২৮ নোটিশেও সাড়া দেননি মালিকরা
আপডেট: ২০১৬-০৪-১১ ১৯:০৫:৩৭
একবার নয়, দু’ বার নয়- টানা ২৮ বার নোটিশ দিয়েছে সরকার। আর দফায় দফায় মন্ত্রীর আলটিমেটাম আছেই। এরপরেও হাজারীবাগের চামড়াশিল্প (ট্যানারি) সাভারে স্থানান্তরে মালিকদের তেমন সাড়া মেলেনি।
বহুল আলোচিত এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। প্রতিষ্ঠানটির অধীন চামড়া শিল্পনগরীর প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) দপ্তর থেকে ট্যানারি স্থানান্তরে মালিকদের গত কয়েক বছরে ২৮ বার লিখিত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কারখানা মালিকদের কাছে পাঠানো হয়েছে উকিল নোটিশও। নোটিশের জবাব মিললেও নতুন চামড়া শিল্পনগরীতে যেতে সাড়া মেলেনি।
এরমধ্যে গত ১০ জানুয়ারি ট্যানারি শিল্প ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হাজারীবাগ থেকে সরিয়ে নিতে আলটিমেটাম দেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। এরপরে ১ এপ্রিল থেকে রাজধানীর হাজারীবাগে কাঁচা চামড়ার প্রবেশ নিষিদ্ধ করে সরকার। পরে ৩ এপ্রিল এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে ট্যানারি স্থানান্তরে মালিকদের ১০ এপ্রিল আজ পর্যন্ত সময় দিয়েছিল বিসিক। এ সময়ের মধ্যেও কারাখানা স্থানান্তর করতে পারেনি কারখানা মালিকরা। মাত্র দুটি কারখানা মালিক তাদের প্রস্তুতি শেষ করেছে।
সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সাভারের হেমায়েতপুরে ২০০ একর জায়গায় পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরীতে বরাদ্দকৃত ১৫৫ শিল্প ইউনিটের প্রথম তলার ছাদ ঢালাই করেছে মাত্র ৪৩ ট্যানারি। মাত্র ১৩ কারখানা দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাই করতে সক্ষম হয়েছে। বেজ ঢালাই শেষ করে গ্রেটবিম ও কলাম ঢালাই করেছে ২৬ কারখানা। আর মাত্র দুটি কারখানা উৎপাদনে যাওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।
অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকেও সকল প্রস্তুতি শেষ করতে পারেনি। বিদ্যুৎ, পানি ও বর্জ্য লাইনের সঙ্গে কারখানার সংযোগ দেওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বর্জ্য প্রক্রিয়া পদ্ধতির (সিইপিএস) কাজও পুরোপুরি শেষ হয়নি। কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) চারটি মডিউলের মধ্যে মাত্র দুটির কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। সিইটিপি নির্মাণের কাজ এখনও প্রায় ১৫ শতাংশ বাকি রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ছাড়া মেশিনারি স্থাপনসহ বাকি দুটির কাজ শেষ করতে আরো তিন থেকে সাড়ে তিন মাস সময় লাগবে। প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়ছে এক হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ২০০৩ সালের শুরুর দিকে গ্রহণ করা হয় তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটি। এরপর কেটে যায় পুরো একটি যুগ। এর মধ্যে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে সাত বার।
ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কারখানা সরানো সম্ভব হয়নি। তাই আবারও শিল্প মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে সময় বাড়ানোর দাবি জানাবে মালিকদের দুটি সংগঠন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এ্যাক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ) ও বাংলাদেশ ট্যানারস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)।
সোমবার শিল্পমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আর কোনো নোটিশ বা তাগিদ দেওয়া হবে না। তবে মালিকদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে- সেই বিষয়ে বুধবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ে চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পের কার্যক্রমের অগ্রগতি বিষয়ের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারিগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থানান্তরে হাজারীবাগে আর কোনো কাঁচা চামড়া ঢুকতে দেওয়া হবে না। আর সময় বাড়ানোর ইচ্ছাও নেই বিসিকের।
এ প্রসঙ্গে সোমবার দুপুরে কথা হয় এ প্রকল্পের পরিচালক আবদুল কাইয়ুমের সঙ্গে। কারাখানা স্থানান্তরে মালিকদের ২৮ বার লিখিত তাগিদ নোটিশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, বিসিক সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। সময় বাড়ানোর নির্দেশনা তাদের কাছে এখনো আসেনি। বুধবারের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সরকার সব রকম সেবা প্রদানের জন্য প্রস্তুত দাবি করে তিনি আরো বলেন, সরকারের আলটিমেটামের কারণে ইতিমধ্যে আটটি ট্যানারি বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছে। নতুন করে আরও ১৩৮ জন্য বিদ্যুতের জন্য আবেদন করেছেন। এটি একটি ভালো দিক যে, তারা আসার জন্য তৈরি হচ্ছেন।
প্রকল্প অফিস সূত্রে আরো জানা গেছে, ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরে মালিকদের ২৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে ১২৬টি ট্যানারি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬০ কোটি ২৪ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, যা মোট ক্ষতিপূরণের ২৪ শতাংশ।