রূপনগরে অ্যাসিড নিক্ষেপে ভাড়াটে!

প্রকাশ: ২০১৬-০৪-১১ ১১:৫২:০৮


Asidরাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে বৃহস্পতিবার সকালে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় একই পরিবারের ৪ জন দগ্ধ হন। জানা গেছে, অ্যাসিড নিক্ষেপ করতে ১২ হাজার টাকায় ভাড়াটে যোগাড় করা হয়। ঘটনার মূল হোতা সুরুজ তার বন্ধু রিপন ও এক সহযোগীকে অ্যাসিড নিক্ষেপে ভাড়া করেন।

আদালতে সুরুজ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, তিনি তিনটি বিয়ে করেছেন। কিন্তু অভাবের কারণে তাদের ভরণপোষণ করতে পারতেন না। এর মধ্যে ছোটবউ সুবর্ণা এইচএসসি পাস। দেখতেও সুন্দরী। এ ঘরে তাদের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।

অভাবের কারণে ছোটবউ সুবর্ণা গার্মেন্টসে চাকরি করতে চান। স্বামী সুরুজের দেওয়া সামান্য টাকায় সংসার ও মেয়ে রীমার লেখাপড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খেয়ে হতো তাকে। চাকরি করলে অন্য কারো কাছে চলে যেতে পারে এ ভয়ে বরাবরের মতোই সুরুজ চাইত না সুবর্ণা কোনো কাজ করুক।

তারপরেও সংসার চালাতে সুবর্ণা গার্মেন্টসে চাকরি নেন। এ নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হতো সুরুজ ও সুবর্ণার মধ্যে। একদিন ঝগড়ার এক পর্যায়ে সুবর্ণাকে বেপরোয়া মারধর করেন সুরুজ। এরপর একই এলাকা বরিশাল জেলার বন্দর থানার সিংরাইয়ের কাঠি গ্রামের বন্ধু রিপনের কাছে নিয়ে যান তিনি। রিপন পেশায় একজন কম্পাউন্ডার। প্রচণ্ড মারধরের পর রিপনের ভুল চিকিৎসায় সুবর্ণার একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। তারপরও সুবর্ণা গার্মেন্টসের কাজে যেতেন, যা সুরুজ একদমই চাইতেন না।

এ ঘটনার ছয়মাস পর বৃহস্পতিবার বন্ধু রিপনকে ১২ হাজার টাকা দেয়া হয়েছিল সুর্বণার মুখে অ্যাসিড মেরে ঝলসে দেওয়ার জন্য। এদিন সকালে রিপন তার এক সহযোগীকে নিয়ে সুবর্ণার কাছে যান। সুবর্ণাকে তিনি বলেন, তার বাবার বাড়ি থেকে দুজন মেহমান এসেছেন। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই সুযোগ বুঝে অ্যাসিড নিক্ষেপ করে পালিয়ে যান তারা। ঘটনাটি সুরুজের সামনে ঘটলেও স্ত্রী ও মেয়ে রীমাকে বাঁচাতে বা অ্যাসিড নিক্ষেপকারীদে ধরার কোনো চেষ্টাই করেননি। তার দ্বিতীয় স্ত্রী নিলুফা সুবর্ণাকে বাঁচাতে এলে তিনিও অ্যাসিডদগ্ধ হন। মেয়ে সানজিদা রীমার হাতও অ্যাসিডদগ্ধ হয়।

সুরুজ আলীর ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমনটাই বর্ণনা করেন। তার স্বীকারোক্তি মতো রোববার দুপুরে ধানমণ্ডি এলাকা থেকে রিপনকে আটক করে পুলিশ।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ শহীদ আলম বাংলামেইলকে জানান, রূপনগরে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় স্বামী সুরুজ মিয়াকে আগেই আটক করা হয়েছিল। তার দেওয়া স্বীকারোক্তি মতো রিপনকেও আটক করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, রিমান্ড আবেদন করে রিপনকে আদালতে পাঠানো হবে এবং এ ছাড়া অপর এক আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

রাজধানীর রূপনগরে ১৩ নম্বর টিনশেড বস্তিতে গত বৃহস্পতিবার সকালে স্বামীর সহযোগিতায় দুর্বৃত্তদের ছোড়া অ্যাসিডে দগ্ধ হন একই পরিবারের ৪ জন। পরে স্বামীর কথাবার্তা ও চালচলন রহস্যজনক মনে হলে স্ত্রীর অভিযোগে তাকে আটক করে পুলিশ।

সানবিডি/ঢাকা/এসএস