কারাগারে উপার্জন করে সাবলম্বী হবে কয়েদিরা
আপডেট: ২০১৬-০৪-১০ ১৮:৪৩:৪৫
কারাগারে কয়েদিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে কাজের ব্যবস্থা করা হবে। যেন তারা কাজ করে মজুরি পান, যা দিয়ে তারা পরিবারকে সাহায্য করতে পারেন। অথবা মুক্ত হওয়ার সময় তার জমাকৃত মজুরি দিয়ে ছোট হলেও কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য করে সাবলম্বী হতে পারেন, আর যেন অপরাধে জড়িয়ে না পড়েন সেই ব্যবস্থা করা হবে।
রোববার (১০ এপ্রিল) সকালে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধনকালে এসব কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অপরাধীদের সংশোধনের পদক্ষেপ নিতে হবে। অপরাধীদের এই প্রবণতা থেকে কিভাবে সরিয়ে আনা যায় সেটা চিন্তা করতে হবে। অপরাধের জন্য কারাগারে শাস্তি দিলে কাজ শেষ হয়ে যাবে না। তাদের কিভাবে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনা যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’
ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভিতরে কয়েদিদের জন্য বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট করে দেয়া হবে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এখানকার হাসপাতালটা আরো বড় করতে হবে। বন্দিদের পাশাপাশি যেন এলাকার লোকজন চিকিৎসা নিতে পারে।’
চুরি করে কয়েদীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করার ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে পাবলিক টেলিফোনের ব্যবস্থা করতে হবে। মাসে একবার কয়েদীদের বাড়িতে ফোন করার সুযোগ দিতে হবে। এতে করে তাদের মানসিক শক্তি বাড়বে। এতে চুরি করে ফোন ব্যবহারের প্রবণতাও কমবে।’
এসময় তিনি বঙ্গবন্ধুর কারা জীবনের কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারাগারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছোটবেলা থেকেই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন কারাগারে। বাঙালি জাতির কল্যাণে ও মানুষের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে, অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি বারবার কারাগারে গেছেন। জাতির জনক আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। স্বাধীনতা আনতে গিয়েই তিনি বারবার কারা নির্যাতিত হয়েছেন।’
কারাগারের ভেতরে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের বিষটি গুরুত্বসহ দেখছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলে একদল পরিবেশ রক্ষা করার আন্দোলন করে। তারা বলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে দিবে না। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে নাকি এসিড বৃষ্টি হবে। আমরা ছোট বেলা থেকে বাড়িতে দেখি আসছি পানির ফিল্টারের উপরে কয়লা দেয়া থাকে যা পানির দূষণ মুক্ত করে। এখন শুনছি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নাকি পরিবেশ ও পানি নষ্ঠ করবে। এদের সব উদ্ভট কথা। জানি না এদের উদ্দেশ্য কী?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারাগারে যারা কাজ করেন তারা ছেলে-মেয়েদের জন্য স্কুল বাসের দাবি করেছেন। অব্যশই স্কুল বাসের ব্যবস্থা করা হবে। আশাপাশে স্কুল না থাকলে নতুন স্কুলও করে দয়ো হবে। আপনারা জানেন আমরা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছি। কারণ শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না।’
নতুন এ কারাগারে পুরুষ বন্দিদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। পাশেই নির্মাণাধীন নারী কারাগার। এর কাজ সম্পন্ন হলে ওই কারাগারে থাকতে পারবে ২৭০ নারী বন্দি।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন এ কারাগারে বন্দিদের জন্য থাকছে আধুনিক ব্যবস্থা। পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে ১৭৮৮ সালে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার স্থাপন করা হয়। প্রায় সোয়া ২শ’ বছর পর কেরানীগঞ্জে নতুন এ কারাগারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালে।
নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগার থেকে বন্দিদের পুরোপুরি সরিয়ে নেয়া শেষ হলে সেখানকার জমিতে পার্ক, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ব্যায়ামাগার ও কনভেনশন সেন্টার, জাদুঘর নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।