এবার পরীক্ষা কেন্দ্রে যৌন হয়রানির অভিযোগ
প্রকাশ: ২০১৬-০৫-১৬ ১৯:০৯:৪৮
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কাঁটাশুর এলাকার আলহাজ্ব মকবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পরীক্ষার হলে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।
ধানমণ্ডির শুক্রাবাদে নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের বিবিএ’র প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষার সেন্টার পড়ে মকবুল হোসেন কলেজে। পরীক্ষা চলাকালীন পরপর দুই দিন একই ঘটনা ঘটায় রবিবার এ বিষয়ে মুখ খোলে ছাত্রীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিগত ৮ মে থেকে ওই কলেজে পরীক্ষা দিচ্ছে। তখন থেকেই পরীক্ষার হলে শিক্ষক মিজানুর রহমানের দ্বারা শারীরিক হয়রানির কারণে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে পারছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘গত ৮ ও ১৫ তারিখ ৫০১নং কক্ষে ওই শিক্ষক অযথা আমাদের ঘাড়ে হাত দিয়ে চাপ দেয়। আমরা নিষেধ করা স্বত্ত্বেও তিনি ধমক দিয়ে আবার আমাদের হাতে ও পিঠে অনবরত চাপ দিতে থাকে।’ ওই শিক্ষক পরীক্ষার খাতা স্বাক্ষর করার সময় মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে পিঠে হাত দেয় বলেও জানান তিনি।
‘এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে আমরা অভিযোগ করার পরও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি,’ অভিযোগ করেন সেই শিক্ষার্থী।
কিন্তু এ অভিযোগ অস্বীকার করেন অভিযুক্ত শিক্ষক মিজানুর রহমান। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আমি এমন কোনো ঘটনা ঘটাইনি। পরীক্ষার হলে দেখাদেখি ও নকল করতে দেইনি। আমার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শক্তভাবে পরীক্ষা নিয়েছি, এ কারণে দু-একজন মিথ্যে অভিযোগ করতে পারে। এমন কিছু করলে হলের দু-একজন না অন্য শিক্ষার্থীরাও দেখত।’
এ বিষয়ে নিউ মডেল কলেজের উপাধ্যক্ষ আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ওই শিক্ষকের বিষয়ে আগেও এমন অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আমরা সেই কলেজের কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
এ ব্যাপারে আলহাজ্ব মকবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ আফম রেজাউল হাসান বলেন, ‘আমরা এমন অভিযোগ আগে পাইনি। গতকালই এমন অভিযোগ পেয়েছি। গতকাল ৪টার দিকে নিউ মডেলের প্রিন্সিপাল ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের গায়ে প্রথম দিন হাত দিয়েছে। পরের দিন যখন আবার একই ঘটনা ঘটেছে, তখন আমাকে সেই ছাত্রী জানিয়েছে। আপনি চাইলে আমরা লিখিত অভিযোগ দিব।’
অধ্যক্ষ আফম রেজাউল হাসান আরও বলেন, ‘খবর নিয়ে জানলাম মিজানুর রহমানই সেই রুমে ডিউটি করেছেন। আমি ওই স্যারকে বলেছি, আপনি আমাকে মুখে জানিয়েছেন তাতেই যথেষ্ট। এ বিষয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স রয়েছে। এ ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে লিখিত অভিযোগ প্রয়োজন, তাই আমরা লিখিত অভিযোগ চেয়েছি।’
সোমবার দুপুরে হয়রানির শিকার শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘কলেজের চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ করলাম। স্যার বললেন, এখানে যেহেতু তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ আসছে, আর কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আসেনি। এখানে একটাই অপশন। প্রমাণের কিছু নাই। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।’
অধ্যক্ষ রেজাউল বলেন, ‘তারপর সিনিয়র শিক্ষকদের পরামর্শক্রমে সোমবার বেলা ১টা ১০ মিনিটে সময় ওই শিক্ষককে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তার সামনে ২টা অপশন আছে, হয়তো সে নিজে অব্যাহতি চাইবে নয়তো লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা বরখাস্ত করব। তারপর এ অভিযোগের ভিত্তিতে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।’
‘আমরা অভিযুক্তের কথা না শুনেই চেয়ারম্যান স্যারের কথা অনুযায়ী তাকে কলেজ থেকে বের করে দিয়েছি। এখন তার ওপর ডিপেন্ড করবে সে স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়বে কিনা অথবা আমরা তাকে বহিষ্কার করব কিনা। সে আর আমাদের কলেজে ঢুকতে পারবে না।’
সানবিডি/ঢাকা/আহো