অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে সিমেন্ট তৈরির প্রধান উপাদান ক্লিংকার ও চুনাপাথর আমদানির এলসি খোলার হার বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। আর শিল্পের কাঁচামালের এলসি বেড়েছে ৩ শতাংশ।
আগামী দিনগুলোতে শিল্প ও বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত এসব পণ্যের আমদানি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যেতে দেখছি…। পদ্মা সেতু চালুর পর তার সঙ্গে আরও যোগ হবে। এখন সব উন্নয়ন কাজই হবে এই সেতুকে ঘিরে।”
শিল্পদ্যোক্তারা এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই আগামী দিনের পরিকল্পনা সাজিয়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করছেন বলে মনে করছেন জায়েদ বখত।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ২৮ হাজার ৭৮৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ের পদ্মা সেতু চালু হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়বে।
এরইমধ্যে প্রকল্পের ৩৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, ২০১৮ সালের মধ্যে সেতু চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) হিসাব ধরে যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।
এই ধারা অব্যাহত থাকলে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের ‘ঘর’ অত্রিক্রম করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজকে ‘অনন্য দৃষ্টান্ত’ অভিহিত করে তিনি বলেন, “আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আমরা পদ্মা সেতুর কাজ সমাপ্ত করতে পারব।”
এছাড়া ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত করতে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের কথাও বলেন অর্থমন্ত্রী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য তিন হাজার ১৫৬ কোটি ৬০ লাখ (৩১.৫৬ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খোলা হয়েছে।
এই অংক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ২৯ শতাংশ কম।
# এই সময়ে চাল আমদানির এলসি কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ; গম কমেছে ২২ দশমিক ২৯ শতাংশ; জ্বালানি তেলে ৪০ দশমিক ২১ শতাংশ।
# মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
# বড় অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে চাহিদা থাকায় সিমেন্ট তৈরির প্রধান উপাদান ক্লিংকার ও চুনাপাথর আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
# রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের কাপড় আমদানির এলসি বেড়েছে ১১ শতাংশ।
# ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি বেড়েছে ৮ শতাংশের মতো।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত মনে করেন, ‘স্থিতিশীল’ রাজনৈতিক পরিবেশে বিনিয়োগের ‘অনুকূল পরিবেশ’ ফিরে আসায় মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বাড়ছে।
পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞ (ফাইল ছবি)
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু, মগবাজার-মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভার, মেট্রোরেলসহ কয়েকটি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়েছে। এ সব মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দেশের শিল্প খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটবে।
“এ সব বিবেচনায় নিয়েই আমাদের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা বিদ্যমান শিল্প প্রতিষ্ঠানের পাশপাশি নতুন নতুন শিল্পের জন্য ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি করছেন।ভবিষ্যৎ ব্যবসা মাথায় রেখেই তারা এটা করছেন।”
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগের একটি ‘সুষ্ঠু পরিবেশ দেখা দিয়েছে’ মন্তব্য করে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, “এ রকম পরিবেশে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বাড়া স্বাভাবিক।”
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, “ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি বৃদ্ধির এই তথ্য দেশের উৎপাদন সক্ষমতার এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বৃদ্ধি দেশের বিদ্যমান উৎপাদন সক্ষমতার ব্যবহার বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।”
মুহিত বলেন, অর্থবছরের শুরুতে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগে কিছুটা স্থবিরতা থাকলেও বর্তমানে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ, মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানিতে ঋণপত্র খোলার প্রবৃদ্ধি ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের অন্তঃপ্রবাহ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই স্থবিরতা দূর হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
“এছাড়া সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক উদ্বেগের প্রশমন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি-পরিবহনসহ ভৌত অবকাঠামো খাত ও দক্ষতা উন্নয়নে আমাদের চলমান উদ্যোগ ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করবে বলে আমি মনে করি।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই-মার্চ সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৯ শতাংশ।
এই নয় মাসে বাংলাদেশে নিট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১৩৪ কোটি ২০ লাখ (১.৩৪ বিলিয়ন) ডলার। এই অংক গত অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ের চেয়ে ২২ শতাংশ বেশি।
সানবিডি/ঢাকা/মেহেদী/এসএস