রাবির হলে সিট বরাদ্দ পেয়েও উঠতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা
আপডেট: ২০১৬-০৪-০৩ ১৯:৪০:৪৫
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নবনির্মিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলে শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ দেওয়া হলেও হলে উঠতে পারছেন না তারা। বারবার পেছানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের হলে উঠার তারিখ। প্রশাসনের অবহেলায় বরাদ্দ দেওয়ার তিন মাস পরও হলে ওঠা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হলে ২৬৪টি কক্ষে মোট ৫২৮ জন ছাত্রীর আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৩০০ জন ছাত্রীকে এই হলে আবাসিক সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। সে অনুযায়ী তিন মাস আগে বিভিন্ন বর্ষের ছাত্রীদের হল বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অন্য পাঁচ আবাসিক হলের সিনিয়র ৪০ জন করে ফজিলাতুন্নেছা হলে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু হলটি এখনও চালু না হওয়ায় তাদের অনেকেই পুরাতন হলেই অবস্থান করছেন।
তাদের অভিযোগ, ভর্তি ও ফরম পূরণসহ বিভিন্ন কাজ তারা আর আগের হলে করতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে তাদেরকে ফজিলাতুন্নেছা হলের অফিস কক্ষেই যেতে হচ্ছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা। অন্যদিকে নতুন হলে উঠতে না পারাই পুরাতন হলের বরাদ্দকৃত কক্ষ ছাড়তে পারছেন না তারা। ফলে ওই হলগুলোর গণরুমের শিক্ষার্থীদের কক্ষ বরাদ্দ পেতেও দেরি হচ্ছে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ না করেই ১৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ হলটির উদ্বোধন করেন। আর উদ্বোধনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের হলে ওঠানো সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে রাবি ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তমাশ্রী দাস জানান, ‘উদ্বোধনের এক বছর পর গত ডিসেম্বর মাসে হলে শিক্ষার্থী বরাদ্দ দেয়া শেষ হয়। গত তিন মাসে বেশ কয়েকবার শিক্ষার্থী তোলার তারিখ দেয়া হলেও তা কার্যকর করা হয় নি। শুধুমাত্র প্রশাসনের অবহেলার কারণে শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে পারছে না।’
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে ফজিলাতুন্নেসা হলে গিয়ে দেখা যায়, তিন তলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ছাত্রীদের বিছানা, টেবিলসহ সব ধরনের আসবাবপত্র নিয়ে আসা হয়েছে। রঙ ও বিদ্যুতের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু পানির কোন সংযোগ দেয়া হয়নি। হলের অফিসে কর্মরত কয়েকজন থাকলেও এখনো কোন স্টাফ নিয়োগ দেয়া হয় নি।
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোছা. ফাহিমা খাতুন বলেন, হলের অবকাঠামোগত সব কাজ শেষ। আনুষ্ঠানিকতাও শেষ। শুধুমাত্র স্টাফ দেয়া হয়নি। ফলে হলের ডাইনিং, ক্যান্টিন ইত্যাদি চালু করা যাচ্ছে না। তাই শিক্ষার্থী তোলাও সম্ভব হচ্ছে না। হল চালু করার ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। নিয়মিত অফিসও করছি। কিন্তু এখনো এ হলে পানির কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। অফিসের সময় পাশের খালেদা জিয়া হল থেকে পানি ব্যবহার করা লাগে।
স্টাফ নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। কেন্দ্রীয় প্রশাসনই এটা ভালো বলতে পারবে। তবে স্টাফ নিয়োগ আর পানি সমস্যা সমাধান করলেই হলে শিক্ষার্থীদের তোলা যাবে।
রাবির প্রকৌশল দপ্তর সূত্রমতে, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের একবছর পর ২০১২ সালের ২৯ নভেম্বর হলটি নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয় দুই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফরিদ উদ্দিন কনস্ট্রাকশন ও দেশ উন্নয়ন লিমিটেডকে। এরপর ২০ কোটি ৪২ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ছয়তলা বিশিষ্ট হলটির তিন তলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
প্রকৌশল সূত্র আরো জানায়, প্রথম ধাপে প্রকল্প শেষের মেয়াদ ছিল ২০১৪ সাল। কিন্তু কাজের ধীরগতির কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি যৌথভাবে কাজ করা ওই দুই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এরপর দ্বিতীয় ধাপে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট করা হয়।
শিক্ষার্থীদের হলে উঠার বিষয়ে জানতে চাইলে রাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ছাত্রীদের আবাসিক সঙ্কট নিরসনের জন্য হলটি দ্রুত নির্মাণ করা হয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার পর প্রাধ্যক্ষকে সব কিছু বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি সব বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।.