নতুন বর্ষবরণের অপেক্ষায় রাবি ক্যাম্পাস
প্রকাশ: ২০১৬-০৪-১০ ১৫:৪৯:১১
দরজায় কড়া নাড়ছে নতুন বাংলা বর্ষ। কয়েকদিন বাদেই বাঙ্গালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ ১৪২৩। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নানা আয়োজন নিয়ে এখন মহাব্যস্ত দেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয়সহ দেশের সব বিভাগীয় শহর ও জেলা-উপজেলা ছাড়িয়ে পহেলা বৈশাখের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। পুরনো বছরের গ্লানি মুছে নতুন প্রহর, নতুন আশা আর নতুন প্রাপ্তির অপেক্ষায় প্রত্যেকে। আর বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নিতে বাঙ্গালি জাতির আবেগের কোন কমতি নেই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এই প্রাণের উৎসবকে ঘিরে নাটক, কবিতা, নিত্য, আবৃত্তি ও সংগীতের জোর মহড়া চলছে গত কয়েকদিন থেকে। রাবির সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন সংগঠন পহেলা বৈশাখের স্বকীয়তা বজায় রাখতে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছে। চৈত্র সংক্রান্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক জোট বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া পহেলা বৈশাখের প্রথম প্রহরে সূর্য বরণের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচি রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘তীর্থক’ নাট্য সংগঠনের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য। এ উৎসবে বাঙ্গালিরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চা করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে আমরা বাঙ্গালি সংস্কৃতি চর্চায় বিমুখ হয়ে পড়ছি। এর কারণ বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসন আর আমাদের নিজেদের উদাসীনতা।
তিনি আরো বলেন, বর্ষবরণে নারী লাঞ্চনা সত্যিই দুঃখজনক। কিন্তু এ ধরনের ঘটনায় কারা জড়িত তা এখনও উদঘাটন করা হয়নি কেন? আমি মনে করি এটা পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতা। এ ধরনের ঘটনায় বাঙ্গালির উৎসব পহেলা বৈশাখের স্বকীয়তা নষ্ট হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা আমরা যারা সাংস্কৃতিক কর্মী আছি তাদের জন্য খুবই হতাশার।
প্রতিবারের মতো এবার পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ‘বির্তক সংগঠন গ্রুপ অব লিবারেল ডিবেটরস গোল্ড বাংলাদেশ’ ছাত্র-শিক্ষক রম্য বির্তকের আয়োজন করেছে। সংগঠনটির বির্তাকিক ওমর আল হাসান জনি বলেন, ক্যাম্পাসে বর্ষবরণ উপলক্ষে আমরাই ছাত্র শিক্ষকদের আয়োজনে রম্য বিতর্কের আয়োজন করি। এ আয়োজন সফল করতে আমরা ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।
রাবিতে পহেলা বৈশাখের মুল আকর্ষণ থাকে চারুকলা বিভাগকে ঘিরে। চারুকলা বিভাগকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় বর্ষবরণের পালা। চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মৌমিতা চৌধুরী বলেন, এরই মধ্যে রং এর মুখ ও মূখোশ, ফুল ও পরী, প্রকৃতি রং তুলিতে তুলে প্রকৃতির রুপ তুলে ধরার কাজ শুরু করেছে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও বিভাগের মধ্যে শুভেচ্ছা কার্ড বিতরণেও ধুম পড়েছে।
সময়ের সাথে মানানসই পোশাক এসেছে বাজারে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই ব্যস্ত বাহারি রংয়ের পোশাক ক্রয় করতে। গরমের কথা বিবেচনায় সুতি কাপড়ই ফ্যাশন হাউজগুলো বেছে নিয়েছে তাদের ডিজাইনে। এসেছে হাল ফ্যাশনের পোশাক। তাই শিক্ষার্থীরা রাজশাহীর বিভিন্ন শপিং সেন্টারে গিয়ে সেরে নিচ্ছে কেনাকাটা। বিনোদপুর, সাহেব বাজার, নিউমার্কেট, জিরো পয়েন্টসহ রাজশাহীর বিভিন্ন মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে পছন্দের বিভিন্ন পোশাক।
আনিকা আক্তার। পড়েন প্রাণী বিদ্যা অনুষদে। তিনি এরই মধ্যে সেরে নিয়েছেন কেনাকাটার কাজ। তিনি বলেন, বাজার ঘুরে দেখলাম এবারের বাজারে বৈশাখের শাড়িতে আছে নতুনত্ব। বৈশাখের শাড়ি ৩শ’ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা মূল্যে রাজশাহীর বাজার দখল করেছে।
বিনোদপুর বাজারে কথা হলো একজন কাপড় দোকানির সাথে। তিনি বলেন, লাল-সাদার মিশেলে শাড়ি-কামিজ ইত্যাদি রং বে রঙের কাপড় বুনন এবং মাটির তৈজস বানানোর কাজে মহাব্যস্ত সবাই। বাঙ্গালির সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ পালনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। দিন ও রাতে সর্বত্রই চলছে বৈশাখের শাড়ি, কাপড়, গামছা ও লুঙ্গি তৈরির কাজ।
রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী জহুরুল ইসলাম বলেন, বৈশাখে বাঙালিয়ানা শতভাগ ফুটিয়ে তুলতে আমরা অনেক কিছুই করে থাকি। এমন চাওয়া থেকে আমরা বৈশাখের প্রথম দিন মাটির তৈজসপত্র ব্যবহার করে থাকি। প্রতিবারের ন্যায় এবছরও আমরা দিনটি যথাযথভাবে পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বাংলার আদিম সমাজ থেকে তৈজসপত্র ব্যবহৃত হয়ে আসছে। একটা সময় গ্রামের নিম্নবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্তরা খাওয়ার জন্য মাটির তৈজসপত্র ব্যবহার করত, যা এখন প্রায় দেখাই যায় না। এ নিয়ে আক্ষেপ আর হতাশা প্রকাশ করেন অনেক শিক্ষার্থী।
ভাষা বিভাগের শিক্ষার্থী অলিভা মায়া বলেন, কালের পরিবর্তনে এটি হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু বৈশাখের প্রথম দিনে বাঙালিয়ানার সঙ্গে মিলিয়ে পান্তা ইলিশ পরিবেশনে মাটির তৈজসপত্র ব্যবহার করা হয়, যা আমাদের বাঙালী সত্ত্বার শিকড়কে মনে করিয়ে দেয়।
সানবিডি/ঢাকা/আহো