‘সবাই এক হয়ে কাজ করলে পুঁজিবাজার ও অর্থনীতি এগিয়ে যাবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৩-০১-০৬ ১৭:৩৫:২৩


বিনিয়োগ শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক গ্যাপ রয়েছে। তবে আস্থার ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি নেই। অভাব ও আস্থার ঘাটতি থাকলে বর্তমানে অনেক বিনিয়োগ আসতো না। ব্যাংকগুলোতেও এখন নতুন-নতুন প্রজেক্টের অফার আসে। সবাই একসঙ্গে কাজ কাজ করলে দেশের পুঁজিবাজার ও অর্থনীতি এগিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) অর্থসূচক ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো-২০২৩ এর ‘বিনিয়োগ শিক্ষা ও পুঁজিবাজার’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিনিয়োগ শিক্ষাকে অর্থায়ন শিক্ষা হিসাবে বিবেচনা করা উচিৎ। এই শিক্ষা বয়স ও সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এধরনের শিক্ষাকে অনলাইন ভিত্তিক করা উচিৎ।

এছাড়াও তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই শিক্ষার পদ্ধতি সঠিক ভাবে এগিয়ে দেওয়া উচিৎ। তাদের পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। করোনার সময় স্কুল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইন হয়েছিলো। সেরকমভাবে বিনিয়োগ শিক্ষাকেও অনলাইন করানো উচিৎ। এছাড়া তথ্যের প্রবাহ বাড়াতে হবে।

এদিন বিএএসএমের ফ্যাকাল্টি রিজভী আহমেদ বলেন, বিনিয়োগ শিক্ষা নিয়ে যারা চিন্তা করেছে তারাই লাভবান হয়েছে। অতীতের পুজিবাজার ধসের মূল কারণ ছিলো বিনিয়োগ শিক্ষার অভাব। মূল্যষ্ফীতি সহ অন্যান্য বিষয়ের প্রভাব পুঁজিবাজারে কিভাবে পড়ে সেটাও জানতে হবে। বিনিয়োগ শিক্ষার অনেক উপকারিতা রয়েছে। মূল্যস্ফীতি হলে পুঁজিবাজারে কি ধরনের প্রভাব পড়ে এ বিষয়ে জানতে হবে। বিনিয়োগ শিক্ষা নিয়ে জানাশোনা লোকজনই পুঁজিবাজারে আসে। যেসব দেশের মানুষ গণিতে ভালো তারা বিনিয়োগ শিক্ষা বেশি বুঝে। জমানো সব টাকা দিয়ে শেয়ার কেনা উচিত না। প্রতিমাসে অল্প করে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা উচিত। এভাবে বিনিয়োগ করলে শিক্ষা পুঁজিবাজারে কাজে লাগানো যাবে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, বিনিয়োগ শিক্ষার ধারণা থাকলে নিজেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা সম্ভব। আর যদি কেউ রিক্স নিতে না চায় তাহলে মিউচুয়াল ফান্ড বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারে। এছাড়া কিছু না বুঝলে তখন কোনো প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নেওয়া যায়। ব্যাংকের পাশাপাশি পুঁজিবাজার থেকেও অর্থ সংগ্রহ করা যায়। সে বিষয়ে অনেকেই জানেন না। বর্তমানে অনেক কিছুই ডিজিটাল হয়েছে। যাদের বাজার সম্পর্কে ধারণা থাকবে তারাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে।

এদিন গ্রিন ডেল্টা সিকিউরিটির এমডি ওয়াফী শফিক মিনহাজ খান বলেন, এই খাত স্রোতের সঙ্গে চলছে। অধিকাংশ মানুষের শিক্ষার প্রয়োজন হচ্ছে না। ব্রোকারেজ হাউজগুলো আইটেম দিতে না পারলে সে খারাপ হয়ে যায়। কারণ বিনিয়োগকারীরা আগেই এভাবে শিখে আসছে। তাই তারা এরকম আচরণ করছে। বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসসই একসঙ্গে কাজ করছে। এছাড়া বিএএসএম আমাদের অনেক কোর্সের অফার করছে।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে মিউচুয়াল ফান্ডের অনেক জনপ্রিয়তা। সেই তুলনায় আমরা এগোতে পারিনি। আমরা সবাই একসঙ্গে মিলে ইন্টারেস্টিং পদ্ধতিতে বিনিয়োগ শিক্ষা দিতে পারলে অনেক ভালো হবে। অন্য মানুষের কথা শুনেই বিনিয়োগ করা উচিত না। এ ধরনের সেমিনার সহ বিভিন্ন মাধ্যমে এটি নিয়ে কাজ করা উচিত। এক্ষেত্রে বেশ কয়েক বছর ধরে অর্থসূচক সুযোগ করে দিয়েছে। এই ধরনের সেমিনার থেকে অনেক কিছুই জানা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল- আমিন বলেন, ফ্লুর প্রাইস দেওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ ছিল। শেয়ার কারসাজির সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারিরাও জড়িত থাকেন। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ শিক্ষা থাকাটা খুবই দরকার। এক্ষেত্রে বর্তমানে বিএসইসি বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এরপরেও অনলাইন মিডিয়াগুলোতে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি সপ্তাহে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা একসঙ্গে মিলে কাজ করলে এসব সমস্যার সমাধান হবে।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগ শিক্ষার অভাব সবখানে আছে। আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান অনেক বেশি হয়, একইভাবে আবার সূচকের পতন হয়। মার্জিন লোন নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়। এছাড়া শেয়ার এর দাম ওঠানামা করার জন্য সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন দায়ী না। দেশের এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো যেন টাকা নিয়ে পালাতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পুঁজিবাজারের স্বল্প মূলধনী কোম্পানি কোম্পানিগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ এসব কোম্পানিতে শেয়ার কারসারজির পরিমাণ বেশি হয়।

এছাড়া সেশন চেয়ার হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, বিএএসএমের ডিজি তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। অপরদিকে প্যানেল আলোচক হিসেবে আছেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুল আলম, গ্রীণ ডেল্টা সিকিউরিটিজের এমডি ওয়াফী শফিক মেহনাজ খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন।

এএ