পচা গম নিয়ে বন্দরে ফের দুই জাহাজ
আপডেট: ২০১৬-০৪-০৭ ১৪:০০:০০
চট্টগ্রাম বন্দরে আবারও নিম্নমানের পচা গম খালাসের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাশিয়া থেকে ৯৯ হাজার ৩০০ টন নিম্নমানের গম নিয়ে আসা দুটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থান করছে। তবে এসব গম খালাস না করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে খাদ্য অধিদফতর।
অভিযোগ উঠেছে, নিম্নমানের গম নিয়ে সরকারের কঠোর অবস্থানের মধ্যেও রাশিয়া থেকে আনা এই নষ্ট গম কৌশলে চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের চেষ্টা করছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।
নমুনা পরীক্ষা করে নিম্নমানের গম পাওয়ায় গত সপ্তাহে ৫১ হাজার টন সরকারি গম নিয়ে আসা ‘স্পার লিবরা’ জাহাজকে গত সোমবার ও ৪৮ হাজার ৩০০ টন গম নিয়ে বৃহস্পতিবার নোঙর করা ‘ইকুইনক্স ডন’ জাহাজকে মঙ্গলবার ফেরত নিতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে খাদ্য অধিদফতর।
কিন্তু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দুটি জাহাজে থাকা প্রায় এক লাখ টন নিম্নমানের গম বেসরকারিভাবে খালাস করতে নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে। ‘স্পার লিবরা’ জাহাজকে দুই দিন আগে ফেরত যাওয়ার নোটিশ দেওয়া হলেও এখনো সেটি চট্টগ্রাম বন্দরে ভাসছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৫১ হাজার মেট্রিক টন গম নিয়ে রাশিয়া থেকে ‘স্পার লিবরা’ নামের একটি জাহাজ গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। এছাড়া গত বৃহস্পতিবার ৪৮ হাজার ৩শ’ টন গম নিয়ে ‘ইকুইনক্স ডন’ নামে অপর একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে নোঙর করে। গম খালাসের অপেক্ষায় থাকা এসব জাহাজে গমের নমুনা পরীক্ষায় দেখা যায় গমগুলো অনেকাংশে নষ্ট, পচা এবং খাবারের অনুপযোগী। খাদ্য অধিদফতরের নমুনা পরীক্ষায় গম পচা ও নিম্নমানের হওয়ায় এসব গম খালাস এবং গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় খাদ্য অধিদফতর।
গতকাল মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) গমের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফনিক্স কমোডিটিজ এমসিসিকে এসব গম ফেরত নিয়ে যেতে চিঠি দেয় খাদ্য অধিদফতর। গম ফেরত নিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের শিপিং এজেন্ট ইউনিশিপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন।
খাদ্য অধিদফতর চট্টগ্রামের চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক জহিরুল ইসলাম বুধবার জানান, রাশিয়া থেকে পচা ও নিম্নমানের ৯৯ হাজার ৩শ’ টন গম নিয়ে আসা দুটি জাহাজকে ফেরত যাওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এসব নিম্নমানের গম কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না খাদ্য অধিদফতর। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে তা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জহিরুল ইসলাম আরও জানান, পচা ও নিম্নমানের গম নিয়ে আসা আরও ৪টি জাহাজকে গত এপ্রিল, মে ও জুন মাসে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। এসব জাহাজে দুই লাখ ১০ হাজার টন গম বোঝাই ছিল। এদিকে মঙ্গলবার দুটি গমবোঝাই জাহাজকে ফেরত পাঠানোর জন্য চিঠি দেওয়া হলেও ৫০ হাজার টন গম নিয়ে আরও একটি জাহাজ আগামী ২০ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে বলে খাদ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, আরও ৫০ হাজার টন গম নিয়ে পাইপলাইনে থাকা আরেকটি জাহাজ আসছে রাশিয়া থেকে। এ জাহাজটি নোঙর করার কথা ২০ এপ্রিল।
খাদ্য অধিদফতরের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে গম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফনিক্স কমোডিটিজ এমসিসির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট ইউনিশিপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন জানান, রাশিয়া থেকে আসা ৫১ হাজার টন গমের মান ঠিক না থাকায় ফেরত পাঠাতে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে ইমেইলে চিঠির অনুলিপি পেয়েছি। তবে গমগুলো বেসরকারিভাবে দেশেই খালাস করার চেষ্টা করছি আমরা। অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।’
খাদ্য অধিদফতর থেকে পাওয়া নমুনা রিপোর্টে দেখা যায়, ‘এমভি স্পার লিবরা’ নামের জাহাজে রাশিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে ৫১ হাজার টন গম আসে গত সপ্তাহে। নিয়ম অনুযায়ী বন্দরে আসার পর জাহাজ থেকে গমের নমুনা সংগ্রহ করে খাদ্য অধিদফতর। সংগৃহীত এ নমুনায় নয়টি ক্ষেত্রে গুণগতমান পরীক্ষা করা হয়। মান অনুযায়ী বিজাতীয় উপাদান (গমের খোসা বা ভুসি) থাকার কথা সর্বোচ্চ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে আমদানি করা গমে এসব উপাদান পাওয়া যায় এক দশমিক ০৮ শতাংশ। এ কারণে আমদানি করা গম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে খাদ্য অধিদফতর।
রাশিয়া থেকে ‘এমভি ইকুইনক্স ডন’ নামের আরেকটি জাহাজ সরকারি গম আনে ৪৮ হাজার ৩০০ টন। গত বৃহস্পতিবার নোঙর করা জাহাজ থেকে শনিবার নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে এ জাহাজেরও সব গম নিম্নমানের পান খাদ্য অধিদফতরের রসায়নবিদরা।
গতকাল মঙ্গলবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এডিএম ইন্টারন্যাশনাল এসএআরএলকে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দেন খাদ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক শেখ রোকা মিয়া। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, চুক্তি অনুযায়ী নমুনার গমের ওজন (টেস্ট ওয়েট) এবং বিভিন্ন শ্রেণিভুক্ত গমের উপাদান (হুইট অব আদার ক্লাসেস) নির্ধারিত মানে পাওয়া যায়নি। টেস্ট ওয়েট ৭৬ কেজি/এইচএলের উপরে থাকার কথা থাকলেও তা পাওয়া গেছে ৭৪ দশমিক ৩ কেজি/এইচএল। আবার হুইট অব আদার ক্লাসেসের উপাদান ৪ শতাংশের নিচে থাকার কথা থাকলেও তা পাওয়া গেছে ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। তাই নিম্নমানের এ গম গ্রহণ করবে না খাদ্য অধিদফতর। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে তার নিজস্ব খরচে এ গম ফেরত নিতে চিঠিতে বলা হয়েছে।
দ্য রিপোর্ট