দেশের শিক্ষা ব্যব¯হা আজ রাজনীতির শিকলে বাঁধা
প্রকাশ: ২০১৬-০৫-১৪ ১৭:৫৬:৫৩
শিক্ষা মানব জীবনের অলংকার। যা মনন জগতকে বিকশিত করে। মননশীলতা ও রুচিকে উন্নতর স্তরে উপনীত করে। তবে সে শিক্ষা হতে হবে বিজ্ঞান ভিক্তিক, সার্বজনীন, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন।
দেশের শিক্ষা ব্যব¯হার ব্যপক প্রসার ও আমূল পরিবর্তন ঘটেছে এটা অনস্বীকার্য। এক সময় উচ্চ শিক্ষার জন্য কেবল কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর নির্ভর করতে হতো পুরো জাতিকে, যার ফলে অনেকেই যোগ্যতা থাকা সত্বেও উচ্চ শিক্ষা নিতে পারতো না। তবে কালের পরিক্রমায় দেশে আজ ৯১ টির মত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যা এ দেশের উচ্চ শিক্ষা ব্যব¯হার জন্য এক আলোকবর্তিকা স্বরুপ।
কিন্তু আমাদের এ শিক্ষা ব্যব¯হা কতটা মানসম্পন্ন ? কতটা রাজনীতির বেড়াজাল মুক্ত ? কতটা সার্বজনীন ? সে প্রশ্ন রয়েই যায়।
এক সময় সৎ ও মেধাবীরাই শিক্ষাকতার মত মহান পেশায় আসতেন। বর্তমানে সে সংখ্যা একেবারেই নগন্য। কারন বর্তমানে শিক্ষক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে শুরু করে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত অর্থ, পেশী শক্তি আর রাজনৈতিক প্রভাবের কালো হাতছানি। ফলে এক সময়ের কিংবদন্তিতুল্য শিক্ষকের আর দেখা মিলছে না।
শিক্ষার মতো অপরিহার্য মৌলিক চাহিদা অদক্ষ, অপাত্রের হাতে পড়ে আজ ব্যবসায়িক পণ্যে পরিনত হয়েছে। যা আমাদের মোটেও কাম্য ছিল না।
যদিও মানব অধিকার সম্পর্কিত আন্জাতর্তিক ঘোষনার ২৫ নং ধারা অনুযায়ী নাগরিকদের উপযুক্ত শিক্ষাদানের ব্যব¯হা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমাদের মনে রাখতে হবে,”শিক্ষকের জন্য বিনিয়োগ, ভবিষ্যতের বিনিয়োগ।” মেধাশূন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা খুব কমই দেয়া হচ্ছে। ফলে শিক্ষক রুপী হায়নারা নিজের ছোট বোন কিংবা সšতানতুল্য ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি ঘটাচ্ছে।
শিক্ষা আজ এক মহা বানিজ্যে পরিনত হয়েছে। শিক্ষকরা ক্লাসে পড়ানোর চেয়ে কোচিং নিয়ে বেশী ব্য¯ত থাকেন। শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে বেশী নম্বর পাওয়ার আশায় অনেকটা ব্লাকমেইলিংয়ের শিকার হয়ে শিক্ষকদের কাছে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও জ্ঞান অর্জনের চেয়ে গোল্ডেন এ+ কিংবা এ+ পাওয়া মূখ্য বিষয়ে পরিনত হয়েছে।
অন্য দিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেও সেখানে শিক্ষার পরিবেশ কিংবা মান রক্ষিত হচ্ছে না। উচ্চ শিক্ষার ব্যাপক চাহিদার কারনে কিছু অদক্ষ ব্যক্তি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে রাতারাতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে বসেন। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি,কারিকুলাম আর শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ অত্যন্ত নিন্ম মানের এবং সেখানে চলে অবাধে সার্টিফিকেট বাণিজ্য। এ দের প্রভাবে যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা অত্যন্ত ভালো তাদের মর্যদা ও ম্লান হয়ে যায়।
বাজেটে শিক্ষা খাতে বেশ কয়েক বছর সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেখানো হলেও অপরিকল্পিত ব্যবহার এবং ব্যাপক দুর্নীতির আর রাজনেতিক দুর্বৃত্তায়নের কারনে আসল লক্ষ্য অর্জনে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। নানা মহলের দাবি সত্ত্বেও সরকারের সদচ্ছার তেমন অগ্রগতি হচ্ছে না।
আমাদের দেশে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ নিয়ে রাজনৈতিক সদচ্ছার অভাব পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু বিভিন্ন পাবলিক পরিক্ষায় পাশের হার বাড়িয়ে সস্তা বাহবা নেয়ার কোন কমতি নেই।
এবার আসি প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথায়,
নকল, প্রশ্নপত্র ফাঁস বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যব¯হায় এ যাবত কালের সবচেয়ে ভয়াবহ অন্ধকার দিক। পৃথিবির অন্য কোন দেশে এর নজির আছে বলে আমার জানা নেই। কতিপয় অসাধু চক্র রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অর্থের লোভে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মত জঘন্য কাজটি করে যাচ্ছে একের পর এক। অভিভাবকদের হাজারও দাবির সত্ত্বেও সরকারের দৃশ্যমান কোন প্রতিকার চোখে পড়ছে না। বরং সরকারের দায়িত্বশীলদের নানা ধরনের বিভ্রান্তিমূলক কথায় এ অসাধু চক্র এ ধরনের কাজে আরো বেশী উৎসাহিত হচ্ছে।
তথা কথিত ছাত্র রাজনীতি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যব¯হার স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত করছে। ছাত্র শিক্ষকের অপরাজনীতি সঙ্গে সংশ্লিষ্ঠতা উচ্চ শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত করছে। সময় সময় জড়িয়ে পড়ছে দ্বন্দে। অপরাজনীতি নামে কিছু অবৈধ ছাত্ররা অ¯ে£র ঝনঝনানিতে শিক্ষার পরিবেশ একেবারেই ধবংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে।
অপরাজনীতির ছত্রছায়ায় ছাত্ররা আজ হল দখল থেকে শুরু করে শিক্ষকের উপর হামলা করছে দফায় দফায়। ফলে মাসের পর মাস বন্ধ থাকছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
শিক্ষক সমাজ আজ বৈষম্যের শিকার। আমরা দেখতে পাই শিক্ষকরা যখন দাবি আদায়ে পথে নামছে তখন পুলিশের কিল ঘুষি খাচ্ছে, পিপার স্পে করা হচ্ছে শিক্ষকদের উপর। কিšতু এসব কেন হচ্ছে ? রাষ্ট্রের কাছে রাষ্ট্রের নাগরিকদের দাবি থাকতেই পারে। প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই আজ দলীয় ক্যাডারদের রাজনৈতিক আ¯তানায় পরিনত করেছে।
ভবিষ্যত প্রজন্মকে অপরাজনীতি শিক্ষা দেয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। আমরা শিক্ষকরা যদি ছাত্র দের সঠিক রাজনীতি শিক্ষা না দেই তাহলে ভবিষ্যতে রাজনীতিবিদ কারা হবে এবং রাজনীতিবিদ যদি গড়ে না ওঠে তাহলে অপরাজনীতি চলবে। অশিক্ষিত, কুশিক্ষিত লোকেরাই আমাদের শাসন করবে। তাতে আমরা শুধুই ক্ষতিগ্র¯ত হবো।
দেশের উন্নয়নে শিক্ষার পরিবেশের জন্য সরকারকে আরো মনোযোগী হতে হবে। সুখী সমৃদ্ধ শিক্ষিত বাংলাদেশ গড়তে হলে সরকারকে অবশ্যই শিক্ষার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
একটি উন্নত দেশ ও জাতি গঠনে শিক্ষার ভূমিকার গুরুত্ব লিখে কখনও শেষ করা যাবে না। সমগ্র বিশ্বের দিকে খেয়াল করলে আমরা দেখতে পাই যে জাতি বা দেশের শিক্ষার অবকাঠামো ও শিক্ষার সামগ্রিক যত উন্নত দেশ ও জাতি হিসেবে সার্বিক ভাবে তারাই উন্নত স্বয়ংসম্পূর্ন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো সেই শিক্ষাই আজ রাজনীতির দাবানলে শিকল বন্দি। কেন কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীনতা। কবে মুক্তি পাবে রাজনীতি নামক এই দাবানল থেকে।
আজ দায়ী করছি আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যব¯হা কে, সর্বপরি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের যারা এ আইন প্রনয়নের দায়িত্বে সার্বক্ষনিক নিয়োজিত। আমাদের দেশে বাল্যকাল থেকে শিখানো হয় বড় হয়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবো কিন্তু কখনও শিখানো হয় না বা বইতে লিখেন না বড় হয়ে রাজনীতিবিদ হবা। তাই কেউ সে ইচ্ছা কখনও পোষন করেন না। অথচ এই ক্লাসের ভালো ছাত্র গুলো যদি বড় হয়ে রাজনীতিবিদ হতো তাহলে এরা পার্লামেন্টে গিয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে, সমাজের জন্য ,দেশের জন্য কিছু যুগপযোগী ভূমিকা পালন করতে পারতো।
বলতে গেলে ক্লাসের যে ছাত্র টি ভালো ফলাফল করার অভাবে ঝরে পড়ে,এক সময় দেখা যায় সে ছাত্রটি রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে। তাহলে সে ছাত্রটি থেকে সমাজ, জাতি এবং দেশ কি আশা করতে পারে ? একবার ভেবে দেখবেন কি ? তাই আমি এ লেখার মাধ্যমে সরকার, বিভিন্ন প্রকাশনা সং¯হা কে অবহিত করবো ছাত্রজীবনের লক্ষ্য অনুচ্ছেদে বড় হয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক এর সাথে দক্ষ রাজনীতিবিদ হবো এবং এর গুরুত্ব তুলে ধরতে । তাহলে সমাজ, জাতি ও দেশ সবাই উপকৃত হবে।
অনুরোধ করবো রাজনীতিবিদদের নগ্ন থাবা থেকে শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন কে মুক্ত রাখতে । রাজনৈতিক বিবেচনায় অযোগ্যদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। তাহলে একদিন দেশের শিক্ষা ব্যব¯হার বেহাল দশা থেকে মুক্তি পাবে। মনে রাখতে হবে জাতীয় উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো দেশের সকল জনশক্তিকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা। যথাযোাগ্য ও উপযুক্ত জনশক্তি তৈরীতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। শুধু শিক্ষাই পারে দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রুপান্তরিত করতে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস