অস্বাস্থ্যকর ‘শরবত’ বিক্রির ধুম, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা

প্রকাশ: ২০১৬-০৫-০২ ১৮:৫১:৪৬


naogaon sharbot pic 2গ্রীষ্মের তাপদাহ আর ভ্যাপসা গরমে অতীষ্ঠ মানুষ। তীব্র এই গরমের অস্থিরতা থেকে মুক্তি পেতে ঠান্ডা পানীয়র প্রতি ঝুঁকছে শহরবাসী। এই সুযোগ নিয়ে নওগাঁ শহরের বিদ্যালয়গুলোর সামনে বিভিন্ন রাসায়নিক মেশানো রঙ্গিন পানি ও বরফ মেশানো লেবু শরবত বিক্রির ধুম পড়েছে। এসব দোকান থেকে বাচ্চারা শরবতের নামে পান করছে অস্বাস্থ্যকর ‘পানীয়’।

প্রতিদিনই শহরের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নওগাঁ কেডি সরকারি স্কুল, সরকারি জিলা স্কুল, সরকারি গালর্স স্কুল, বিয়াম স্কুল, পিএম গালর্সসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে রাস্তার ধারে দেদারছে অস্বাস্থ্যকর শরবত বিক্রি করছেন মৌসুমী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। পচন্ড গরমে ছায়াহীন পিচঢালা পথে চলতে ফিরতে পিপাসায় কাতর মানুষ নির্ভাবনায় পান করছে এসব শরবত। এতে শিশু ও শ্রমজীবী মানুষদের পেটের পীড়া, ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বর ও কিডনী রোগের সম্ভাবনা বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

সরেজমিনে গত সোমবার দেখা যায়, শহরের কেডির মোড়ের কাছে কাছারি রোডে স্বনামধন্য কেডি সরকারি স্কুলের মূল ফটকের সামনে দুটি ভ্যানে করে শরবত বিক্রি করছেন ইমরান ও সাইফুল ইসলাম। ড্রামভর্তি রঙ্গিন পানিতে (সিভিটা, ইসপি, প্যালিটা সফট ড্রিংক পাউডার মেশানো পানি) লেবু, বিট লবন ও বরফ মিশিয়ে প্রতি গ্লাস শরবত সাত টাকা করে এবং শুধু লেবু-বরফ মেশানো সাদা পানি পাঁচ টাকা করে বিক্রি করছেন তাঁরা। শিশু শিক্ষার্থীরা পিপাসা দূর করতে নির্ভাবনায় পান করছে এসব শরবত। ছোট একটি বালতিতে রাখা একই পানিতে বার বার গ্লাস ধুয়ে বাচ্চাদের শরবত সরবরাহ করতে দেখা যাায়।

এ দৃশ্য শুধু কেডি স্কুলের সামনেই নয়। একই সড়কে পুরাতন কালেক্টরেট চত্বরে অবস্থিত ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল বিয়াম স্কুলের সামনেও দেখা গেল একই দৃশ্য। সেখানেও শরবতের ভ্যান ঘিরে বাচ্চাদের ভীড় করে শরবত পান করতে দেখা যায়।

বিক্রেতা ইমরান জানান, প্রতি বছর গরমের মৌসুমে বিদ্যালয় ফটকের সামনে ও বড় রাস্তার ধারে ঠান্ডা শরবত বিক্রির ব্যবসা করে আসছেন তিনি। পানিতে সিভিটা, চিনি, বরফ, লেবু ও বিট লবন মিশিয়ে তৈরি করেন তাঁর শরবত। রঙ্গিন পানি ১৫-২০ দিন বিক্রি ভালই হচ্ছে। প্রতিদিন তিন থেকে চার ড্রাম শরবত ‘পানীয়’ বিক্রি করেন তিনি।

পানি ও বরফ কোথায় থেকে নিয়ে আসে- জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘সব পানি নলকূপ থেকে নিয়ে আসি। বরফ কালিতলা সাবান ফ্যাক্টরি এলাকার একটি কারখানা থেকে নিয়ে আসি।’ এর কিছুক্ষণ পরে ১৪-১৫ বছরের একটি কিশোর বালতিতে করে পানি নিয়ে আসলেন। তাকে একটু দূরে ঢেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, পৌরসভা ভবনের বাইরে একটা ট্যাব থেকে সে এসব পানি নিয়ে এসেছেন। দুই ড্রাম ভর্তি সব পানিই পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি বলে সে জানায়।

কেডি স্কুলের সামনেই কথা হয় আরেক শরবত বিক্রেতা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, গরমে তাঁর বেচাবিক্রি ভাল। সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্কুলের সামনে শরবত বিক্রি করেন। ৪টার পর কোনো দিন শহরের মুক্তির মোড় আবার কোনোদিন বাটার মোড়ে শরবত বিক্রি করেন তিনি। গরমকে পুজি করে তাঁর মতো আরও অনেকেই এই মৌসুমে বাণিজ্যে নেমেছেন বলে তিনি জানান।

কেডি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি জানানোর পর তিনি সঙ্গে সঙ্গে স্কুলের দাঁড়োয়ানকে স্কুলের সামনে থেকে শরবত বিক্রেতাদের সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাশেম জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুলগেটের সামনে অস্বাস্থ্যকর পানীয় বা শরবত বিক্রি বন্ধের বিষয়ে খুবই কঠোর। এর আগে একবার ম্যাজিস্ট্রেট এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে একজনকে জরিমানাও করেছে। কিন্তু এরা স্কুলের সামনে রাস্তায় ভ্যানে করে শরবত বিক্রি করে। এদেরকে বারবার সেখান থেকে তুলে দেওয়া সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এসব বিক্রি করে যাচ্ছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. কাজী মিজানুর রহমান বলেন, রাস্তার ধারে ভ্যানে খোলা অবস্থায় যেসব পানীয় বিক্রি করা হচ্ছে এগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে বাচ্চাদের পেটের পীড়া, সর্দি-জ্বর, ডায়রিয়া এমনকি কিডনীর সমস্যা হতে পারে।

সিভিল সার্জন একেএম মোজাহের হোসেন বুলবুল বলেন, মাছের পচন রোধের জন্য বরফ ফ্যাক্টরিতে তৈরি করা হয় সেগুলো অপরিচ্ছিন্ন, ময়লা মিশ্রিত পানি থেকে তৈরি করা হয়। ওই বরফ মানুষ খেলে বিভিন্ন রোগ হতে পারে। আবার বিভিন্ন কোম্পানির যেসব সফট ড্রিংক পাউডার পানিতে মিশিয়ে শরবত হিসেবে খাওয়া হয় সবগুলো মানসম্মত বা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এসব খেলেও বিভিন্ন রোগ হতে পারে।

তিনি পানি পিপাসা দূর করার জন্য ঘন ঘন স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি বা ডাবের পানি খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। এছাড়া এই সময় দিনে দুই বার (সকালে ও সন্ধ্যায়) গোসল করলেও শরীর ভাল থাকবে বলে তিনি জানান।

ভোক্তা অধিকার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) নওগাঁ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জাব্বার মন্ডল জানান, বিষয়টি তিনি খেয়াল করেননি। তবে এ ধরণের ঘটনা হয়ে থাকলে অভিযান পরিচালনা করে শিঘ্রই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সানবিডি/ঢাকা/সেতু/আহো