র্যাকের ৭ দিনের আলটিমেটাম
প্রকাশ: ২০১৬-০৪-১২ ১১:৪৬:৪৭
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সাত দিনের সময়সীমা বেধে দিল দুদক বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স এগেইনস্ট করাপশন (র্যাক)।
সোমবার দুপুরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে এই সময় বেধে দেওয়া হয়।
র্যাকের সভাপতি মিজান মালিকের নেতৃত্বে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামালের নিকট ওই স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, দুদক একটি স্বাধীন তদন্ত সংস্থা। সাংবাদিকরাও স্ব-পেশায় স্বাধীন থেকে নির্বিঘ্নে ও ব্যক্তি লাভ-অলাভের ঊর্ধ্বে উঠে সাংবাদিকরা জাতীয় স্বার্থে সঠিক তথ্যটি গণমাধ্যমে তুলে ধরতে চায়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা জারি করে সেই পথ সংকুচিত করা হয়েছে। বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মাত্র দেড় ঘণ্টায় নির্দিষ্ট দুজন কর্মকর্তার কাছ থেকে তথ্য প্রাপ্তি একটি অবাস্তব বিষয়। কারণ তারা অনুসন্ধান, তদন্ত বা দুর্নীতি প্রতিরোধের কাজের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত নন। আবার যখন তারা তথ্য না দিতে পারেন, তখন সেই সংবাদের আর গুরুত্ব থাকে না। তারা হয়তো দুদকের পক্ষে বক্তব্য দিতে পারেন। কিন্তু বক্তব্য আর তথ্য প্রাপ্তি দুটি ভিন্ন বিষয়। সাংবাদিকদের প্রয়োজন প্রথমত তথ্য, পরে কমেন্টস। তাই র্যাক আশা করে গণমাধ্যম কর্মীদের কোনো ধরনের কর্মসূচির দিকে ঠেলে দেবে না।
র্যাকের প্রত্যাশা গণমাধ্যম কর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে দুদকের অলিখিত বাধা আগামী ১৭ এপ্রিলের মধ্যে প্রত্যাহার করবে। কারণ র্যাক ও দুদক অতীতের মতোই অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে এক সঙ্গে কাজ করতে চায়।
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন পর্যন্ত এই বিটের গণমাধ্যমকর্মীরা দুর্নীতি দমনে এই প্রতিষ্ঠানটিকে সক্রিয় করার ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা রেখে আসছে। দেশের মানুষের প্রত্যাশার জায়গা থেকে যেসব সংবাদকর্মী দুদকের সংবাদ কভার করতে আসতেন, তাদের সমন্বয়ে ২০০৫ সালে গঠন করা হয় রিপোর্টার্স এগেইনস্ট করাপশন (র্যাক)। তখন থেকে আজ অবধি র্যাক দুদকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, দুদকের সাথে এই বিটের সংবাদকর্মীদের অত্যন্ত সুসম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করে গত ৩ এপ্রিল থেকে দুদকের সংবাদ সংগ্রহে সংবাদকর্মীরা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, দুদকের এ ধরনের আদেশ নাকি ২০১২ সালেই কমিশন জারি করে। সেই আদেশের সূত্র ধরে দুদকে প্রবেশে গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর আরোপ করা হয় নিষেধাজ্ঞা! দুদকের এমন আচরণে র্যাক বিস্মিত। দুদকের এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাংবাদিক সমাজ। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, সাংবাদিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বিবৃতির পরও দুদক এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো উদ্যোগ নেয়নি। উপরন্তু সাংবাদিক প্রবেশে দুদক তার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে।
এ পরিস্থিতি দীর্ঘ দিন চলতে থাকলে একদিকে দুদকের সাথে গণমাধ্যমের দূরত্ব বাড়তে থাকবে। অন্যদিকে দুদকের কার্যক্রম ও স্বচ্ছতা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠবে। একই সঙ্গে দুদক সম্পর্কে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। তাই আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত অলিখিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য র্যাক কমিশনের সদয় বিবেচনার জন্য অপেক্ষায় থাকবে।
স্মারকলিপি প্রদানের সময়ে র্যাকের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম সাগর, প্রচার ও প্রকশনা সম্পাদক এম এ রহমান (মাসুম), প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক গোলাম সামদানী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার রিশাদ হুদা, কার্য নির্বাহী সদস্য মোর্শেদ নোমান ও সাঈদ আহমেদসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সানবিডি/ঢাকা/আরবি/এসএস