আদালতে শফিক রেহমানের সাথে যা ঘটল
প্রকাশ: ২০১৬-০৪-১৭ ১৮:২৫:১০
নীলাভ সুবজ রংয়ের শার্ট, বিভিন্ন রংয়ের সংমিশ্রণের চশমা, কালো রংয়ের ট্রাউজারে হাসিমাখা মুখেই শফিক রেহমানকে দেখা যাচ্ছিল কোর্টে হাজির করা আগে। শতশত শুভাকাঙ্খীদের ভীড়ের মধ্যে তিনি শনিবার বিকাল ৩টায় আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম ৩ টা ৭ মিনিটে কক্ষে প্রবেশ করেন। আদালতের নিয়মমাফিক কাজ শুরু হয়।
শফিক রেহমানের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া শারীরিক অসুস্থতা ও বয়সের বিবেচনা করে তার মক্কেলকে বেঞ্চে বসার অনুমতি প্রার্থনা করেন। বিচারক তাকে বসার অনুমতি দেন। ডেমোক্রেটিক ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক ও শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমান তার সঙ্গে বসেন।
জেনারেল রেকর্ডিং অফিসার সাব ইন্সপেক্টর জালাল উদ্দিন রিমান্ডের আবেদন পড়ে শোনান এবং দুই মিনিটের মধ্যেই তা শেষ হয়। রিমান্ড প্রার্থনাকারী তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি হাসান আরাফাত বলেন, তারা প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছে শফিক রেহমান প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও আইসিটি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার চক্রান্ত করেছিলেন।
এই ঘৃণ্য কাজের উৎসাহী, পরিকল্পনাকারী ও অর্থ সরবরাহকারী যারা দেশে ও বিদেশে এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত এবং এসম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তাকে জেরা করে বের করার প্রয়োজন রয়েছে। তার অন্য কোনো পরিচয় আছে কি না তাও পুলিশকে জানতে হবে বলে আদালতকে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
রিমান্ড প্রার্থনাকারী আরো বলেন, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা ও তাদের জোটের মিত্ররা জয়কে আমেরিকায় অপহরণ ও হত্যার চক্রান্ত করে আসছেন।
তারা পল্টনের জাসাস কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গা ও নিউ ইয়র্কসহ ভিন্ন ভিন্ন স্থানে মিলিত হয়েছেন ষড়যন্ত্র করার জন্য। মামুনের পুত্র রিজভী আহমেদকে এই পরিকল্পনায় অর্থায়নের জন্য বিএনপি ও তাদের জোটের নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বলে জানিয়েছেন। রিজভী আমেরিকায় গ্রেফতার হোন এবং যুক্তরাষ্ট্রের আদালত তাকে ৪২ মাসের কারাদ- দেয়।
বিচারের সময় রিজভী আমেরিকার আদালতকে জানান, এফবিআইকে ঘুষ দিয়ে জয়ের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন তিনি। ৩০ হাজার মার্কিন ডলারের বিনিময়ে তিনি বাংলাদেশি সাংবাদিক, রাজনৈতিক জোট ও ব্যক্তিগত গোয়েন্দাদের কাছে জয়ের তথ্য বিক্রি করে দেন। শফিক রেহমান সেই সাংবাদিক বলে রিমান্ড প্রার্থনাকারী দাবি করেন। শফিক রেহমান বাংলা দৈনিক পত্রিকা যায়যায় দিনের সাবেক সম্পাদক।
তিনি দেশে ও বিদেশে খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি। এই মামলাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাকে যদি জামিন দেওয়া হয় তবে তিনি সকল তথ্য নষ্ট করে ফাঁস করে দেবেন। দেশ ও বিদেশে মামলার প্রত্যক্ষদর্শী ও তদন্তে ব্যাঘাত ঘটাবেন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে রাখার আবেদন করছি। এর আগে শফিক রেহমানের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জামিন আবেদন করেন। তবে শুনানির পরে তা বাতিল করে দেয় ম্যাজিষ্ট্রেট। তর্কে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, শফিক রেহমান শুধু ৮২ বছর বয়সী ব্যক্তি নন। তার বিরুদ্ধে কোনো এফআইআর বা জিডিও ছিল না।
সানাউল্লাহ মিয়া শুনানিতে আরো বলেন, শফিক রেহমান বাংলাদেশের সম্মানিত একজন সাংবাদিক, মুুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। শফিক রেহমানের বাবা সায়েদুর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষক ছিলেন বলেও আদালতে তিনি জানান।
জয় অপহরণের পরিকল্পনার সঙ্গে শফিক রেহমানের কোনো ধরনের যোগসাজস ছিল না। শফিক রেহমানের দেশে ও দেশের বাইরে সুখ্যাতি রয়েছে। তিনি জামিনের শর্ত মেনে চলবেন। ২০১১ সালে সেপ্টেম্বরে ঘটনাটি আমেরিকায় ঘটেছে আর ২০১৫ সালের ৩১ মে রমনা থানায় জিডি করা হয়।
তদন্তের পরে পল্টন থানায় একই বছরের ৩ আগস্টে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। কোথায় ঘটনাটি ঘটেছে? সানা উল্লাহ মিয়া প্রশ্ন রাখেন। আইন অনুযায়ী, ১২০ দিনের মধ্যে যদি তদন্ত কর্মকর্তারা তার সংশ্লিষ্টতা না পায় তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে গন্য হবে। শুনানির পরে ম্যাজিষ্ট্রেট মাজহারুল ইসলাম পুলিশ কাস্টডিতে রেখে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে বয়স ও শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনা করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন ম্যাজিষ্ট্রেট মাজহারুল ইসলাম। –
সানবিডি/ঢাকা/এসএস