কবর থেকে মর্গে, সর্বত্রই নির্যাতিতা তরুণী!
প্রকাশ: ২০১৬-০৫-১১ ২১:৩২:১২
কৈশোরেই চূড়ান্ত অত্যাচারের শিকার দু’জনে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের আয়েশা (ছদ্মনাম) আর উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের জুলেখা (পরিবর্তিত নাম)।
আয়েশাকে অপহরণ করে এক বছর ধরে বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরিয়ে, লাগাতার গণধর্ষণ করে দিল্লিতে ফেলে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। তত দিনে ধর্ষকদের কাছ থেকেই এইচআইভি সংক্রমিত হয়েছে তার শরীরে। দিল্লির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সৌজন্যে সে বাড়িতে ফিরতে পেরেছে।
আর কিশোরী জুলেখাকে বাড়ি থেকে ভুলিয়ে নিয়ে গিয়ে হাওড়ার বিভিন্ন হোটেলে দেহ ব্যবসার কাজে লাগানো হয়েছিল। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। সেই মামলা এখনও চলছে। সেই মামলার মূল সাক্ষী জুলেখাই। সম্প্রতি অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্যু হয় তার। কিন্তু ডেথ সার্টিফিকেট বা ময়না-তদন্ত ছাড়াই তাকে কবর দিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে সিআইডি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে আদালতে আবেদন জানায়, মেয়েটির দেহ কবর থেকে তুলে ময়না-তদন্ত করিয়ে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হোক। বারাসত আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার কবর থেকে দেহ তুলে ময়না-তদন্ত করাল পুলিশ।
জীবনে যখন দুর্যোগ ঘনিয়ে আসে, আয়েশার মতো জুলেখাও ছিল স্কুলছাত্রী। সেটা ২০১৪। জুলেখা পড়ত দশম শ্রেণিতে। দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় সে। তার পরিবার বারাসত থানায় অভিযোগ করে। পুলিশ তদন্তে নামলেও কিশোরীর হদিস মিলছিল না। আদালত তখন সিআইডি-কে তদন্তভার দেয়। বেশ কিছু দিন পরে মেয়েটির কাছ থেকেই ফোন পেয়ে দূর সম্পর্কের ওই আত্মীয়কে গ্রেফতার করা হয়। জানা যায়, মেয়েটিকে প্রথমে কলকাতার সোনাগাছিতে বেচে দেওয়া হয়েছিল। তার পরে এক দালাল তাকে হাওড়ার বিভিন্ন হোটেলে দেহ ব্যবসায় লাগায়।
পুলিশ গাদিয়াড়ার এক হোটেল থেকে অন্য ছ’টি মেয়ের সঙ্গে উদ্ধার করে ওই নাবালিকাকে। হোটেলের মালিক, ম্যানেজার, দালাল-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়। জুলেখাকে পাঠানো হয় ব্যারাকপুরের হোমে।
মাস ছয়েক আগে ১৮ বছর বয়স হতেই দত্তপুকুরে বাড়িতে ফিরে আসে মেয়েটি। অজের আলি নামে দত্তপুকুরের কালিয়ানির এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বিয়েও দেন বাড়ির লোকজন। কিন্তু কিছু দিন পরেই পুরনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্বশুরবাড়িতে মেয়েটির উপরে অত্যাচার শুরু হয় বলে অভিযোগ। সহ্য করতে না-পেরে মাস দুয়েক আগে অ্যাসিড খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে সে। মেয়েটির পরিবার জানায়, চার দিন হাসপাতালে থাকার পরে শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই জুলেখাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান।
তার পর থেকে মেয়েটির খোঁজ পাচ্ছিলেন না বাপের বাড়ির লোকজন। থানার দ্বারস্থ হন তাঁরা। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, জুলেখাকে ৩ এপ্রিল কবর দেওয়া হয়েছে বাড়ির পাশেই। তার মৃত্যু রহস্যজনক। কিন্তু ডেথ সার্টিফিকেট নেওয়া হয়নি, হয়নি ময়না-তদন্তও। মেয়েটির স্বামী পলাতক। অপহরণ করে দেহ ব্যবসায় নামানোর মামলায় সাক্ষী জুলেখা। তার অপমৃত্যুর তদন্তের জন্য আদালতের কাছে কবর থেকে দেহ তোলার অনুমতি চায় সিআইডি। এ দিন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দেহ তুলে ময়না-তদন্ত করা হয়।
সানবিডি/ঢাকা/আহো