৫৬ কোটি টাকা সংগ্রহে আইপিওতে আমরা নেটওয়ার্কস

প্রকাশ: ২০১৬-০৪-১৩ ১০:০৮:৪২


Aamra-Network-Farhadপুঁজিবাজার থেকে ৫৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করবে তথ্য প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠান আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বাজারে শেয়ার ছেড়ে এই টাকা সংগ্রহ করা হবে।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিও নিয়ে আসছে আমরা নেটওয়ার্কস। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আইপিওর রোড শো। এতে সম্ভাব্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানির পরিচিতি, আর্থিক অবস্থার বিবরণ, আইপিও ইস্যুর কারণ এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

রোড শোতে জানানো হয়, আইপিওর মাধ্যমে সংগ্রহ করা অর্থ কোম্পানির ঋণ পরিশোধ, আধুনিকায়ন এবং ব্যবসা সম্প্রসারণে কাজে লাগানো হবে।

উত্তোলিত অর্থ থেকে ১২ কোটি ৩৮ লাখ ৬১ হাজার ৫৮৫ টাকা ব্যয় হবে ঋণ পরিশোধে। কোম্পানির অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য (বিএমআরই) ব্যয় করা হবে ১৫ কোটি ৫২ লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকা। কোম্পানিটি ১৩ কোটি ৮০ লাখ ৮৭ হাজার ৬৪৪ টাকা ব্যয় করে , ডাটা সেন্টার স্থাপন করবে। আর বিভিন্ন জায়গায় ওয়াইফাই হটস্পট স্থাপনের জন্য যাবে ১৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৮ হাজার ২৭১ টাকা।

৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানির ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ১৬ পয়সা। আগের বছর তা ছিল ৩ টাকা ২৬ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর কোম্পানির এনএভি ছিল ২১ টাকা ৯৮ পয়সা

আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড মূলত ব্রডব্যান্ড তথা উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা দিয়ে থাকে। গত এক দশক ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ইন্টারনেট সেবা দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতে এর নাম ছিল গ্লোবাল অনলাইন সার্ভিসেস লিমিটেড।

ইন্টারনেট সেবার পাশাপাশি ভিডিও সার্ভিল্যান্স, ভিডিও কনফারেন্স, কল সেন্টার, ওয়েবসাইট হোস্টিংসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে থাকে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অন্যসব কোম্পানির মতো আমরা নেটওয়ার্কসের শেয়ারেরও অভিহিত মূল্য ১০ টাকা। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে আইপিওতে শেয়ারের বিক্রয় মূল্য নির্ধারিত হবে। আর এর উপর নির্ভর করবে আইপিওতে কোম্পানি কতগুলো শেয়ার ইস্যু করবে।

আমরা নেটওয়ার্কসের অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ৩৮ কোটি টাকা। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ১৬ পয়সা। যা এর আগের বছর ছিল ৩ টাকা ২৬ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য বা এনএভি ছিল ২১ টাকা ৯৮ পয়সা। এর আগের বছর এনএভি ছিল ১৬ টাকা ৭৭ পয়সা।

নিয়ম অনুসারে, এখন কোম্পানির আইপিওর ইস্যু ম্যানেজার সংশ্লিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ‘নির্দেশক মূল্য’(Indicative Price) আহ্বান করবে। প্রাপ্ত মূল্যের ভারিত গড় করে চূড়ান্ত নির্দেশক মূল্য নির্ধারণ করা হবে। পরবর্তীতে এর ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে নিলামের মাধ্যমে শেয়ার বিক্রি করা হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সংরক্ষিত শেয়ার বিক্রি যে দামে শেষ হবে, সে দামে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব করা হবে।

রোড শোতে আমরা নেটওয়ার্কসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ফরহাদ আহমেদ বক্তব্য রাখেন। তিনি কোম্পানির শুরুর কথা তুলেন ধরেন।

তিনি বলেন, আমরা যখন প্রথম শুরু করি, তখন ইন্টারনেট সেবায় আকাল ছিল। সেই ধীর গতির নেট সেবা আজ এই পর্যায়ে এসেছে। এই সেবা এখন সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। এখন আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আমাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। তথ্য প্রযক্তি হলো বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় খাত। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা সেরা কোম্পানি হতে চাই। আমরা সবাইকে নিয়ে সামনে এগুতে চাই।

অনুষ্ঠানে আগতদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা।

এসময় বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা, লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার কায়েস হাসানসহ কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

আমরা নেটওয়ার্ক আইপিওতে আনতে ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছে লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।ইস্যুটির রেজিস্টারের দায়িত্বে রয়েছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।

উল্লেখ, আমরা নেটওয়ার্কস তালিকাভুক্ত হলে পুঁজিবাজারে এটি হবে আমরা গ্রুপের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান। ২০১২ সালে এই গ্রুপের প্রথম কোম্পানি হিসেবে বাজারে আসে আমরা টেকনোলজি লিমিটেড। তখন ১৪ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২৪ টাকা দরে কোম্পানিটি আইপিওতে বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করে। এর মাধ্যমে বাজার থেকে ৫১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা সংগ্রহ করে।

আইপিওতে আসার আগের বছর আমরা টেকনোলজির ইপিএস ছিল ২ টাকা ৬৩ পয়সা। ২০১৫ সালে এটি কমে হয় ১ টাকা ৬৫ পয়সা। মুনাফা কমে যাওয়ার কারণে বাজারে শেয়ারের দামও কমে যায়। মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এ কোম্পানির শেয়ারের ক্লোজিং মূল্য ছিল ২২ টাকা ৭০ পয়সা, যা আইপিও মূল্যের চেয়ে ১ টাকা ৩০ পয়সা বা ৫ শতাংশ কম।।

আমরা গ্রুপ দেশের অন্যতম বড় একটি শিল্প গোষ্ঠি। এই গ্রুপের ১১ টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তথ্য প্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন ব্যবসায় যুক্ত। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট। গোড়ার দিকে এই গ্রুপটির নাম ছিল টেক্সাস গ্রুপ।

সানবিডি/ঢাকা/এসএস