মহানবী (সা.) মিরাজের রাতে যাদের জাহান্নামে দেখেছেন
:: আপডেট: ২০২৩-০২-১৮ ২১:০৮:৩৩
বিশুদ্ধ হাদিসে প্রমাণিত মহানবী (সা.) মিরাজের রাতে, স্বপ্নযোগে এবং কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় কতিপয় জাহান্নামিকে শাস্তি ভোগ করতে দেখেছেন। তিনি তাদের যেমন জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হতে দেখেছেন, তেমনি অন্য শাস্তিতেও নিপতিত দেখেছেন। তারা ছিল বিভিন্ন ধরনের অন্যায়, অপরাধ ও মন্দ স্বভাবের অধিকারী। নিম্নে এমন কিছু ব্যক্তির পরিচয় তুলে ধরা হলো—
১. পরনিন্দাকারী : আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মিরাজের রাতে আমি এমন এক দল মানুষের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, যাদের নখগুলো তামার তৈরি এবং তা দিয়ে তারা অনবরত তাদের মুখমণ্ডলে ও বুকে আঁচড় মারছে। আমি বললাম, হে জিবরিল! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা সেসব লোক, যারা মানুষের গোশত খেত (গিবত করত) এবং তাদের মানসম্মানে আঘাত হানত।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৮৭৮)
২. বদ-আমল বক্তা : আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মিরাজের রাতে আমি এমন এক দল মানুষের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম জাহান্নামের কাঁচি দিয়ে যাদের ঠোঁট কাটা হচ্ছিল। আমি বললাম, এরা কারা? তারা (ফেরেশতারা) বলল, এরা হলো পৃথিবীর সেসব বক্তা, যারা অন্যকে ভালো কাজের নির্দেশ দিত এবং নিজেদের কথা ভুলে থাকত (আমল করত না)। তারা কোরআন তিলাওয়াত করত। তারা কি বুঝবে না।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১২২১১)
৩. প্রাণীকে কষ্ট দিয়ে হত্যা করা : জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত উল্লিখিত হাদিসে আরো এসেছে, ‘এ ছাড়া জাহান্নামের মধ্যে ওই নারীকেও দেখতে পেলাম, যে একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখেছিল। এরপর এটাকে আহারও দেয়নি, ছেড়েও দেয়নি, যাতে জমিনের পোকামাকড় খেয়ে জীবন ধারণ করতে পারত। শেষ পর্যন্ত বিড়ালটি ক্ষুধায় ছটফট করে মারা গেল।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৯০৪)
৪. যে নারী সন্তানকে দুধ পান করায় না : উল্লিখিত হাদিসে আরো এসেছে, ‘আমি এমন এক দল নারীর কাছে এলাম, সাপ যাদের স্তনে দংশন করছে। আমি বললাম, এদের কী হয়েছে? সে বলল, এসব নারী তাদের সন্তানদের দুধ পান করতে বাধা দিত।’ (মুসতাদরিকে হাকিম, হাদিস : ২৮৩৭)
৫. যারা কোরআন ত্যাগ করে : সহিহ বুখারিতে বর্ণিত দীর্ঘ এক হাদিসে নবী (সা.) তাঁর স্বপ্নের বর্ণনা দেন। তাতে বলেন, ‘আমরা কাত হয়ে শোয়া এক ব্যক্তির কাছে পৌঁছলাম। দেখলাম, অন্য এক ব্যক্তি তার কাছে পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে তার মাথায় পাথর নিক্ষেপ করছে। ফলে তার মাথা ফাটিয়ে ফেলছে। আর পাথর গড়িয়ে সরে পড়ছে। তারপর আবার সে পাথরটির অনুসরণ করে তা পুনরায় নিয়ে আসছে। ফিরে আসতে না আসতেই লোকটির মাথা আগের মতো ভালো হয়ে যাচ্ছে। ফিরে এসে আবার একই আচরণ করছে। … সে হলো ওই ব্যক্তি, যে কোরআন গ্রহণ করে তা বর্জন করে। আর ফরজ নামাজ ছেড়ে ঘুমিয়ে থাকে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭০৪৭)
৬. যারা মিথ্যা প্রচার করে : উল্লিখিত হাদিসে আরো এসেছে, তারপর চিত হয়ে শোয়া এক ব্যক্তির কাছে পৌঁছলাম। এখানে দেখলাম এক ব্যক্তি লোহার আঁকড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর সে তার চেহারার একদিকে এসে এর দ্বারা তার কশ থেকে মাথার পেছনের দিক পর্যন্ত এবং একইভাবে নাকের ছিদ্র থেকে মাথার পেছনের দিক পর্যন্ত এবং অনুরূপভাবে চোখ থেকে মাথার পেছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলছে। তারপর লোকটি শোয়া ব্যক্তির অপর দিকে যাচ্ছে এবং প্রথম দিকের সঙ্গে যেরূপ আচরণ করেছে অনুরূপ আচরণ অন্য দিকের সঙ্গেও করছে। ওই দিক থেকে অবসর হতে না হতেই প্রথম দিকটি আগের মতো ভালো হয়ে যাচ্ছে। তারপর আবার প্রথমবারের মতো আচরণ করছে। …সে হলো ওই ব্যক্তি যে সকালে আপন ঘর থেকে বের হয়ে এমন মিথ্যা বলে, যা চতুর্দিক ছড়িয়ে পড়ে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭০৪৭)
৭. ব্যভিচারী ব্যক্তি : তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চলতে চলতে (তন্দুর) চুলার মতো একটি গর্তের কাছে পৌঁছলাম। সেখানে শোরগোল ও নানা শব্দ ছিল। আমরা তাতে উঁকি মেরে দেখলাম, তাতে বেশ কিছু উলঙ্গ নারী-পুরুষ আছে। আর নিচ থেকে নির্গত আগুনের লেলিহান শিখা তাদের স্পর্শ করছে। যখনই লেলিহান শিখা তাদের স্পর্শ করছে, তখনই তারা উচ্চরবে চিৎকার করে উঠছে। …তারা হলো ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণীর দল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭০৪৭)
৮. সুদখোর : উল্লিখিত হাদিসে আরো এসেছে, আমরা চলতে লাগলাম এবং একটি নদীর কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। নদীটি ছিল রক্তের মতো লাল। আর দেখলাম, সেই নদীতে এক ব্যক্তি সাঁতার কাটছে। আর নদীর তীরে অন্য এক ব্যক্তি আছে এবং সে তার কাছে অনেক পাথর একত্র করে রেখেছে। আর ওই সাঁতাররত ব্যক্তি বেশ কিছুক্ষণ সাঁতার কাটার পর সেই ব্যক্তির কাছে ফিরে আসছে, যে তার কাছে পাথর একত্র করে রেখেছে। সেখানে এসে সে তার সামনে মুখ খুলে দিচ্ছে এবং ওই ব্যক্তি তার মুখে একটি পাথর ঢুকিয়ে দিচ্ছে। তারপর সে চলে গিয়ে আবার সাঁতার কাটছে এবং আবার তার কাছে ফিরে আসছে। আর যখনই ফিরে আসছে তখনই ওই ব্যক্তি তার মুখে পাথর ঢুকিয়ে দিচ্ছে। … সে হলো সুদখোর।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭০৪৭)
এএ