নানামুখী সমস্যায় নোবিপ্রবির আবাসিক ছাত্রীরা
প্রকাশ: ২০১৬-০৫-১৬ ১৬:৩৮:৫০
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৪র্থ বছরে উদ্ভোধন করা হয় ৩৫২ আসন বিশিষ্ট হজরত বিবি খাদিজা নামের নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একমাত্র ছাত্রী হল। অনেক সময় কেটে গেলেও আজও নানা সমস্যায় জর্জরিত আবাসিক ছাত্রীরা। সীট সংকট, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ,ডাইনিং এ নিন্ম মানের খাবার, খাবার পানির অভাব অন্যতম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর প্রায় এক তৃতীয়াংশই ছাত্রী।হল অফিসের তথ্য মতে বর্তমানে হলে প্রায় ৭০০ ছাত্রী থাকতে হচ্ছে। ফলে প্রায় প্রত্যেক রুমেই ৮-৯ জন করে থাকতে হচ্ছে। কমনরুমকে ব্যবহার করা হচ্ছে গনরূম হিসেবে। সেখানেও গাদাগাদি করে থাকে প্রায় ৭০-৮০ জন মেয়ে। তাতেও সমাধান না হওয়াতে একাডেমিক ভবন-২ এর চতুর্থ তলায় কিছু শিক্ষার্থীর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হলে অধিক পরিমাণে শিক্ষার্থী রাখা হলেও সে হারে বাড়ানো হয়নি পরিচ্ছন্ন কর্মি এবং কেয়ারটেকার সংখ্যা। ফলে হলের শৌচাগার গুলো অধিকাংশ সময়ই নোংরা ও দুর্গন্ধ হয়ে থাকে। হলের বাইরের পরিবেশও যথেষ্ট নোংরা থাকার কারণে পোকামাকড় ও মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ ছাত্রীরা। শৌচাগারগুলোর অবস্থাও বেহাল। বেসিনের সামনের আয়না নেই, বেসিন নষ্ট, কল নষ্ট, দরজার সিটকানি নেই ইত্যাদি বেহাল দশা।
এছাড়া প্রায় প্রতিদিন ভোর বেলাই দেখা যায় শৌচাগারে পানি নেই, ফলে ভোরে নামাজ পরার ক্ষেত্রে পরতে হয় বিপাকে। এই সমস্যা চরম আকার ধারন করে গারমকালে। হলের ভেতরের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারনে নানা সময় ছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পরে। আর হলের বাইরে তৈরি হয়েছে ডাস্টবিন। হলের গেট দিয়ে বের হলে দুর্ঘন্ধের কারনে দম আটকে যায়। অপরিস্কার পরিবেশের কারনে মশা ও অন্যান্য পোকামাকড়ের উপদ্রবে অতিষ্ঠ ছাত্রীরা। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন ছাত্রী বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামরে আক্রান্ত হচ্ছে। হলের বাইরের ও ভেতরের পরিষ্কার করার অভিযোগ করা হলেও প্রশাসনের সেই দিকে কোন ভ্রুক্ষেপই নেই।
গরমের সময় ছাত্রীদের যে সমস্যাটি বেশি পোহাতে হয় তা হল খাবার পানি। ৬০০-৭০০ শিক্ষার্থীর জন্য ২০ লিটারের ৭০ টি পানির জার দেয়ার কথা থাকলেও অর্ধেকও দেয়া হয় না বলে অভিযোগ করে ছাত্রীরা। ফলে অধিকাংশ ছত্রীকেই বাহির থেকে পানি কিনে খেতে হয়। তাছাড়া অধিকাংশ সময় ব্যাবহারের জন্য সাপ্লাইর পানিও পায় না ছাত্রীরা।
হলে সবচেয়ে যে অভিযোগটি প্রকট আকার ধারণ করেছে তা হচ্ছে খাবার সমস্যা। ডাইনিংয়ের খাবারের মান নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। নিন্ম মানের খাবার দিয়ে নেয়া হচ্ছে বেশি দাম। ফলে অধিকাংশ ছাত্রীরাই রুমে রান্না করে খায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের এক আবাসিক ছাত্রী বলেন “৪ জনের রুমে ৮-৯ জন করে থাকতে হচ্ছে। এর মধ্যে আবার প্রত্যেকেই রান্না করে খাওয়ার ফলে রুমগুলোকে ছোট বস্তি বাড়ি বলা চলে”।
হলে ৪টি দৈনিক পত্রিকা রাখা হয় বলে জানালেও নিয়মিত তা দেয়া হয় না। হলের ডাইনিং এ একই সাথে খাওয়াদাওয়া, পড়ালেখার ব্যবস্থা করায় কোনটাই ঠিক মত হয় না। আবার টিভি দেখার ব্যবস্থাও ঐ ডাইনিং রুমেই। হলে অবসর সময় কাটানোর জন্য নেই বিনোদনের কোন ব্যবস্থা।
অপরদিকে একাডেমিক ভবন-২ এর চতুর্থ তলায় থাকা ছাত্রীরা হলের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নিরাপত্তা বিষয়েও আছে তাদের অভিযোগ। বিভিন্ন সময় বহিরাগতরা ছাত্রী হলের সামনে মোটরসাইকেল মহড়া দেয় এবং ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে।
উপরোক্ত সকল সমস্যা নিয়ে হযরত বিবি খাদিজা হলের প্রোভস্ট ভক্ত সুপ্রতিম সরকার পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবকে দ্বায়ী করে সানবিডি২৪ কে বলেন, হলের ভেতরের এবং বাইরের পরিবেশের পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য ইতিমধ্যে ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু হলের ভেতরে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকার কারনে সবসময় তা সম্ভব হয় না। তিনি আরো জানান অতিসিগ্রই নতুন ছাত্রী হলের কাজ শেষ হয়ে গেলে ছাত্রীদের আবাসন সমস্যা বহুলাংশে দূর হবে।
সানবিডি/ঢাকা/সাদী/এসএস