চূড়ান্ত হল ৯ অর্থনৈতিক অঞ্চল
প্রকাশ: ২০১৬-০৪-১১ ১০:৫৪:২৮
বিনিয়োগ ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে নতুন আশাবাদ তৈরি হয়েছে। আগামী ১৫ বছরে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করা সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) নতুন করে আরো ৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান চূড়ান্ত করেছে।
এর মধ্যে সরকারিভাবে বাস্তবায়ন হবে পাঁচটি, আর বাকি চারটি করবে দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে বিনিয়োগ বোর্ড কার্যালয়ে সাত সদস্যের স্থান নির্বাচন কমিটি এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। এই নিয়ে ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান চূড়ান্ত করল কমিটি।
আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বেজা সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য স্থান চূড়ান্ত করতে নির্বাচন কমিটির সামনে মোট ১৩টি প্রস্তাব ওঠানো হয়। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে ৯টি স্থান চূড়ান্ত করে কমিটি। যার মধ্যে সরকারি পর্যায়ে পাঁচটি, আর চারটি বেসরকারি পর্যায়ে।
সরকারি পর্যায়ে পাঁচটি হলো কক্সবাজার জেলায় মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চল, খাগড়াছড়ির আলুটিলা বিশেষ পর্যটন অঞ্চল এবং নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে কালাপাহাড়িয়া বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
বেসরকারিভাবে চারটি হলো সিলেটে ফখরুল ইসলাম চৌধুরী অর্থনৈতিক অঞ্চল, ঢাকার ভাটারায় ইউনাইটেড সিটি অর্থনৈতিক অঞ্চল, হবিগঞ্জের বাহুবলে ইস্ট কোস্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁও অর্থনৈতিক অঞ্চল। তবে ১৩টির মধ্যে বাকি চারটি প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলকে আপাতত অনুমোদন দেয়নি কমিটি।
বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদ এ কমিটির সভাপতি। কমিটির অন্য ছয় সদস্য হলেন স্থপতি হিসাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান, ভূমিসচিব, পরিবেশ ও বনসচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (এক) মহাপরিচালক এবং এমসিসিআইয়ের সভাপতি। জানতে চাইলে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা নতুন করে আরো ৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান অনুমোদন করেছি।
এসব প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য শিগগিরই গভর্নিং বোর্ডে ওঠানো হবে। যে বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী। তবে গভর্নিং বোর্ডের অনুমোদনের আগে আমরা এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রাথমিক যেসব কাজ বিশেষ করে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থাকলে সেগুলো অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করব। এর পাশপাশি সেখানে ভূমি উন্নয়ন, গ্যাস, বিদু্যুৎ, পানি ব্যবস্থাপনাসহ সংযোগ সড়কের প্রাথমিক কাজ শুরু করে দেব।’
স্থান চূড়ান্ত হওয়া ৯টির মধ্যে মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চলটি হবে প্রায় চার হাজার একর জমির ওপর। কক্সবাজার শহর থেকে সড়ক ও নৌপথে ৪০ কিলোমিটার দূরে প্রস্তাবিত এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে নৌ ও সাগরপথে যোগাযোগ থাকায় অত্যন্ত সহজে ও কম খরচে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন করা যাবে।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি হবে ১৭৭ একর খাস জমির ওপর। প্রস্তাবিত স্থানটি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে। সেখানে বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইনের সুবিধা রয়েছে। তবে নদী ভাঙনের প্রবণতার কারণে বড় করে বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠা হবে ৪৯৪ একর জমির ওপর, যেটি জেলা সদর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে। আলুটিলা অর্থনৈতিক অঞ্চলটি সরকারি খাস ৭০০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে। রিসাং ঝরনা, রহস্যময় গুহা, বৌদ্ধবিহার, মন্দিরসহ পাহাড়সমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় ওই অঞ্চলটি বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় হতে পারে বলে আশা করছে বেজা।
কালাপাহাড়িয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলটি হবে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জেগে ওঠা চরে ৪০০ একর জমির ওপর। ঢাকা থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে এখানে এখনই কাজ শুরু না করলে অবৈধ দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বেজার কর্মকর্তারা। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে ফখরুল ইসলাম চৌধুরী অর্থনৈতিক অঞ্চলটি সিলেট সদরে বিমানবন্দর থেকে চার কিলোমিটার দূরে ৫০ একর জমির ওপর করার পরিকল্পনা রয়েছে। সড়ক ও রেল সুবিধাও রয়েছে।
গ্যাস ও বিদ্যুতের কোনো সমস্যা নেই বলে জানা গেছে। ইউনাইটেড সিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলটি হবে ঢাকার আমেরিকান দূতাবাস থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে মাদানি এভিনিউতে আড়াই একর জমির ওপর। প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে আইটি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। সেখানে ৩৫ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের সুযোগ রয়েছে।
ইস্ট কোস্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলটি হবে হবিগঞ্জ শহর থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে ১৫০ একর জমির ওপর। সড়ক, রেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ সেখানে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আর সোনারগাঁও অর্থনৈতিক অঞ্চলটি হবে ৩০০ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির ওপর। প্রস্তাবিত অঞ্চলটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে হওয়ায় পণ্য পরিবহনে সুবিধা হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
বেজার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, অনেক বিচার-বিশ্লেষণ, যাচাই-বাছাই করেই কেবল অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য স্থান চূড়ান্ত করা হয়। যেখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হবে সেখানে যাতায়াতব্যবস্থা ভালো কি না, জমি ঠিক আছে কি না, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির ব্যবস্থা আছে কি না এবং ওই স্থানে ব্যক্তিমালিকানাধীন কারো বাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কিংবা স্থাপনা আছে কি না এসব বিষয় দেখেই কেবল অনুমোদন দেওয়া হয়। সূত্র: কালের কণ্ঠ
সানবিডি/ঢাকা/এসএস