রিজার্ভ চুরি: রাজসাক্ষী হচ্ছেন দেগুইতো!
আপডেট: ২০১৬-০৪-০৯ ১৩:৩৫:৪৯
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে চুরির ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফিলিপাইনে এনে ভাগ-বাটোরোয়ায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ তদন্তে রাজসাক্ষী হতে পারেন দেশটির রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের মাকাতি সিটির জুপিটার শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মাইয়া সান্তোস দেগুইতো। এ তথ্য জানিয়েছেন দেগুইতোর আইনজীবী ফাডিনান্ড তোপাসিও।
রিজার্ভ চুরির তথ্য ফাঁস হওয়ার পর ফিলিপাইন সিনেট কমিটি গত চার সপ্তাহে চার দফা শুনানির আয়োজন করে। ওই শুনানিতে সন্দেহভাজনদের ডাকা হয়। অন্যদের মতো বক্তব্য দেন এ ঘটনায় অন্যতম সন্দেহভাজন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা দেগুইতোও।
অর্থ পাচারের এ বিষয়টি এখন তদন্ত করছে ফিলিপাইনের বিচার বিভাগ। সিনেট কমিটিতে দেগুইতো বলেছেন, ‘তিনি দাবার গুটি, গ্র্যান্ড মাস্টার নন।’ দেগুইতোর এ বক্তব্যের সূত্র ধরে তদন্ত দল খতিয়ে দেখছে যে, দেগুইতোর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার মতো যথেষ্ট প্রমাণাদি আছে কি-না।
ফিলিপাইনের সাক্ষি সুরক্ষা আইনের আওতায় ‘সঠিক সময়ে’ দেগুইতো সরকারের কাছে আবেদন করবেন বলে জানান সাবেক এ ব্যাংক ব্যবস্থাপকের আইনজীবী ফাডিনান্ড তোপাসিও। শুক্রবার নিউইয়র্কভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এ তথ্য জানান দেগুইতোর এ আইনজীবী।
ফাডিনান্ড তোপাসিও বলেন দেশের প্রচলিত সাক্ষি সুরক্ষা আইন অনুযায়ী, ‘গুরুত্বপূর্ণ কোন মামলায় আদালতে কিংবা তদন্ত সংস্থার সামনে কোনো নাগরিক সাক্ষ্য দিলে তাকে আইনি জটিলতায় ফেলা যাবে না। রাজসাক্ষি হলে তার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগও তুলে নেবে রাষ্ট্র।’
তিনি বলেন, ‘আমার মক্কেল সিনেট কমিটির শুনানিতে রিজার্ভ চুরি নিয়ে বেশ খোলামেলা কথা বলেছেন। আমরা এ নিয়ে সহযোগিতা দিতে চাই যাতে সরকার কলঙ্কিত এ অধ্যায়ের আধ্যপাদ্য উদঘাটন করতে পারে। রিজার্ভ চুরির গ্র্যান্ড কনসপিরেসির সঙ্গে আমার মক্কেলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
দেগুইতোর আইনজীবী আরো বলেন, ‘সিনেট কমিটির শুনানিতে আমার মক্কেলের বক্তব্যের সূত্র ধরেই তদন্ত কমিটি ইতিহাসের বড় এ জালিয়াতিতে জড়িতদের চিহ্নিত করতে পেরেছে। এজন্য সিনেট কমিটির সদস্যরা আমার মক্কেলকে তদন্তে ‘নির্ভরযোগ্য সাক্ষি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।’
ফিলিপাইনে রিজাল ব্যাংকের জুপিটার শাখার একটি অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির যে ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাঠানো হয় তা পরে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারি প্রতিষ্ঠান ফিলরেম সার্ভিস কোম্পানি হয়ে চলে যায় জুয়ার বোর্ডে। এ টাকার কিছু অংশ উদ্ধার করা সম্ভব হলেও বাকিটার হদিস এখন পাওয়া যায়নি।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। ওই টাকার ৮১ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয় ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের জুপিটার শাখায় ব্যবসায়ী কিম অংয়ের অ্যাকাউন্টে।
ব্যাংক জালিয়াতির ইতিহাসে বড় এ লোপাটের বাকি ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাঠানো হয় শ্রীলংকার সেচ্ছাসেবী সংগঠন শাকিলা ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে। প্রাপকসংস্থার নামের বানানে ভুল থাকায় পেমেন্ট আটকে দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।