ইমরান এইচের জীবনে কে এই সংগীতা ইমাম?- ৫ম পর্ব
প্রকাশ: ২০১৬-০৪-২৫ ১৬:২২:২২
বলছিলাম ইমরান এইচ গ্যাং দের রানা প্লাজা ধবশের কয়েক ঘন্টায় প্রাপ্ত কোটি কোটি টাকার হিসেব জানাব পর্ব -০৩ এ বলেছি। এর পরের কত ঘন্টা কত দিনে কত শত কোটি টাকা আসতে পারে সে হিসাবের ভার আপনাদের দিচ্ছি। যাই হোক মূল কথায় আসি আত্মসাতের কথা , মাঝখানে কিছু ইমরান প্রেমী লোকের বিশেষ কিছু কথার উত্তর দিয়ে গিয়ে ভিন্ন প্রসঙ্গে চলে যেতে হয়েছিল বলে দুঃখিত ।
২৪ এপ্রিলের আগে যতোগুলো বিশেষ দিনই এসেছিল ঠিক সেই সব দিন গুলকে সামনে রেখেই চলছিল ইমরান বাহিনীর নীরব চাঁদাবাজি । ও বেছে বেছে ঠিক সে সব ব্যাবসায়ী, শিল্পপতীদের বকরা বানাতো যাদের কালো টাকার পাহাড় ছিল, এবং দু” পক্ষই যেহেতু অসৎ তাই ওর মুখ বন্ধ রাখতেই তারাও মাসের পর মাস ওর চাহিদা মাফিক টাকা ঢেলে গেছেন বা এখনো ঢালছেন।
এর মধ্যে ২১ ফেব্রুয়ারি ২৬ মার্চ ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ) উপলক্ষে আজিজ মার্কেটের বুটিক হাউজ গুলোকে ওকে নগদ টাকাসহ ওর গংদের ড্রেস পাঞ্জাবীসহ নানা রকম পোষাক সরবরাহ করতে বাধ্য করত। মোটকথা যেই যেই দিন মহাসমাবেশ ঘোষণা হতো তার ২/৪ দিন আগে থেকে ঐ বাহিনী তৎপর হয়ে উঠত ওসব চাঁদাবাজিতে ।
এর আগেই প্রকৃত আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন বাহানায় ইমরান , বাধন, আরিফ রা সরিয়ে দিচ্ছিল , আর ততদিনে রুপম, শফিক তুহীন আগেই সরে গেছিল। তখন অবশ্য সিনিয়ার সাংবাদিক অঞ্জন রায় কে দেখতাম প্রায় ই ওর বিভিন্ন সমাবেশে মাইকে ভাষণ দিতে। আমি নিজে একজন সাংবাদিক হয়ে তার বিরুদ্ধে বলছি না বলছি কেবল যা নিজের চোখে দেখেছি, আর আমি বলছি কেন আপনারাও তো দেখেছেন টেলিভিশনের পর্দায় বা সরাসরি। খুব বেশী দিন নয় সবার মনে থাকার কথা। সে যাই হোক অঞ্জন রায়কে আমি একা দেখিনি দেখেছি আরো অনেক বাঘা বাঘা মানুষকেও তাদের নিয়ে আমার তেমন মাথা ব্যাথাও নেই। হয়ত তারা কিছুটা জানতেন ও বা জানতেন ই না !!
আর এদিকে শুরু হয়ে গেলো ভেতরে ভেতরে চাপা ক্ষোভ । প্রকৃত যোদ্ধাদের অনেকেই তখন ফেসবুকে যার যার ওয়াল থেকে কিছু কিছু প্রতিবাদী লেখা পোস্ট করতে শুরু করে দিয়েছিলো। কিন্তু তখন মিডিয়াবাজির জোরে ইমরান ভক্তরা তাঁদের বাবা/মা তুলে গালি দিতেও দ্বিধা বোধ করেনি । তাই বাধ্য হয়েই অনেকে সন্মানের খাতিরে ওয়াল পোস্ট দেয়া বন্ধ করে দিয়েছিলো ।
এমন কি যেই ৩০ জন সদস্য নিয়ে প্রথম মিটিং করে ইমরানকে মুখপাত্রর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁদের অনেকেই যেমন কবির চৌধুরী, কামাল পাশাসহ আরো অনেকেই ইমরানের সেচ্ছাচারিতা , মানুষের আবেগের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা ,চাঁদাবাজি , ব্যাক্তিগত চারিত্রিক অবক্ষয় , নেশাগ্রস্থ্যতা , ইত্যাদির কারণে ওর পাশে থেকে সরে গিয়ে আলাদা ব্যনারে আন্দোলন চালিয়েছিল ।
কিন্তু সুযোগ সন্ধানী মানুষের অভাব বোধ করি কোন কালেই কম ছিল না তাই , ঐ শুন্যস্থানটা কিন্তু পরক্ষনেই ভঁরে যেতো ওর মনের মতো লোক দিয়ে । আর ইমরানের সাথে থাকার অর্থ ছিল টেলিভিশনে চেহারা দেখতে পারা । ঐ সব ধান্দাবাজ দের জন্য সেটা ই বা কম কি ?
আর যখন চাঁদাবাজি ব্যাবসা প্রায় তুঙ্গে তখনি কিন্তু আমরা দেখেছি সংগীতা ইমামকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছিল ইমরান বাহিনী ।
এখানে আপনাদের জানার জন্য আমি আরও একটি ব্যাপার নিশ্চিত করি সেটা হচ্ছে , ব্যাক্তিগত ভাবে কোন কালেই আমার সাথে ইমরান বা ওর বাহিনীর কারো সাথেই দ্বন্দ্ব ছিল না। আবার ভাব ও ছিল না। এবং আমার ব্যাক্তিত্বের কারণেই হোক বা ভয়েই হোক ইমরান আমায় বেশ সন্মান দিয়ে “ঐক্য আপা” বলেই কথা বলতো এমন কি কখনো ওই গ্রুপের কেউ কোন রকম বাজে ব্যবহার ও আমার সাথে করার সাহস দেখায়নি ।
আর সেই সুবাদে আমি আরও নিবিড় ভাবে ওদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়ে যাই। তখন আমি আমার নিদিষ্ট স্থানে নির্বিঘ্নে রিপোর্ট করতে পারতাম ।
সংগীতা ইমামের আগমনের পর মঞ্চে দেখেছি সংগীতা বন্দনা , ইমরানসহ ওর সঙ্গীরা সবাই সংগীতা আপু বলতে বলতে মুখে ফেলা তুলছিল । আর মঞ্চের ইমামতি ও করত সে। ব্যপারটা আমার কাছে তখনি খটকা লেগেছিল কিন্তু কিছু বলিনি , কারণ তাঁতে আবার কেউ হয়তো বলেও ফেলতে পারেন যে এক নারী অন্য নারীর বদনাম করছি , তাই বাদ দিলাম ।
২৪ এপ্রিল যখন সারা দেশ থেকে / বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকার বন্যা আসছিল , ঠিক তখন টাকার দায়িত্বে ইমরান এবং তার সাথীরা সে টাকা সামাল দেওয়ার দায়িত্ব দিলো সংগীতা ইমামের হাতে । সংগীতা আর ইমরানরা সবাই তখন একেক জন কোটিপতি হয়ে গেলো,।
কিন্তু ঐ যে আগে বলেছি সাগর, তকি, মেঝবা, রনিসহ অসংখ্য কর্মী তখনো শাহাবাগে বসে রোদে পুড়ে খেয়ে না খেয়ে রক্ত , অসুধ, স্যালাইন , অক্সিজেন সহ অন্যান্য সাহায্য কালেকশনে ব্যস্ত । ওরাই আবার পালা করে সাভারে গিয়ে কেউ আহতদের সেবা করছে কেউ আবার ফিরে এসে মানুষের সাহায্য সামগ্রি সাভারে পৌঁছে দিচ্ছিল । আর সংগীতা ইমাম আর ইমরানরা ওখানেও নিজেদের আস্তানায় থেকে লোক দেখানো ব্যাস্ততা মাঝে মাঝে রক্ত নেওয়ার/ সেবা করার ফটোসেশন করে মাঝে মধ্যে সুযোগ বুঝে মিডিয়ার মাধ্যমে ।
আবার নিয়মিত ব্লগের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষকে জানিয়ে দিচ্ছিল যে তাঁরা জান প্রান উজার করে রানা প্লাজার খতিগ্রস্থ মানুষের জন্য কাজ করছে কিন্তু তাঁদের আরও সাহায্য দরকার ইত্যাদি ইত্যাদি ।
রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর বাঙ্গালী/ বিদেশী যখন ঐ অসহায় মানুষ গুলোর সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো , সেই সুযোগে ইমরানরা তখন কোটি টাকার মালিক হল । তবে এখানে মানে ঐ সময় ই ওদের এই বিশাল ধান্দা ফাঁস হয়ে যেতো যদি তখন কোন টেলিভিশন আগের মতো ওদের প্রতিদিনের কার্যকলাপ গুলো ধারন করে রাখত ।
কিন্তু ওদের ভাগ্য সেখানে ভালোই বলতে হবে তার কারণ , তখন দেশের সবগুলো টেলিভিশন তখন দিন রাত ২৪ ঘণ্টা উদ্ধার তৎপরতা , জীবিত এবং মৃতের সংখ্যা তাঁদের প্রতি মিনিটের আপডেট নিয়ে ব্যাস্ত এবং সেটাই আমরা চাচ্ছিলাম সেই মুহূর্তে ।
মানুষ গুলোর হাহাকারে আমাদের রাতের ঘুম,খাওয়া , নাওয়া সব হারাম হয়ে যাচ্ছিলো । দেশের অমন করুন মুহূর্তে কোন টেলিভিশন ওসব ছেড়ে ইমরান এর বাটপার বাহিনীর পেছনে ছুটবে বলুন ?
তবে রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে মাঝে মধ্যে কিছু টেলিভিশন শাহাবাগের প্রকৃত কর্মীদের সাহায্য গ্রহনের দৃশ্য । কিছু সাক্ষাৎকার আর সাভারে ইমরান বাহিনীর আগে থেকে সাজানো কিছু কর্মকাণ্ড অন-এয়ার গিয়েছিল । আর সেই সুযোগ টাকেই ওরা আরও বেশী কাজে লাগিয়েছিল ।
যেহেতু সারা দেশ তখন চরম শোকে দুঃখে জর্জরিত তখন কোত্থেকে কতো টাকা আসলো বা কে কতো ভাগে নিলো এসব দেখবে অথবা হিসেব চাইবে কে ?
আর হ্যাঁ যাদের যাদের আমার লিখার প্রতি বিশ্বাস না হবে তাঁরা দয়া করে নিজেদের স্মৃতির কোনা থেকে এই কথা গুলো মিলিয়ে নিন , আশাকরি আপনার মেধাবি ব্রেন মাত্র ১ বছর আগের ঘটনা গুলো ঠিক ই আপনাকে মনে করিয়ে দিবে।
হ্যাঁ হিসেব এর কথা বলছিলাম , ঐ নগদ প্রাপ্ত কোটি কোটি টাকা থেকে কয় টাকা ?
কতো জন ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে দেওয়া হয়েছে ? সে সঠিক হিসেব কি আমি বা আপনি বা অন্য কেউ কোন দিন পেয়েছে ? না পায়নি আর জীবনে দিতেও পারবেনা এটাই সত্যি । আমি আবারো বলছি কামরুজ্জামান সাগরের কাছে অনুদানের ফোন আসা টাকার পরিমান ই যদি ৬৫ কোটি টাকার হয় তবে সেটা তো ছিল দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যের হিসেব , তার পরের হিসেবে আরও কতো টাকা আসতে পারে ?
সেই হিসেবের দায়িত্ব আমি সামান্য মানুষ দিতে পারছি না , তাই আপনারই ভেবে সিদ্ধান্ত নিন ।
আচ্ছা এতো কোটি কোটি টাকায় ইমরান বাহিনী সত্যিকারের ভালো মানুষ হলে , অমন আরও ২/১ রানা প্লাজার সমান গার্মেন্টস তৈরি করেতে পারত ঠিক কিনা বলুন?
সেটাও মানলাম পারল না তবে অন্তত গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে জীবিত এবং মৃত সকল শ্রমিকের পরিবারকে ৩ মাসের বেতনের টাকা টা দিতে পারতো । তাই নয় কি ?
তাঁতে কি হতো আপনার আমার পাঠানো টাকা গুলোর সদব্যাবহার ই শুধু নয় , হাজার কালিমা ধুয়ে গিয়ে ঐ দান হতো সর্ব কালের সর্ব শ্রেষ্ঠ দান । যার দাবিদার হতো ইমরান এইচ সহ গণজাগরণ মঞ্চের সাথে সম্পৃক্ত সারা পৃথিবীর মানুষ ।
কিন্তু না মানুষ রুপি জঘন্য পিশাচ গুলো অসহায়ের প্রাপ্য টুকুও নিজেরাই আত্মসাত করে নিলো । আজ পর্যন্ত গণজাগরণ মঞ্চে আন্দোলন করা অন্যান্য ব্যানারের নেতা / কর্মীরা সেই টাকার কোন হিসেব ইমরান এইচ বাহিনী বা সংগীতা ইমামের কাছেও পায়নি। বরং কাল দিবো / পরশু দিবো বলে পাশ কাটিয়ে সময় ব্যয় করেছে । তারপরেও ওরা মরিয়া হয়ে আরও টাকা কামানর ধান্দায় লেগেই আছে ।
এরপর বাংলাদেশের যতো বিশেষ দিন গুলো এসেছে সেই সব দিনের কর্মসূচির খরচের নাম করে আবার চাঁদাবাজি চালিয়ে গেছে । অন্যান্য ব্যানারের সংগঠক রা এদিকে তখনো শুধু গণজাগরন মঞ্চের ভেতরের এই বিশাল ফাটলের কথা চেপে যাচ্ছিলো শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবী কার্যকর করার আন্দোলন কে মাথায় রেখেই । যাতে দেশের ভিতরে ঘাপটি মারা দেশদ্রোহীর দল যেন কোন ভাবেই আবার মাথা চাড়া দিয়ে না উঠতে পারে ।
আজ আর নয় …।। তবে আগামী পর্বে শেষ করব সম্প্রতি ঘটনা গুলো ও লিখবো সেখানে… কেউ কেউ আমার লিখায় দেরী সহ্য করতে পারেন না ইনবক্সে লিখেন তাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি …। ভালো থাকুন সবাই
লেখিকা: সাংবাদিক (চলবে)
সূত্র: মাকসুদা সুলতানা ঐক্য ফেসবুক