‘রোয়ানু’: সারাদেশে মৃত ২৫

আপডেট: ২০১৬-০৫-২২ ১৭:৫৫:২২


rayanuঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে ভারী বর্ষণ ও ঝড়ে গাছচাপা পড়ে শনিবার সারা দেশে  ২৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে মা-ছেলেসহ বারোজন, ভোলায় শিশুসহ তিনজন, পটুয়াখালীতে একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন, কক্সবাজারে একজন মারা গেছেন।

আমাদের চট্টগ্রাম অফিস ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

চট্টগ্রাম: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র তান্ডবে চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকাসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডবে দিনভর নগরী ও জেলাতে অন্তত ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাশঁখালিতে ৭ জন, সীতাকুণ্ডে ২ জন এবং নগরীতে ৩ জন মারা যায়। এসব এলাকায় নিখোঁজ রয়েছে আরো অন্তত ২০ জন। লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে জেলার উপকূলীয় এলাকা বাঁশখালির আনোয়ারা, সন্দ্বীপ, সীতাকুন্ড- উপজেলা। জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। এসব এলাকার শত শত বসত ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। গৃহহারা হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।

ঘুর্ণিঝড় রোয়ানু বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানতে শুরু করে। এসময় সাগরে জোয়ারসহ পূর্ণিমার প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করে। শুরুতে ৬৫ থেকে ৭০ মাইল বেগে বাতাস বইতে শুরু করলে পতেঙ্গা এলাকায় সৈকতের দোকানপাট উড়িয়ে নিয়ে যায়। এসময় বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে থাকে। বাঁশখালী ও সীতাকুন্ডের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। ঝড়ের বেগে গাছপালা ভেঙ্গে নগরী ও উপকূলের বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়।

ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ জানান, রোহানুর প্রভাবে সৃষ্ট ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় গাছচাপা পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে সীতাকুণ্ড ও কুমিরা স্টেশন থেকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি দল ঘটনাস্থলের গিয়ে উদ্ধার কাজ চালায়।

নিহতরা হলেন—মা কাজল (৫০) ও ছেলে বেলাল প্রকাশ বাবু (১০)। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে নগরীর ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্সের পেছনে টিনের চাল পড়ে মারা যায় রাজিব (১৩) নামে এক শিশু। এছাড়া নগরীর ইপিজেড আকমল আলী রোডের বেড়িবাধ এলাকায় থেকে আবুল হোসেন (৪৫ ) ও তার ছোট ভাই নূরুল আবছার (৪২) এর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পানিতে ডুবে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

দুপুরে দুই ভাই সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয় বলে স্থানীয় সুত্রে জানা যায়। তাদের মধ্যে সন্ধায় নূরুল আবছারের লাশ পাওয়ায় যায়। এর এক ঘন্টা পর রাত পৌনে ৮টায় নূরুল আবছারের লাশ পাওয়া যায় বেড়িবাঁধ এলাকায়। তাদের গ্রামের বাড়ি বাঁশখালি। খবরটি জানিয়েছেন নগরীর ইপিজেড থানা পুলিশ ওসি আবুল কালাম আজাদ।

এদিকে জেলার প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে জেলার বাঁশখালী উপজেলায় অন্তত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও পাঁচজন নিখোঁজ হওয়ার খবর জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন জানান, শনিবার দুপুরে ঝড় উপকূল অতিক্রম করার সময় সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে বাঁশখালীর খানখানাবাদ ইউনিয়নে পাঁচ জন এবং ছনুয়া ইউনিয়নে একজনসহ ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘জলোচ্ছ্বাসের পানি বেড়িবাঁধ ভেঙে বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়ে। এতে পানিতে ডুবে ওই ছয়জন নিহত হয়। এছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে আরও পাঁচজন নিখোঁজ আছে বলে স্থানীয়দের মাধ্যমে শুনেছি। নিহতদের মধ্যে ২ জনের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন— খানখানাবাদ এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিক(৪০) ও ছনুয়া ইউনিয়নে মো. হারুন তাহেরা বেগম (২৫)।

কক্সবাজার: কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের সোল্লারপাড়া গ্রামে জোয়ারে ভেসে আসা ফিশিং বোটের আঘাতে মো.ইকবাল (২৫) নামে একজন মারা গেছেন। উত্তরধুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ স ম শাহরিয়ার চৌধুরী জানান, মো. ইকবাল ছাড়াও ‘রোয়ানু’র আঘাতে শিশুসহ তিনজন গুরুতর আহত হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়নের উত্তর ধুরুং, আলী আকবর ডেইল, কয়ারবিল গ্রামে বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের ১২ কিলোমিটার বাঁধ তলিয়ে গেছে।

ভোলা: রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ো হাওয়ায় ভোলার তজুমদ্দিনে গাছচাপা পড়ে দুজন, লালমোহন ও দৌলতখানে দুজনসহ মোট ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ঝড়ে দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন এবং তিন শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট বিধ্বস্ত হয়েছে। মৃতরা হলেন— তজুমদ্দিন উপজেলার শশীগঞ্জ গ্রামের মফিজের ছেলে মো. আকরাম (১২), একই এলাকার মো. নয়নের স্ত্রী রেখা বেগম (২৫), লালমোহন উপজেলার বাংলাবাজার এলাকার মো. ইউনুস (৫৫) ও দৌলতখানের রানু বিবি (৫৫)। তজুমদ্দিন উপজেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (পিআরও) মো. রাশেদ খান জানান, শুক্রবার রাত ৩টার দিকে হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া আঘাত হানে। এতে গাছচাপা পড়ে শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এক নারী এবং সকাল সাড়ে ৬টার দিকে এক শিশুর মৃত্যু হয়। এছাড়া লালমোহন উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায় ঝড় আতঙ্কে মো. ইউনুস নামে একজন মারা গেছেন।

পটুয়াখালী: জেলার দশমিনায় পটুয়াখালীর দশমিনার চরলক্ষ্মীপুর এলাকার নায়া বিবি (৫৫) নামে একজন মারা গেছেন। দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন জানান, রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে ঘরচাপা পড়ে একজন মারা গেছেন।

লক্ষ্মীপুর: ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র তাণ্ডবে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় গাছ ভেঙে পড়ে আনারউল্লাহ নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, শনিবার দুপুরে উপজেলার তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের শহর কসবা গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আমান উল্লাহ একই গ্রামের বশির উল্লাহ ছেলে। একই সময় জেলার পৃথক স্থানে অন্তত তিনজন আহত হয়েছে।

সানবিডি/ঢাকা/জেএই্চ/এসএস