ইমরানকে ক্ষমতাবান করতে চায় আওয়ামী লীগ
আপডেট: ২০১৬-০৪-১৯ ১৪:৪৮:৩৫
কিছু কথা সময়ে বলে ফেলতে হয়। নইলে, ইতিহাসের সাক্ষী থাকেনা। কারণ, সময়টা পেরিয়ে গেলে , কিছু মিথ্যার মুখোশ খোলা কঠিন হয়ে পরে।
শাহবাগে ইমরান এইচ সরকারের ভূমিকাকে ডিফাইন করে একটা ভাষণ। খুব সম্ভবত ২১ ফেব্রুয়ারির দিনে ইমরান সরকার এই ভাষণটা দিয়ে, ৬ দফা দাবী ঘোষণা করে শাহবাগের সিট ইন মুভমেন্টকে ক্লোজ করে। এই ভাষণে ইমরান এইচ সরকার ঘোষণা দেয়, সেই দিন থেকে শাহবাগের প্রতিদিনের যে জমায়েত তা আর হবেনা এবং প্রতিদিন শুধু মাত্র বিকেল তিনটার সময়ে জমায়েত হবে। এর মাধ্যমে শাহবাগে যে সিট ইন প্রটেস্ট তার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
ইমরান এইচ সরকারের এই ভাষণটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এই ভাষণের যে ভিডিওটা প্রকাশিত হয়েছে সেখানে পরিষ্কার ধরা পরে, সরকারের ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ একজন নেতা ইমরানকে প্রম্পট করছে, “একদম স্বাভাবিক- স্বাভাবিক- আসতে বলেন, দ্রুত বলেন, স্পীকারের কাছে নিয়ে বলেন” ইত্যাদি ইত্যাদি। এবং তাকে ঘিরে ছিলেন, সরকার দলীয় পরিচিত কালচারাল এক্টিভিস্টরা।
(ভিডিওটার লিঙ্ক যেইটা আমার বইয়ে দিয়েছিলাম, সেইটা খুজে দেখলাম ডিলিট হয়ে গ্যাছে। ইউটিউবে আর একটা লিঙ্ক পেয়েছি, কিন্ত তাতে ভিডিওটার সাথে ইমরান এইচ সরকারকে নিয়ে কিছু কুরুচিপূর্ণ প্রোপ্যাগান্ডা থাকায় শেয়ার করলাম না।)
যাক বটম লাইন হচ্ছে, যারা বুঝতে চায় তাদেরকে, এই অফ দা রেকর্ড কথা গুলো প্রথম বারের মত পরিষ্কার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, ইমরান এইচ সরকার- শাহবাগে পরিষ্কার ভাবে সরকারের পক্ষ সারভ করছে- তার কোন ইন্ডিপেন্ডেন্ট সত্ত্বা নাই।
এই সত্যটা এই ভিডিওটা প্রকাশের আগে এত পরিষ্কার ছিলনা।
শাহবাগের ইন্ডিপেন্ডেন্ট যে স্পিরিট ছিল তাকে হত্যা করে, সরকারের হাতে তুলে দেয়ার যে রাজনীতি ইমরান এইচ সরকার শাহবাগের সময়ে করেছিলেন- সেইটা থেকে বের হওয়ার নৈতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক সামর্থ্য ইমরান সরকারের কখনোই ছিলনা। এখনো নাই। তাই, ইমরান সরকারের ইতিহাস, আনুগত্য, সক্ষমতা সম্পর্কে যারা জানে, তাদের কাছে পরিষ্কার বিগত বছর খানেক ধরে, একটু সরকার বিরোধী যে আলাপ ইমরান দিচ্ছেন তা সরকারের প্রয়োজনে এবং পরামর্শেই দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের একটা স্ট্রেটেজি হলো তারা অনেক গুলো গোপন হাতকে এম্পাওয়ার করে। যেই সব কাজ করলে, হাত গন্ধ হবে, গোপন হাত দিয়ে সেই কাজটা আওয়ামী লীগ সারে। এই গোপন হাত গুলোর মধ্যে সব চেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে, সেই গুলো যারা ঈষৎ সমালোচনার মাধ্যমে নিজের লেজিটিমেসি ধরে রাখে।
এই জন্যে, বাংলা পরীক্ষার দিন ইংরেজি পরীক্ষা দিতে অনাগ্রহী ইমরান, বিগত বছর খানেক ধরে কেন ঈষৎ সরকার বিরোধী আওয়াজ দিচ্ছিলেন, তা বুঝতে কামেল বুজুর্গ হতে হয়না।
কিন্ত, ইমরান এইচ সরকারের এই সরকার বিরোধী বক্তব্য গুলোকে, যখন প্রধানমন্ত্রী তনয়, ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে লেজিটিমেসি দিলেন তখন বুঝতে হবে- শাহবাগের বিশ্বাসঘাতকের বিগত এক বছরের প্ল্যান এখন নেক্সট ফেজে নেমেছে।
প্রধানমন্ত্রী তনয় গিভস আ শিট এবাউট ইমরান। এমন হাজার হাজার স্ট্যাটাস অনেকেই দিচ্ছে প্রতি দিন, আওয়ামী লীগ ডাজ নট কেয়ার।
এখন কেয়ার করছে, কারণ, আমার ধারনা, আওয়ামী লীগ ইমরান এইচ সরকারকে এম্পাওয়ার করতে চাইছে।
আমার ধারনা, আওয়ামী লীগ এখন বুজতে পারছে, তার এক পেশে ক্ষমতা বাংলাদেশের সুশীল এস্টাব্লিশ্মেন্টের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছেনা।
এবং লং টার্মে বিরোধিতার জন্যে তার একটা লেজিটিমেট ফরস লাগবে- যে সুশীল এস্টাব্লিশ্মেন্টের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
যে সরকারকে ঘিরে ঢোরা সাপের মত ঘোষ ঘোষ ফোঁস করবে, বিবিসি যার সাক্ষাতকার ছাপাবে, প্রথম আলো যার সাক্ষাতকার ছাপাবে, টক শোতে যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলবে আবার অন্য দিকে হালকা করে দুর্নীতির কথা বলবে, কিন্ত, বড় ইস্যু গুলোতে হাত দিবেনা, দুর্বল যুক্তি দিবে- যার কোন পাবলিক এক্সেপ্টেন্স থাকবেনা- শুধু সুশীল এক্সেপ্টেন্স থাকবে।
এইটার একটা ক্লাসিক একজাম্পল হলো, আমাদের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।
ইমরানকে ঠিক এই রোলটার একটা রাজনৈতিক ভারশন প্লে করার জন্যে তৈরি করা হয়েছে বিগত এক বছরে, এখন মাঠে নামানো হচ্ছে। এবং মাঠে নামানোর আগে, তার লিজিটিমিসিটাকে মজবুত করার জন্যে এখন একটা হাইলি ভিজিবল, নিরাপদ আক্রমণ করা হচ্ছে, জনমনে সিম্পাথি ক্রিয়েট করানোর জন্যে।
অনেকের কাছে এইটা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মনে হতে পারে। কিন্ত, বিগত তিন বছরের রাজনীতি গভীর ভাবে ফলো করলে, যে কারো কাছে পরিষ্কার হবে, ইমরান -সরকারের সিগনাল ছাড়া এক পাও মুভ করেনা। সেই চরম অনুগত ইমরানকে প্রধান মন্ত্রী তনয় সমালোচনা করার মাধ্যমে লিজিটিমেসি দিচ্ছেন সেইটাকে অন্য ভাবে দেখার কোন সুযোগ নাই।
লেট আস বি ভেরি ক্লিয়ার, আওয়ামী লীগ যাকে থ্রেট মনে করে, তাকে মামলা দেয়, হাজার হাজার মামলা যেন সেই কোর্টে যাইতে যাইতে হয়রান হয়ে যায়, সেইটাতেও যদি কাজ না হয় তাকে জেলে ভরে, সেইটা যদি রিস্কি হয় তাইলে গুম করে – ফেসবুক থেকে আন-ফ্রেন্ড বা আন-ফলো করেনা। দাট ইস টু সিলি ফর আওয়ামী লীগ।