অর্থ ফেরতের নির্দেশ মানেননি রিজালের কর্মকর্তারা
প্রকাশ: ২০১৬-০৪-১৩ ১২:৫৪:৩৮
বাংলাদেশ ব্যাংকের লোপাট হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার আটকানোর নির্দেশ পাওয়ার আগেই ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের (আরসিবিসি) মাকাতি সিটি শাখা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল।
তবে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে এই অর্থ সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে ফেরত নিয়ে আসার নির্দেশনা দেওয়ার পরেও কর্মকর্তারা বিষয়টি স্বেচ্ছায় এড়িয়ে গেছেন।
মঙ্গলবার অর্থ পাচারের ঘটনা তদন্তে ফিলিপাইনের সিনেটের ব্লু রিবন কমিটিকে আরসিবিসির মাকাতি সিটি শাখার ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতো এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গোপন সুইফট কোড ব্যবহার করে ১০১ মিলিয়ন মার্কির ডলার তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে ৮১ মিলিয়ন ডলার আরসিবিসির পাঁচটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তুলে নেওয়া হয়।
বাকী ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলংকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে পাঠানো হলেও বানান ভুলের কারণে শ্রীলংকার ব্যাংক থেকে তা ফেরত পাঠানো হয়। ফিলিপাইনের ইতিহাসে অর্থ পাচারের এ ঘটনায় গত মাসে সিনেটের ব্লু রিবন কমিটি তদন্ত শুরু করে।
মঙ্গলবার সিনেট কমিটির পঞ্চম শুনানিতে দেগুইতো বলেন, ব্যাংকের ট্রেজারার রাউল তান তাকে বলেছেন, নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ হলেও এটা আরসিবিসির কোনো সমস্যা নয়।
এছাড়া আরসিবিসির আঞ্চলিক বিক্রয় পরিচালক ব্রিগিত্তি কাপিনা বলেছেন, আগের দিন অর্থ উত্তোলনের ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার পর তা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ নেই।
দেগুইতো জানান, ৫ ফেব্রুয়ারি আরসিবিসির চারটি অ্যকাউন্টে ৮১ মিলিয়ন ডলার জমা হয়েছিল। এসব অ্যাকাউন্টের সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে অর্থ ফেরত নিয়ে আসার বিষয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি প্রধান কার্যালয়ে থেকে একটি ই-মেইল আসে।
একই দিন ওই অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করার বিষয়ে আরসিবিসির কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক বার্তা পাঠিয়েছিল। তবে প্রধান কার্যালয় থেকে বার্তাটি পাওয়ার আগেই ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে নিজের কিছুই করার ছিল না বলে জানান ব্যাংকের এই প্রাক্তন কর্মকর্তা।
তিনি জানান, এ বিষয় কথা বলতে তিনি কাপিনাকে ফোন দেন এবং তাকে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে প্রধান কার্যালয়ের ইমেইল বার্তার বিষয়টি জানান। একই সঙ্গে তিনি জানান, অর্থ তুলে নেওয়ায় এ ক্ষেত্রে তার কিছুই করার নেই।
তবে অর্থগুলো যাদের কাছে রয়েছে তাদের একজন হচ্ছেন ব্যবসায়ী উইলিয়াম গো এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠান ফিলরেম। গো ব্যাংকের অনেক পুরোনো গ্রাহক। ‘আশা করি তারা এ বিষয়ে কিছু করতে পারবে।’ জবাবে কাপিনা তাকে বলেন, ‘এটা আমাদের সমস্যা নয়।’
এরপর কাপিনা ফোনটি আরসিবিসির ট্রেজারার তানের কাছে হস্তান্তর করেন। তখন তানকে দেগুইতো বলেন, ‘স্যার, আমার সমস্যা হয়েছে। কারণ যে চারটি অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে তাদের কাছ থেকে এটি ফেরত চাইতে পারছি না। কিন্তু ওই অ্যাকাউন্ট মালিকদের কাছেই অর্থ রয়েছে।’
দেগুইতো বলেন যে, এসময় তান তাকে বলেছেন, ‘এটা আমাদের সমস্যা নয়, এটা বাংলাদেশের সমস্যা।’
তবে তান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘প্রত্যাহারের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের সমস্যা সে কথা আমি তাকে (দেগুইতো) বলিনি। আমি তাকে প্রত্যাহারের নোটিসটি সম্পর্কে বোঝাতে চেয়েছি… এটা আসলে কী সেটা তাকে ব্যাখ্যা করেছি।’
সানবিডি/ঢাকা/এসএস