ছিল, বেগম রোকেয়ার যে পোশাক ছিল, জাহানারা ইমামের যে পোশাক ছিল, তারা তা পরবে না। আমরা মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছি, কিন্তু মনের দিক থেকে অনেক নিচে নেমে গেছি। এই বিষয়টা আমাদের ভাবতে হবে।’

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘এই সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা বিএনপি অন্তর্ভুক্ত করেছে সংবিধানে। এই অস্থিতিশীলতা বিএনপি-জামায়াত তাদের মূলমন্ত্র হিসেবে নিয়েছে। এই অস্থিতিশীলতার সর্বশেষ শিকার হচ্ছেন বিচারপতি মানিক। যদি সংবিধানকে এই অস্থিতিশীলতা থেকে মুক্ত করতে না পারি, তাহলে আমাদেরও আক্রান্ত হতে হবে। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে তা একেবারে মৌলবাদ হয়ে যাবে। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কিছু বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’

সমাজকর্মী ও সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন ধর্ম দিয়ে সম্পর্ক বণ্টন করা যায় না। তারই প্রমাণ ছিল ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের দুঃখ-কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দিনটিকে একটি পবিত্র দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এ জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই।’

তিনি বলেন, ‘আমি অনুরোধ জানাবো এই ’৭২-এর সংবিধান যেন পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে। যেন নিয়মিত চর্চা করা যায়। আমি বাঙালি কিন্তু আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে গড়া বাংলাদেশের গর্বিত বাঙালি। আমরা সবাই চাই এ দেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ যেন না আসে।’

একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শ্রেষ্ঠ অবদান হলো বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। আর দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ অবদান হলো এই রাষ্ট্রের জন্য দ্রুত বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান তৈরি করে দেওয়া। আজ সেই সংবিধান ফিরে এলেও যতদিন আমাদের মনোজগৎ থেকে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িকতার আধিপত্য নির্মূল করতে না পারবো, ততদিন সংবিধানের সবকিছু থাকলেও কোনও কাজ হবে না।’

বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে মিথ্যাচার বন্ধে ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি অস্বীকার আইন’ নামে একটা আইন করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন শাহরিয়ার কবির।

এএ